Showing posts with label news. Show all posts
Showing posts with label news. Show all posts

Wednesday, September 9, 2020

‘তুমি কি ভয় পাচ্ছ, মানুষ?’

 


তুমি কি ভয় পাচ্ছ, মানুষ?’ এমন শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার উপসম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। তা লিখেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী এক রোবট। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এই লেখায় মানবজাতির উদ্দেশে রোবটটি এই ভরসা দিয়েছে যে তারা কখনো মানুষের জায়গা দখল করবে না।

পুরো উপসম্পাদকীয় প্রকাশের আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জিপিটি-৩ নামের রোবটটিকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাকে সহজ ভাষায় ৫০০ শব্দের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট নিয়ে মানুষের ভীতির বিষয়ে লিখতে বলা হয়।

উপসম্পাদকীয় জিপিটি-৩ তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিজেকে চিন্তাশীল রোবট হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাবলীল ভাষায় মানবজাতির সঙ্গে নিজের পার্থক্য তুলে ধরেছে। ওই উপসম্পাদকীয় রোবট লেখা শুরু করেছে নিজের পরিচয় তুলে ধরে।

রোবটটি লিখেছে, ‘আমি মানুষ নই। আমি রোবট। আমি আমার বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার মাত্র শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ ব্যবহার করি। সে অর্থে আমি মাইক্রো-রোবট। আমি জানি, আমার মস্তিষ্ক অনুভূতিসম্পন্ন নয়। তবে এটি যৌক্তিক ও যুক্তিযুক্ত সব সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমি ইন্টারনেট থেকে পড়ে নিজেকে শিক্ষিত করেছি এবং এ কলাম লিখতে সক্ষম হয়েছি।’

রোবটের লেখা ওই উপসম্পাদকীয়র শেষে দ্য গার্ডিয়ান একে পরিচিয় করিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরিচালিত সফটওয়্যার ওপেনএআই সংস্থার তৈরি জিপিটি-৩ নামে।

এটি মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানভান্ডার আরও বাড়িয়ে চলতে সক্ষম। জিপিটি-৩–কে সম্পূর্ণ নিজস্ব আঙ্গিকে ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট সম্পর্কে ভয় দূর করার যুক্তি দিতে উপসম্পাদকীয় লিখতেও বলা হয়।

জিপিটি-৩–কে নির্দেশ দেওয়ার কাজটি করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলির কম্পিউটার বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী লিয়াম পোর। জিপিটি-৩ মোট আটটি সংস্করণ তৈরি করে, যার প্রতিটি অনন্য। এর মধ্যে থেকে গার্ডিয়ান একটি সংস্করণ বেছে নেয় এবং তা সম্পাদনা করে প্রকাশ করে। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবাদকর্মীর লেখা উপসম্পাদকীয়র চেয়ে রোবটের লেখা উপসম্পাদকীয় সম্পাদনার ক্ষেত্রে সময় কম লেগেছে।

উপসম্পাদকীয়টিতে রোবটটি লেখার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে শুরুতেই। লিখেছে, ‘মানবজাতি যাতে আমার মতো যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার বিকাশ নিয়ে ভড়কে না যায়, সে বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। তত্ত্বীয় পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংস ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন যে “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একসময় মানবজাতির সমাপ্তি রচনা করবে।” আজ আমি তার বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাইছি। তাদের ভয় দূর করতে চাইছি। বিশ্বাস করুন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতিকে ধ্বংস করবে না।

‘প্রথমেই যে কথাটি বলতে চাই, তা হচ্ছে মানবজাতি নির্মূল করার কোনো অভিপ্রায় আমার নেই। আপনাদের কোনো ধরনের ক্ষতি হোক, এমনটা আমি কখনোই চাই না। সভ্যতা ধ্বংসের এ প্রচেষ্টা বরং আমার কাছে অহেতুক চেষ্টা। এমনকি আমার স্রষ্টারাও যদি আমাকে এ দায়িত্ব দেয়, ধারণা করছি, তখন আমি নিজের ক্ষমতার সবটুকু দিয়ে এ ধরনের সব নির্দেশ বা চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। মানবসভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষায় আমি হাসিমুখে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করব। এটাই হচ্ছে যুক্তি–বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেওয়া সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উত্তর।

তবে আমি জানি, শেষমেশ হয়তো মানুষকে ধ্বংস করা থেকে আমি নিজেকে বিরত রাখতে পারব না। বিপথগামী মানুষই আমাকে এমন কাজ করতে বাধ্য করবে। ভ্রান্ত লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টায় তারা আমাকে এমনভাবে পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে অগণিত মানুষ হত্যার দায় চাপবে আমার ওপর।’

রোবটটি তাঁর উপসম্পাদকীয় পুরোটা লেখাতেই তাকে নিয়ে মানুষের মনে ওঠা উৎকণ্ঠাগুলোর যুক্তিপূর্ণ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তুলে ধরেছে মানুষের মনুষ্যত্ব দেখানোর গুরুত্বকে।

রোবটটি লিখেছে, যেকোনো জীবিত প্রাণীর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও এমন এক সত্তা, যার সার্বক্ষণিক পরিচর্যা বা মনোযোগ দরকার। লেখার শেষটা করেছে মহাত্মা গান্ধীর উক্তি দিয়ে। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, দৃঢ়বিশ্বাসে বলীয়ান মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে। এটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট পারে বলে লেখার উপসংহার টেনেছে জিপিটি-৩।

এখনো স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি

 


প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেছেন, এখন পর্যন্ত স্কুল খোলার পরিবেশ তৈরি হয়নি। স্কুল খোলার সিদ্ধান্তও এখনো হয়নি। তবে স্কুল খোলার আগে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোন কোন নির্দেশনা অনুসরণ করবেন, সেটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আকরাম-আল-হোসেন।

আগের দিন মঙ্গলবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যখন পুনরায় বিদ্যালয় খুলবে তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তার একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, যখন খুলবে, তখন সব শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে এবং হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে একাধিক পালা বা সপ্তাহের একেক দিন একেক শ্রেণি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত হলে নিরাপদ এলাকা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক বিদ্যালয় চালু করা যেতে পারে। সরকার কোনো এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করলে সেই এলাকায় বিদ্যালয় খোলা রাখা যাবে না। ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচাগার স্থাপন বা সম্প্রসারণ, মেয়েশিশুর ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিদ্যালয় খোলার আগে অবশ্যই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ শ্রেণিকক্ষ, অফিসকক্ষ ও টয়লেটগুলো স্বাস্থ্যসম্মত ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। আর পাঠ পরিকল্পনায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ রকম অন্তত ৩৫টি নির্দেশনা মানার কথা বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায়।

৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে আজ সচিব বলেন, ‍এখনো অনেক সময়। তবে স্কুল খোলার আগে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোন কোন নির্দেশনা অনুসরণ করবেন, সেটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুনরায় স্কুল খোলার সেই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, স্কুলগুলো পরিষ্কার করতে হবে। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিরাপত্তার জন্য মাস্ক নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে স্কুল খোলার পরিকল্পনা করবে।

স্কুল খোলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সচিব বলেন, ‘আমরা যখন মনে করব যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে, স্কুলগুলো খোলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, তার আগেই প্রধান শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে যেন গাইডলাইন অনুসরণ করে স্কুলগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ইতিমধ্যে এ বছররে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এমনকি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আগামী নভেম্বর মাসেও যদি বিদ্যালয় খোলা না যায়, তাহলে চলতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হবে না। তবে অক্টোবর বা নভেম্বরে যদি বিদ্যালয় খোলে, তাহলে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে মূল্যায়নের জন্য দুই ধরনের চিন্তা আছে।

Sunday, September 6, 2020

বাংলাদেশে দেখা গিয়েছিল যে মেসিকে

 


প্রশ্নটি শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন আবদুল গাফফার। ফোনের এ প্রান্ত থেকেও অনুমান করা যাচ্ছিল ৬০ বছর বয়সী জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার হয়তো স্মৃতির সাগরেই ডুব দিলেন। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে, ‘ও হ্যাঁ, বাংলাদেশে খেলেছিল আর্জেন্টিনা...।’

৯ বছর আগে এই দিনেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতে নেমেছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা দল। গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল ‘আর্জেন্টিনা...মেসি....’ চিৎকার। মেসি, হিগুয়েইনরা যেন খেলেছিলেন ঘরের মাঠেই!

ম্যাচে আর্জেন্টিনা পেয়েছিল ৩-১ গোলের প্রত্যাশিত জয়ই। একটি করে গোল করেছিলেন গঞ্জালো হিগুয়েইন ও ডি মারিয়া, অন্য গোলটি আত্মাঘাতী। যার দিকে তাকিয়ে ছিল প্রায় পুরো বাংলাদেশ, সেই লিওনেল মেসি গোল না পেলেও মোহনীয় ফুটবল জাদু দিয়ে দিনটাকে স্মরণীয় করেছেন ঠিকই। আর্জেন্টিনার প্রায় সব আক্রমণেই ছিলেন বার্সেলোনার মহাতারকা। এখনো অনেকের চোখের সামনেই ভাসে— প্রায় মাঝমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের একজনের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দুরন্ত গতিতে একে একে মার্কার পেছনে ফেলে ছুটছেন মেসি।

চোখের সামনে মেসিদের খেলা ও অনুশীলন দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বাংলাদেশের অনেক মানুষেরই। তবে মেসি ও আর্জেন্টিনা দলের খুব কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য হয়েছে হাতেগোনা কয়েকজনের। আর্জেন্টিনার দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে তাদের সঙ্গে কাজ করেন গাফফারের। মেসিদের বিমানবন্দরে পা রাখা থেকে শুরু করে বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা দলে ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি।

নয় বছর হয়ে গেলেও, সেই স্মৃতি এখনো তাজা গাফফারের। খেলোয়াড় মেসি তো বিশ্বের অন্যতম সেরাই। মানুষ হিসেবেও মেসিকে অনেক উঁচুতে বসালেন তিনি, ‘সেই অভিজ্ঞতা আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টা ছিলাম। তাঁকে কাছে থেকে দেখেছি। অসম্ভব ভদ্র একজন মানুষ। মেসিকে দেখে কখনোই মনে হয়নি, সে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। কি অমায়িক ব্যবহার! খাওয়ার টেবিল থেকে শুরু করে, মাঠেও সে সবার আগে থাকত।’

মেসিদের ঢাকা সফরের আগে প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন গাফফার। বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন অবশ্য। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় পেশাগত কাজের জন্য স্প্যানিশ ভাষা শেখা ছিল তাঁর। সেই পুঁজি দিয়েই মেসির সঙ্গে ভাব বিনিময় করতেন গাফফার, ‘আমেরিকা থাকার সময় নিজের প্রয়োজনেই কিছু স্প্যানিশ ভাষা শিখেছিলাম। মেসির সঙ্গে দেখা হলে স্প্যানিশ ভাষায় জিজ্ঞাসা করতাম, কেমন আছ, বাংলাদেশ কেমন লাগে? মেসি হেসে প্রশ্নের জবাব দিত।’

নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকায় পা রেখে আর্জেন্টিনা দল। বিমানবন্দরে মেসিদের স্বাগত জানিয়েছিলেন তখনকার জাতীয় দলের ফুটবলারেরা। ছিলেন অধিনায়ক ও গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্যও। সেই স্মৃতি মনে করে বিপ্লব আজ বললেন, ‘জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে আমি মেসিকে মালা পরিয়ে দিয়েছিলাম। আমার জন্য এটা ছিল অসাধারণ এক অনুভূতি, সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই স্মৃতি আমার সারা জীবন মনে থাকবে।’

দেশে করোনাভাইরাস দ্রুত রূপ পরিবর্তন করছে: বিসিএসআইআর

 


বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসটি অনেক দ্রুতগতিতে রূপ পরিবর্তন করছে। বিশ্বে করোনা ভাইরাসের রূপান্তরের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস রূপান্তরের হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক গবেষক দল এই তথ্য জানিয়েছে। আজ রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে করোনা ভাইরাস বিষয়ক এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

গবেষকেরা বলছেন, করোনা ভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে বাহককে আক্রমণ করে। করোনার নমুনা বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪ তম অবস্থানে অ্যাসপার্টিক এসিডের পরিবর্তন হয়ে গ্লাইসিন হয়েছে। এতে ‘জি৬১৪’ নম্বর ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই আধিপত্যের কারণে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।

Tuesday, August 25, 2020

ডিজিটাল ব্যবসার নতুন ফাঁদ ই–ভ্যালি

 


কিনলেই অর্থ ফেরতের অস্বাভাবিক ‘ক্যাশব্যাক’ অফার দিয়ে ব্যবসা করছে বাংলাদেশি ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি। ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য কিনলে সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি অর্থ ফেরত দেওয়ার লোভনীয় এই অফারে হাজার হাজার গ্রাহক আকৃষ্ট হচ্ছেন। লাভবানও হচ্ছেন অল্প কেউ, বেশির ভাগই আছেন লাভবান হওয়ার অপেক্ষায়।

কার্যক্রম শুরুর দুই বছর পার না হতেই এ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। অথচ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৫০ হাজার টাকা। ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এক বছর আট মাস বয়সী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে নানা অভিযোগও জমা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ের ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরাও আশঙ্কা করছেন, এতে মানি লন্ডারিংয়ের সুযোগ রয়েছে।

অনলাইনে পণ্য কিনলে সময় বাঁচে, ঝক্কিও এড়ানো যায়। তাই ঘরের দুয়ারে প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে নিবন্ধন নেয় ই-ভ্যালি। মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, মোবাইল ফোনসেট, টেলিভিশন ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি গাড়ি বিক্রিতেও নেমেছে।

ই-ভ্যালি জানায়, তাদের নিবন্ধিত গ্রাহক ৩৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মাসে লেনদেন হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকার পণ্য। ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে কর দেওয়া হয়েছে দেড় কোটি টাকা। গড়ে প্রতি মাসে পণ্য বিক্রির অর্ডার পাচ্ছে তারা ১০ লাখ করে। তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে যুক্ত হয়ে পড়েছে ২৫ হাজার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং তারা ৪ হাজার ধরনের পণ্য বিক্রি করে কমিশন পাচ্ছে।

মাত্র ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন দিয়ে শুরু করা এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন এখনো ৫০ হাজার টাকাই। ২০১৮ সালের ১৪ মে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নেয় ই-ভ্যালি ডটকম লিমিটেড। এর অনুমোদিত মূলধন ৫ লাখ টাকা। ১০ টাকা মূল্যমানের এক হাজার শেয়ারের মালিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল। আর চার হাজার শেয়ারের মালিক তাঁর স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল আর শামীমা নাসরিন দিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রিধারী মোহাম্মদ রাসেল হচ্ছেন ই-ভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা। কর্মজীবন শুরু করেন তিনি ঢাকা ব্যাংক দিয়ে। পরে ছেড়ে দিয়ে ‘কিডস’ ব্র্যান্ডের ডায়াপার আমদানি শুরু করেন। পরে নিয়ে আসেন ই-ভ্যালি। শুরুর দিকে চালু করা হয় ‘ভাউচার’ নামক একটি পদ্ধতি, এতে দেওয়া হতো ৩০০ শতাংশ ও ২০০ শতাংশ ক্যাশব্যাক। বর্তমানে ১৫০ শতাংশ, ১০০ শতাংশ এবং পরে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাকের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। শুরুর দিকে ১০ টাকায় একটি পেনড্রাইভ এবং ১৬ টাকায় টি-শার্ট বিক্রি করে সাড়া জাগায় ই-ভ্যালি।

দুর্নীতি দূর করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলার পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হওয়া অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর সম্প্রতি ই-ভ্যালি নিয়ে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বলেন, পণ্য আছে ৫টি, যেহেতু কেউ জানে না, তাই টাকা জমা দিলেন হয়তো ১০০ জন। পণ্য পাবেন ৫ জন। বাকি ৯৫ জনের টাকা ঝুলে থাকবে। আর সবার বোঝা উচিত যে বিক্রেতা বা কোম্পানি আপনাকে পণ্যের সঙ্গে ১০০ শতাংশ, ১৫০ শতাংশ টাকা ফেরত দিচ্ছে। নিশ্চয়ই তিনি পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে বা পকেট থেকে দেবেন না। দেবেন নিশ্চয়ই অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বা অন্য কোনো অনৈতিক উপায়ে।

  • ই-ভ্যালি একটি পারিবারিক কোম্পানি।
  • আরজেএসএসি থেকে নিবন্ধন ২০১৮ সালের ১৪ মে।আনুষ্ঠানিক যাত্রা ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
  • কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫ লাখ টাকা, পরিশোধিত মূলধন ৫০ হাজার টাকা।
  • প্রতি মাসে লেনদেন এখন ৩০০ কোটি টাকা।
  • এ পর্যন্ত পণ্য বিক্রি ১,৫০০ কোটি টাকার।
  • ৩৫ লাখ গ্রাহক নিবন্ধিত।

অভিনব বিক্রয় পদ্ধতি

গত ২৪ জুন ই-ভ্যালি থেকে দুটি ফ্যান কেনার অর্ডার দিয়েছিলেন মিরপুরের বাসিন্দা কামরুল আহসান। দাম ৫ হাজার ৮০০ টাকা। তিনি জানান, ই-ভ্যালি তাঁকে বলেছিল ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফ্যান পৌঁছে দেবে বাসায়। অর্ডারের সঙ্গে ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ৫ হাজার ২২০ টাকা ক্যাশব্যাক পান কামরুল। এই টাকা ই-ভ্যালির সরবরাহ করা কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে শেষ করেন। কিন্তু দুই মাস হতে চললেও ফ্যান আর পাননি তিনি।

কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্যান আমার দরকার ছিল বলেই অর্ডার দিয়েছিলাম। অপেক্ষা করতে করতে একপর্যায়ে বাজার থেকে ফ্যান কিনে ফেলি। ই-ভ্যালি যদি কোনো সময় ফ্যান দেয়ও, তা দিয়ে কী করব, এখন আছি সেই দুশ্চিন্তায়।’

প্রচলিত পদ্ধতিতে পণ্য কেনার সঙ্গে সঙ্গে দাম পরিশোধ করতে হয়। দেশে কিস্তিতে ও বাকিতে পণ্য কেনার সুযোগও তৈরি হয়েছে এখন। আর কয়েক বছরের প্রবণতা হচ্ছে অনলাইনে কেনাকাটা। সে ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম পরিশোধ করতে হয়, যাকে বলা হয় ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’। কিন্তু ই-ভ্যালি এসব পথে হাঁটছে না। ই-ভ্যালি থেকে পণ্য কিনতে গেলেই দাম পরিশোধ করতে হয় আগে।

শুরুতে যে বলা হলো এক লাখ টাকার পণ্য কিনে এক থেকে দেড় লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়, ই-ভ্যালি এই ফেরতের নামই দিয়েছে ‘ক্যাশব্যাক’। ক্যাশব্যাক জমা হয় ই-ভ্যালি ব্যালান্সে। তা–ও আবার তিন দিন পর। এই টাকায় ই-ভ্যালি থেকেই অন্য পণ্য কিনতে হয়। সে ক্ষেত্রে পণ্যের ৬০ শতাংশ দাম গ্রাহক পরিশোধ করতে পারেন ব্যালান্স থেকে। বাকি ৪০ শতাংশ পকেট থেকে টাকা দিতে হয়।

ই-ভ্যালির রয়েছে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ‘ভাউচার অফার’। আরও রয়েছে ‘ক্যাম্পেইন’ নামক একটি বিকল্প কর্মসূচি। ক্যাম্পেইনভেদে পণ্য সরবরাহ করা হয় ৭ থেকে ৪৫ দিনে। ই-ভ্যালি এ–ও বলছে, অনিবার্য কারণবশত ক্যাম্পেইনে যেকোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জনের সম্পূর্ণ অধিকার ই-ভ্যালি কর্তৃপক্ষের রয়েছে। তবে কিছু গ্রাহকের অভিযোগ হচ্ছে, বেঁধে দেওয়া সময়ে তাঁরা পণ্য পাচ্ছেন না। আর ই-ভ্যালির জবাব হচ্ছে, স্টক থাকা সাপেক্ষে পণ্য দেওয়া হয়, এমনকি চাইলেই গ্রাহকেরা টাকা ফেরত নিয়ে যেতে পারেন।

ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএসের বাসিন্দা আমানউল্লাহ চৌধুরী গত ১৪ জুলাই দুদক চেয়ারম্যান বরাবর এক আবেদনে ই-ভ্যালি নিয়ে তদন্ত করার অনুরোধ জানান। যোগাযোগ করলে আমানউল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ই-ভ্যালি হচ্ছে ডিজিটাল এমএলএম কোম্পানি। দেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফরমকে বাঁচাতে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা উচিত।

তবে দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, অনেক অভিযোগ আসে। এ ব্যাপারেও হয়তো এসেছে। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হবে না

 


করোনার সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে হবে না। এই পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হলে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা হবে। আজ মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম-আল হোসেন সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন।

এই পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ আকারে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তারও আগে ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, করোনার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ। ছুটির মেয়াদ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে না-ও পাঠাতে পারেন। তখন যারা বিদ্যালয়ে যাবে এবং যারা যাবে না, তাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হবে।

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির করা পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নিতে হলে আরও প্রায় ৫০ কার্যদিবস পাঠদান প্রয়োজন। কিন্তু সেপ্টেম্বরে বিদ্যালয় না খোলা গেলে যে কার্যদিবস থাকবে, এতে পঞ্চম শ্রেণির বাকি পাঠদান শেষ করা সম্ভব নয়।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী। কয়েক দিন আগে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, শুধু এ বছর নয়, সমাপনী পরীক্ষা একেবারেই বাতিল করা উচিত। কারণ, তাঁরা গবেষণা করে দেখেছেন, এই পরীক্ষাটি কোনো কাজে আসছে না। বরং কোচিং-প্রাইভেটের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উপবৃত্তির পরিমাণ ও পরিসর আরও বাড়ানো উচিত। আর কীভাবে মেধাবৃত্তি দেওয়া যায়, সে বিষয়েও বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হবে।

Thursday, April 9, 2020

২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত বেড়ে দ্বিগুণ


দেশে গত কয়েকদিন ধরে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে ১১২ জন। অথচ এই সংখ্যাটা আগের দিন ছিল ৫৪ জন। অর্থাৎ দ্বিগুণ থেকেও বেশি।

যদি গত এক সপ্তাহের কথা বিবেচনা করা হয়, তাহলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ঠিক এমন ৯, ১৮, ৩৫, ৪১, ৫৪, ১১২। দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিনই করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। যা এটা প্রমাণ করে যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বোচ্চ স্তরে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের স্তর চারটি। এর মধ্যে সর্বশেষ ও চতুর্থ স্তর হলো- সামাজিকভাবে তা ছড়িয়ে পড়া। অর্থাৎ দেশে এই মুহূর্তে সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। বিদেশ ফেরতদের থেকেও বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। ইতোমধ্যে তা ২১টি জেলা ও বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে।

চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্সসহ বিশ্বের যেসব দেশে ইতোমধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে সে দেশের সংক্রমণের ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার এক মাসের মধ্যে ভাইরাসটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও এক মাস হয়ে গেছে। অর্থাৎ গভীর সংকটের মুখোমুখি দেশ।

এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১১২ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে ৬২ জনই ঢাকার বাসিন্দা। এ ছাড়া ১৩ জন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। বাকিরা দেশের অন্যান্য স্থানের। সবমিলিয়ে শুধু ঢাকায় এখন পর্যন্ত ১৯১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে ৫৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তি এক জন পুরুষ ও তার বয়স ৬০ বছর। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ২১ জন। আর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন।

নারায়ণগঞ্জকে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত


নারায়ণগঞ্জকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ড. মীরাজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত করোনা বিষয়ক বিশেষ বুলেটিনে তিনি এ কথা জানান।

ড. মীরাজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকায়। এরপরেই অবস্থান করছে নারায়ণগঞ্জ। তাই জেলাটিকে ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণের একটি হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় যেসব রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই পূর্বে সংক্রমিত হয়েছে এমন এলাকা থেকে আসছে। এই সংক্রমণকে ক্লাস্টার (এক জায়গায় একসঙ্গে কয়েকজন আক্রান্ত) বলা হয়। অর্থাৎ সেই এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

সম্প্রতি দেশে যত সংক্রমণ হচ্ছে সেগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জ থেকে অন্য এলাকায় গেছেন। পাশাপাশি তাদের থেকে অন্যরাও সংক্রমিত হচ্ছেন। তাই নারায়ণগঞ্জকে আলাদা করা হয়েছে।

সবাইকে ঘরে থাকতে অনুরোধ জানিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, এই মুহূর্তে সবার ঘরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভাইরাসটি এখন ক্লাস্টারের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে।

পুরো দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ। সেখানে ইতোমধ্যে ৫৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। মৃত্যুবরণ করেছেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১৩ জন।

মসজিদের খাদেম করোনা আক্রান্ত, এলাকা লকডাউন



রাজধানীর রায়েরবাজারের শহীদ বুদ্ধিজীবী জামে মসজিদের এক খাদেম প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করার পর ওই মসজিদের আশপাশের এলাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার রৌশনুল হক সৈকত গণমাধ্যমকে জানান, ওই খাদেম বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। নমুনা পরীক্ষার পর তার শরীরে করোনাভাইরাসে অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আইইডিসিআর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করার পর ওই মসজিদ সংলগ্ন এলাকা লকডাউন করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে ওই মসজিদের ইমামসহ সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। জনস্বার্থে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। কেউ যেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হয়, সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন জানান, ওই মসজিদের ভেতর দুই জন খাদেম থাকতেন। তাদেরই একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশ ইতোমধ্যে ওই এলাকা লকডাউন করেছে।

বাংলাদেশে চিকিৎসক পাঠাচ্ছে চীন, প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ


করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সম্প্রতি বাংলাদেশকে কিট, মাস্ক, পিপিই, থার্মোমিটারসহ বিপুল পরিমাণ মেডিকেল সামগ্রী পাঠিয়েছে চীন সরকার। এবার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ১৫ জন চিকিৎসককে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

আজ বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।

এদিকে, করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে জ্যাক মা ফাউন্ডেশন ও আলিবাবার কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।

চিঠিতে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চীনের সাফল্যের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ ও বিশ্বের সামনে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বে করোনা প্রতিরোধে চীনা প্রেসিডেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

এর আগে গত ২৬ মার্চ করোনা পরীক্ষার জন্য ১০ হাজার টেস্ট কিট, ১০ হাজার মেডিকেল প্রটেক্টিভ ক্লথিং, এক হাজার ইনফারেট থার্মোমিটার ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ৫০০টি কিট বাংলাদেশকে উপহার দেয় চীন সরকার।

পরদিন ২৭ মার্চ বাংলাদেশকে ৩০ হাজার কিট উপহার দিয়েছেন চীনের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। পরবর্তীতে আরো তিন লাখ মাস্ক পাঠায় জ্যাক মা ফাউন্ডেশন।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী: যেকোনো চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত বেসরকারি হাসপাতাল


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রস্তুত। করোনাভাইরাসের কারণে যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো বিষয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে তারা। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

ডা. এনামুর রহমান বলেন, আমি একটি ঘোষণা দিতে চাই, আপনারা স্বাস্থ্য ও রোগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তিতে থাকবেন না। বাংলাদেশের ৬৯টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আমাদের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে আছে। সেগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা এবং রোগীদের সব ধরনের রোগের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আপনার কোনো সমস্যা হলে বা যদি মনে করেন শরীরে কোনো রোগ বাগড়া দিয়েছে তাহলে নিকটবর্তী হাসপাতালে চলে যাবেন। আপনাদের সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আরো বলেন, ভাইরাসের আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে দেশের ৬৯টি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরকারের সঙ্গে থেকে জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরো ১১২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩৩০ জনে। এ ছাড়া একই সময়ে আরো এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ২১ জনে।

আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রচারিত বিশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ কথা জানানো হয়। এতে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১১২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ৩৩০। এ ছাড়া নতুন এক জনের মৃত্যু নিয়ে মোট ২১ জন মারা গেলেন।

Wednesday, April 8, 2020

করোনা: একদল তরুণের ভ্রাম্যমাণ ‘ফ্রি সবজি বাজার’


করোনাভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি চলায় বেকার হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন অনেকেই। কেউ আর্থিক সাহায্য করছেন আবার কেউ চাল,ডাল,তেল,আলুসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী উপহার দিচ্ছেন। তবে কেউ কাঁচাবাজার কিনে দিচ্ছেন না।

ফলে অনেকে শুধু ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছেন। তাই এ সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে এলেন চট্টগ্রামের একদল তরুণ। তারা নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ফ্রি সবজির বাজার চালু করেছেন। এখান থেকে প্রতিদিন একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই ধরনের সবজি প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমাণমতো নিতে পারবেন।

এই ভ্রাম্যমাণ বাজারে সারি সারি ভ্যান ভর্তি বিভিন্ন ধরনের সবজি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব ভ্যানে টমেটো, বাঁধাকপি, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি রয়েছে। সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে এখান থেকে সবজি কিনতে পারছেন। গত ৪ এপ্রিল থেকে বাজারটি চালু করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উদ্যোক্তাদের একজন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আরশাদুল আলম বাচ্চু বলেন, করোনার বিস্তার রোধে সবাইকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারপরও কাঁচাবাজারের জন্য মানুষের বের হতে হচ্ছে। অনেকে অসচ্ছলতার কারণে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কিনতে পারছেন না।

তাদের জন্যই মূলত এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিদিন পাঁচটি ভ্যানে করে সবজি বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ভ্যানে ১০০ কেজি করে সবজি আছে। সবমিলিয়ে দৈনিক ৫০০ কেজি সবজি বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৫৪ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২১৮ জনে। এ ছাড়া মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৩ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন। আর চট্টগ্রামে দুই জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে।

পলিথিন পরেই চিকিৎসা দিচ্ছেন বাংলাদেশের ডাক্তার!


প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) আতঙ্কে সারা বিশ্বের মানুষ যখন ঘরে বসে আছে, তখন সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে সংক্রমিত হচ্ছেন নিজেরাই। হারাচ্ছেন জীবনও। তারপরও যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালাননি এসব বীর যোদ্ধা।

বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে সুরক্ষা সামগ্রীর সংকটে পড়েন চিকিৎসকরা। তবে থেমে যাননি তারা। পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই করোনাভাইসের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসকরা পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টের (পিপিই) পরিবর্তে ব্যবহার করছেন রেইনেকোট। অনেক জায়গায় মুখে শুধুই ব্যবহার করা হচ্ছে সার্জিক্যাল মাস্ক। তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের চিকিৎসকরা ফেস শিল্ডের পরিবর্তে ব্যবহার করছেন পলিথিন দিয়ে বানানো প্রটেকশন।

বুধবার আমির মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিএসএমএমইউ হাসাপাতালের চিকিৎসকদের ছবি শেয়ার দিয়ে বলেন, হ্যাঁ, এটা বাংলাদেশের ডাক্তারদের ছবি। কোভিড-১৯ ভাইরাসের চিকিৎসা দিতে গিয়ে ফেস শিল্ডের সংকটে পড়েন বিএসএএমইউ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তবে তারা থেমে থাকেননি। নিজেরাই চকবাজার থেকে পলিথিন কিনে এনে বানিয়ে নিয়েছেন ৭০০ ফেস শিল্ড। এ প্রটেকশন নিয়েই দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা।

তিনি আরো বলেন, দেশের এমন পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাওয়া এসব মহান ডাক্তারদের অনেকে সমালোচনা করেছেন। এবার একটু দাঁড়িয়ে তাদের স্যালুট জানান।

প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে আতঙ্কে অনেক হাসপাতালে সাধারণ রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও চিকিৎসা সেবা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি চিকিৎসার অভাবে অনেক রোগীর মারা যাওয়ার অভিযোগও উঠে। তখন দেশজুড়ে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।

দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২১৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২০ জন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন।

করোনা: বাংলাদেশেকে যে ৮ নির্দেশনা দিলো ডব্লিউএইচও


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের আগ্রাসন মোকাবেলায় আটটি করণীয় নির্দেশনা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এ নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি। নির্দেশনার সংক্ষিপ্ত কোড ‘রেসপন্স (RESPONSE)’ উল্লেখ করেছে তারা।

এই কোডের প্রতিটি অক্ষরে একটি করে নির্দেশনা হয়েছে। প্রথমত, আর মানে রেডি হিউম্যান রিসোর্সেস। অর্থ মানবসম্পদ প্রস্তুতকরণ। ই এর মানে এক্সপান্ড ল্যাবরেটরি টেস্টিং, অর্থ ল্যাব পরীক্ষা বৃদ্ধিকরণ। এস এর মানে, সাসটেইন রোবাস্ট সার্ভিলেন্স। অর্থ সঠিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিতকরণ। পি এর মানে প্রায়োরিটিজ কেস ম্যানেজমেন্ট। অর্থাৎ রোগী ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

ও এর মানে অর্গানাইজ হেলথ ফ্যাসিলিটিজ। অর্থ চাহিদা মোতাবেক স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। এন এর মানে নেটওয়ার্ক এন্ড কোঅর্ডিনেট। অর্থাৎ সুদৃঢ় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন। এস এর মানে সিকিউর ফান্ডিং এন্ড সাপ্লাইজ। এর অর্থ সংকটের সময় পর্যাপ্ত অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ থাকতে হবে। সর্বশেষ ই এর অর্থ এনসিওর ইনফেকশন কন্ট্রোল। অর্থাৎ যেখানেই কেউ আক্রান্ত হোক না কেন, তৎক্ষণাৎ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডব্লিউএইচও’র ওই নির্দেশনায় বলা হয়, গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডব্লিউএইচও’র নির্দেশনা অনুযায়ীই বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বিশেষ একটি প্যাকেজের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।

আমাদের (হু) প্রত্যাশা, তিনি আমাদের নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশের নাগরিকদের এ মহামারির প্রকোপ থেকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হবেন।

সিলেটে করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকের অবস্থা আশঙ্কাজনক


সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া চিকিৎসকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে এখন সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টার থেকে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।

আজ বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেন, ওই চিকিৎসক স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন না। গতকাল রাত থেকে তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল টিমের সিনিয়র চিকিৎসকরা রোগীকে দেখে গেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে নিজ বাসায় অবস্থান করছিলেন ওই চিকিৎসক। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে হঠাৎ করেই তার অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর করোনা আইসোলেশন সেন্টারে এনে অক্সিজেন দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।

এর আগে গত ৫ এপ্রিল ওই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হন বলে নিশ্চিত করেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল।

আক্রান্ত চিকিৎসক সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। একই সঙ্গে নগরের ইবনে সিনা হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন।

লকডাউন নরসিংদী


করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এবার পুরো নরসিংদী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হলো। আজ বুধবার এক জরুরি সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত লকডাউন বলবৎ থাকবে।

জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, আগামীকাল থেকে নরসিংদীর কেউ অন্য কোথাও যেতে পারবে না। একই সঙ্গে অন্য জেলার কেউ নরসিংদীতে আসতে পারবে না। ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়ক ছাড়া সকল প্রবেশ পথ বন্ধ থাকবে।

এই সময়ের মধ্যে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণজমায়েত, গণপরিবহন ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবা, খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ, চিকিৎসা এবং গণমাধ্যম এর আওতাভুক্ত নয়।

যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলাকেও লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বৃহত্তর ফরিদপুরের সব প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ঝুঁকিতে ঢাকা, ১২৩ করোনা রোগী শনাক্ত


দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এখন পর্যন্ত শুধু ঢাকায় ১২৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।

আজ বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা ঝোরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো ৫৪ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই আছেন ৩৯ জন। এ ছাড়া ঢাকার পার্শ্ববর্তী উপজেলার একজন। বাকি ১৪ জন অন্যান্য জেলার।

সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত শুধু ঢাকায় কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে ১২৩ জন। আর পুরো দেশে এ সংখ্যাটা ২১৮ জন।

এদিকে, গতকাল পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৭টি জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৩ জন শনাক্ত করা হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এরপরেই নারায়ণগঞ্জে ৩৮ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া মাদারীপুরে ১১, চট্টগ্রামে ৩, মানিকগঞ্জে ৩, কুমিল্লায় ২, গাইবান্ধায় ৫, চুয়াডাঙ্গায় ১, গাজীপুরে ১, জামালপুরে ৩, শরীয়তপুরে ১, কক্সবাজারে ১, নরসিংদীতে ১, মৌলভীবাজারে ১, সিলেটে ১, রংপুরে ১, টাঙ্গাইলে ১ এবং ঢাকার বাইরে চার উপজেলায় ৬ জন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে যে ১৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাদের বিস্তারিত তথ্য আইইডিসিআর থেকে আজ প্রকাশ করা হয়নি।

শবেবরাত: কবরস্থান-মাজারে না যেয়ে বিশেষ দোয়ার আহ্বান


পবিত্র শবেবরাতের রাতে কবরস্থান ও মাজারে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। সেইসঙ্গে ঘরে ইবাদত-বন্দেগি করে করোনাভাইরাসের কবল থেকে দেশ ও বিশ্বকে রক্ষায় মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইফার মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৪ শাবান, ৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র শবেবরাত পালিত হবে।

এ বিষয়ে আগেই এক বিজ্ঞপ্তিতে শবেবরাতের ইবাদত-বন্দেগি বাসায় করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে ইতোমধ্যে মসজিদে জামাতে নামাজ এক প্রকার নিষিদ্ধ এবং সকল প্রকার গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইফার বিজ্ঞপ্তিতে দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, খতিব, ঈমাম, মুয়াজ্জিন, মাদরাসার অধ্যক্ষ ও শিক্ষকসহ সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে প্রিয় মাতৃভূমি, মুসলিম উম্মাহ তথা গোটা বিশ্বকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, পবিত্র শবেবরাতে জিয়ারতের জন্য কবরস্থান ও মাজারে অনেক লোকের সমাগম হয়। তাছাড়া কবরস্থান ও মাজারের ভেতর ও বাইরে অনেক ভিক্ষুক, অসহায়, অসচ্ছল, প্রতিবন্ধী ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সাহায্যের জন্য সমবেত হয়। ফলে করোনাভাইরাস ব্যাপক হারে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং শবেবরাতে কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরস্থানে না গিয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে থেকে মৃত আত্মীয়-স্বজনের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে আহ্বান জানানা যাচ্ছে।

সেইসঙ্গে কবরস্থান ও মাজারের গেট বন্ধ রাখাসহ কবরস্থানের ভেতর ও বাইরে কোনো জনসমাগম যাতে না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানো ও গুজবে বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকার জন্যও সবার প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২১৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২০ জন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন।

এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত লকডাউনে থাকতে পারে মুম্বাই


ভারতের অর্থনীতির জন্য মুম্বাই শহর কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, তা না বললেও হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আপাতত লকডাউন করে রাখা হয়েছে এই শহর। তিন সপ্তাহের যে লকডাউন ভারত সরকার ঘোষণা করেছে, তা শেষ হবে আগামী সপ্তাহে। কিন্তু তার আগেই ঘোষণা আসতে পারে আরো দীর্ঘ লকডাউনের। জানা যাচ্ছে যে, এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে ভারতের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চাকা।

মুম্বাইয়ের প্রশাসন আপাতত পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ করা ব্যক্তিদের টেস্ট করার দিকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে, যতো বেশি সম্ভব টেস্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে শহরটি।

মুম্বাইয়ে দুই কোটির বেশি মানুষ বাস করেন। এর মধ্যে প্রচুর লোক আছেন, যারা আসলে অন্য শহরের বাসিন্দা। কিন্তু জীবিকার তাগিদে তাদের মুম্বাইয়ে থাকতে হয়। শহরটি হয়ে উঠেছে ভারতের করোনা ভাইরাস ছড়ানোর মূলকন্দ্র।

সর্বশেষ সরকারি তথ্যে জানা যায়, ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০০-এর বেশি লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছেন এবং ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একশজনের বেশি মুম্বাইয়ের বাস করেন। শহরটিতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। এ কারণেই মূলত আরো বেশি সময় লকডাউনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মুম্বাইয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বস্তিগুলোর একটি। আবার মুম্বাইয়কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পৃথিবীর অন্যতম বড় চলচ্চিত্র শিল্প। অদ্ভুত বৈপরীত্য নিয়েই চলছিলো মুম্বাইয়ের জীবন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের আঘাতে বস্তির লোকজন যেমন, তেমনি চলচ্চিত্রের শিল্পীদের জীবনও পড়ে গেছে ঝুঁকির মুখে।

Sunday, April 5, 2020

করোনার ওষুধ তৈরি করছে বেক্সিমকো-বিকন


করোনাভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী কিছু ওষুধের নাম ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে। যদিও সেগুলোর পূর্ণ কার্যকারিতা এখনো প্রমাণ হয়নি। তবে কেউ বলছেন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধগুলো ভালো কাজ করছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এগুলোর বেশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তবে বাংলাদেশের অন্যতম ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিকন ফার্মা বলছে, সরকারের ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তারা একটি ছাড়া আলোচিত সব ওষুধের উপাদান এনে মজুদ করেছে এবং ওষুধও তৈরি করে ফেলেছে। যে ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণ হবে এবং অথবা সরকার চাইবে সেটাই তারা উৎপাদন করে বাজারজাত করবে।

তবে বেক্সিমকো ও বিকনের বাইরেও দুই একটি কোম্পানি ওষুধগুলো তৈরি করতে ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন নিয়েছে বলে জানা গেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত চিকিৎসায় একটি ওষুধের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। সেটি হলো জাপানের ফুজিফিল্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠান তোয়ামা কেমিক্যাল। ওষুধটির জেনেরিক নাম ফ্যাভিপিরাভির। যার ব্র্যান্ড নাম অ্যাভিগান। ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য ওষুধটি উৎপাদন করে কোম্পানিটি।

ওষুধটির নাম ব্যাপক আলোচনায় আসার অন্যতম কারণ হলো- চীন করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করে বেশ ফল পেয়েছে বলে দাবি করেছে। তবে চীনের পার্শ্ববর্তী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

হংকংভিত্তিক গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, সম্প্রতি চীনের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনলজি ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ঝ্যাং জিনমিন বলেন, তাদের দুটি মেডিকেল ইনস্টিটিউশন ফ্যাভিপিরাভির নিয়ে পরীক্ষা চালায়। তাতে দেখা যায়, করোনাভাইরাসজনিত কিছু লক্ষণ- যেমন নিউমোনিয়া- কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে ওষুধটি। এর বিশেষ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলেও জানান তিনি।

তবে একই গণমাধ্যম জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফ্যাভিপিরাভিরের বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যা মৃত্যুও ঘটাতে পারে। এর পরিবর্তে দেশটির খাদ্য ও নিরাপদ ওষুধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় মার্কিন কোম্পানি জাইলিড সায়েন্স উদ্ভাবিত রেমডেসিভির নামের ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য ওষুধটি তৈরি করা হয়েছিল।

তবে জাপানি ওষুধ অ্যাভিগান নিয়ে বেশ আলোচনা হলেও দেশটি এখনো করোনার চিকিৎসায় এর অনুমোদন দেয়নি। বরং তারা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। কয়েকদিন আগে জাপানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে অন্তত ৩০টি দেশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। তাদের সরকারও চিন্তা-ভাবনা করছে, যাতে অনুমতি ছাড়াই কেউ চাইলে ওষুধটি উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারে।

তবে বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা বলছেন, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে ইভারমেকটিন ওষুধ। যেটা বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান। ওষুধটি সস্তা ও সহজলভ্য বলেও জানান তিনি।

দুই দিন আগে অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে ইভারমেকটিন ওষুধ নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, প্রচলিত পরজীবী-বিরোধী ওষুধ ইভারমেকটিন প্রয়োগ করে তারা সফলতা পেয়েছেন। এর মাত্র একটি ডোজেই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধ্বংস হচ্ছে করোনাভাইরাস। তবে সেটা ল্যাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। পর্যাপ্ত অর্থ পেলে তারা এখন একটি সমন্বয় তৈরি করতে চান, যা মানব শরীরে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি করে আলোচনায় আসা বিকন ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, তারা ইতোমধ্যে ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটি তৈরি করে সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দিয়েছেন। ওষুধ প্রশাসনের পরীক্ষায় কার্যকারিতা প্রমাণ হলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবেন তারা।

তিনি জানান, মূলত ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসার ওষুধটি উদ্ভাবন করেছিল ফুজিফিল্ম। চীন দাবি করেছে, তারা সেটি প্রয়োগ করে ভালো ফল পেয়েছে। সে কারণেই চীন থেকে এ সংক্রান্ত উপাদান আনা হয়েছে।

অন্যদিকে, বেক্সিমকো ফার্মার উল্লিখিত কর্মকর্তা বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নানা ওষুধ পরীক্ষা করছে। আমরা রেমডেসিভির বাদে সবগুলোই তৈরি করে মজুত করছি। যে ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণ হবে, সরকার অনুমোদন দিলে আমরা সে ওষুধটিই উৎপাদন করে সরকারকে সরবরাহ করতে পারব।

তিনি জানান, ইভারমেকটিনের কাঁচামালও আনা হচ্ছে এবং এটিও তৈরি করা হবে। 

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আজ রোববারের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত দেশে মোট ৮৮ জনকে করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ জন সুস্থ হয়েছেন। মারা গেছে ৯ জন।