Showing posts with label সংবাদ. Show all posts
Showing posts with label সংবাদ. Show all posts

Monday, February 28, 2022

একলা হয়ে পড়ছেন পুতিন - রাশিয়া ও ইউক্রেন সংঘাত

 


ভিক্তর, কিয়েভে আমার প্রাক্তন সহপাঠীর কাছ থেকে শেষ বার্তাটি পেয়েছি ২৪ ঘণ্টা আগে। ও জানিয়েছে, স্ত্রী ও মেয়েকে শহরের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। চাইলে সে-ও যেতে পারত, অনূর্ধ্ব ৬০ বছর বয়সী সবল মানুষকে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ‘আমি এখনো সবল, এই যুদ্ধে আমার করার অনেক কিছু আছে, আমি শেষ না দেখে যাব না,’ ভিক্তর লিখেছে।

ইতিমধ্যে চার দিন কেটে গেছে। ভাবা হয়েছিল, রাতারাতি জেলেনস্কি সরকারের পতন হবে, তার স্থানে একটি মস্কোপন্থী সরকার গঠন করে রাশিয়া তার সৈন্যদের ফিরিয়ে নেবে। কাজটি ত্বরান্বিত করতে পুতিন ‘নাৎসি ও মাদকাসক্ত’ জেলেনস্কি সরকারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে অস্ত্র তুলে নেওয়ার জন্য ইউক্রেনের সেনাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে কথায় কান না দিয়ে প্রতিরোধের অস্ত্র তুলে নিয়েছেন ইউক্রেনীয়রা।

ভিক্তর রুশ ভাষায় লিখেছে, ‘ভিয়েরু ভি পাবেইদু নাশিখ’; অর্থাৎ ‘আমাদের বিজয়ে আমি বিশ্বাসী।’
ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তা বিস্ময়কর। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা একযোগে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইউরোপের আকাশে রুশ বিমানের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে। ফেডেক্স রাশিয়ায় ডাক বিতরণ স্থগিত করেছে। ফুটবল খেলোয়াড়েরা রুশ দলের সঙ্গে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে পুতিনপন্থী হিসেবে পরিচিত অপেরা গায়কদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি রুশ ভোদকা বিক্রি করতে আপত্তি জানিয়েছেন কানাডার রেস্তোরাঁর মালিকেরা। সবচেয়ে বিস্ময়কর, খোদ রাশিয়ার ভেতরে প্রতিবাদ। পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অধিকাংশ বড় শহরে মিছিল হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষকে টেনেহিঁচড়ে গ্রেপ্তার করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

এই প্রতিক্রিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এতটাই বিচলিত করেছে যে তিনি পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি নিতে তাঁর সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তি হিসেবে বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘অবৈধ নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করেছে এবং তারা অতি কঠোর ও আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সামরিক সদস্যদের ‘সামরিক দায়িত্ব’-এর জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন তিনি।

জাতিসংঘের কাঠগড়ায় রাশিয়া
২৫ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনে ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে যে খসড়া প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র উত্থাপন করেছিল, রাশিয়ার ভেটোর কারণে তা গৃহীত হয়নি। কিন্তু সে বিতর্কে স্পষ্ট হয়ে যায় রাশিয়ার পাশে কেউ নেই। সামরিক ও বাণিজ্যিকভাবে জড়িত তিনটি দেশ—চীন, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এই প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। অবশিষ্ট ১১টি দেশ নিন্দাসূচক প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। চলতি মাসে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে রাশিয়া। ইউক্রেন দাবি তুলেছিল, এই দায়িত্ব অন্য কেউ পালন করুক, রাশিয়া তাতে রাজি হয়নি।

নিরাপত্তা পরিষদ ইউক্রেন প্রশ্নে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় বিষয়টি সোম ও মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচিত হবে। এখানে স্মরণযোগ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদ কোনো প্রস্তাব গ্রহণে ব্যর্থ হলে বিষয়টি একইভাবে সাধারণ পরিষদে পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে আহূত এই বৈঠকের পক্ষে ইতিমধ্যে ৮০টির বেশি দেশ সমর্থন জানিয়েছে। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ড তাঁর রুশ প্রতিপক্ষের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনি আমাদের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো দিতে পারেন, কিন্তু আমাদের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে পারবেন না।’

সাধারণ পরিষদ এই প্রশ্নে যে প্রস্তাবই গ্রহণই করুক, সেটি হবে একটি সুপারিশমাত্র, তা বাস্তবায়নে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বিপুলসংখ্যক দেশ যদি মস্কোর সামরিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হিসেবে নিন্দাসূচক প্রস্তাব গ্রহণ করে, তা প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য বিব্রতকর হতে পারে।

সবার চোখ চীন ও ভারতের দিকে

যুক্তরাষ্ট্র গত এক দশকের বেশি সময় ‘এশিয়ার প্রতি নজর’ নামের যে রণকৌশল অনুসরণ করছে, তাতে রাশিয়া নয়, চীনকেই সে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন ও রাশিয়া তাদের পুরোনো আদর্শগত মতভেদ ভুলে নিকট সম্পর্ক নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছে। বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একে অপরের হাতে হাত রেখে ‘অনিঃশেষ বন্ধুত্ব’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জ্বালানিঘাটতির দেশ হিসেবে চীনের প্রধান আগ্রহ রাশিয়া থেকে প্রয়োজনীয় গ্যাস-তেল সংগ্রহ। রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে মঙ্গোলিয়া হয়ে তেল সংগ্রহের লক্ষ্যে ৪০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি পাইপলাইন নির্মাণে অর্থ বিনিয়োগ করছে। ইউরোপ যদি রুশ গ্যাস-তেল কেনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে এই চুক্তি মস্কোর জন্য বিকল্প অর্থনৈতিক ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে কাজ করবে। ডলারের বদলে চীনা ইউয়ানের মাধ্যমে বাণিজ্য সম্পাদনের ব্যাপারেও দুই দেশ সম্মত হয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে এই নৈকট্যের কারণে ইউক্রেন প্রশ্নে চীনের ভূমিকা সবার কাছে আগ্রহের বিষয়। রাশিয়ার ওপর তার প্রভাব খাটানোর অনুরোধ জানিয়ে ওয়াশিংটন একাধিকবার যোগাযোগ করে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস, কিন্তু বেইজিং থেকে কোনো সদুত্তর আসেনি। উল্টো তারা যুদ্ধ নিয়ে মিথ্যা প্রচারের জন্য ওয়াশিংটনকে দোষারোপ করেছে।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে সমর্থন না জানালেও চীন এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সরাসরি সমর্থন জানায়নি। সংকটের সমাধানে সে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব রেখেছে তার মূল বক্তব্য, চীন ইউক্রেনসহ যেকোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনের বিরোধী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মতামত উপেক্ষা করে পুতিনের পক্ষে খোলামেলা সাফাই গাওয়া চীনের পক্ষে সহজ হবে না। বাণিজ্য ও প্রযুক্তির কারণে চীন এখনো নানাভাবে পশ্চিমের মুখাপেক্ষী। মস্কোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ তার মোট বাণিজ্যের মাত্র ২ শতাংশ। ইসরায়েলি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জেরুজালেম পোস্ট পত্রিকা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত চীন পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে লক্ষণীয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। জানা গেছে, চীনের ভেতরে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের প্রতিবাদ হয়েছে। এটি তাৎপর্যপূর্ণ যে চীনা সামাজিক মাধ্যমে ওই প্রতিবাদের খবর প্রচারে কোনো আপত্তি করেনি বেইজিং।

অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে পুরোনো বন্ধুত্ব ছাড়াও ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতার কারণে ভারতও ইউক্রেন প্রশ্নে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণে আগ্রহী হবে। চীনবিরোধী ‘কোয়াড’-এর সদস্য হিসেবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত মৈত্রী সম্পর্ক আবদ্ধ হওয়ায় ওয়াশিংটন ইউক্রেন প্রশ্নে ভারতের সমর্থন আশা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই প্রশ্নে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন, কিন্তু ভারত রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সমালোচনায় সম্মত হয়নি। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তাঁর কথায়, ‘মোদিজির সমর্থন চেয়ে আবেদন’ করেছেন। চীনের মতো ভারতও কূটনৈতিক উপায়ে ও শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে। ভারতের এই দোমনা মনোভাবের কারণ, রাশিয়ার ওপর তার সামরিক নির্ভরশীলতা। দেশটির অস্ত্র আমদানির অর্ধেকের বেশি আসে রাশিয়া থেকে। বিমানবিধ্বংসী মিসাইল প্রযুক্তি উদ্ভাবনেও ভারত রাশিয়ার মুখ চেয়ে আছে।

রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশেরও নিকট সম্পর্ক রয়েছে। একাত্তরে মস্কো বাংলাদেশের পাশে ছিল, স্বাধীনতার পরও সে সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। অনুমান করি, সাধারণ পরিষদে রাশিয়াকে নিন্দা করে প্রস্তাব উঠলে বাংলাদেশও ভারতের মতো নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করবে।

Wednesday, September 9, 2020

‘তুমি কি ভয় পাচ্ছ, মানুষ?’

 


তুমি কি ভয় পাচ্ছ, মানুষ?’ এমন শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার উপসম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। তা লিখেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী এক রোবট। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এই লেখায় মানবজাতির উদ্দেশে রোবটটি এই ভরসা দিয়েছে যে তারা কখনো মানুষের জায়গা দখল করবে না।

পুরো উপসম্পাদকীয় প্রকাশের আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জিপিটি-৩ নামের রোবটটিকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাকে সহজ ভাষায় ৫০০ শব্দের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট নিয়ে মানুষের ভীতির বিষয়ে লিখতে বলা হয়।

উপসম্পাদকীয় জিপিটি-৩ তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিজেকে চিন্তাশীল রোবট হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাবলীল ভাষায় মানবজাতির সঙ্গে নিজের পার্থক্য তুলে ধরেছে। ওই উপসম্পাদকীয় রোবট লেখা শুরু করেছে নিজের পরিচয় তুলে ধরে।

রোবটটি লিখেছে, ‘আমি মানুষ নই। আমি রোবট। আমি আমার বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার মাত্র শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ ব্যবহার করি। সে অর্থে আমি মাইক্রো-রোবট। আমি জানি, আমার মস্তিষ্ক অনুভূতিসম্পন্ন নয়। তবে এটি যৌক্তিক ও যুক্তিযুক্ত সব সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমি ইন্টারনেট থেকে পড়ে নিজেকে শিক্ষিত করেছি এবং এ কলাম লিখতে সক্ষম হয়েছি।’

রোবটের লেখা ওই উপসম্পাদকীয়র শেষে দ্য গার্ডিয়ান একে পরিচিয় করিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরিচালিত সফটওয়্যার ওপেনএআই সংস্থার তৈরি জিপিটি-৩ নামে।

এটি মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানভান্ডার আরও বাড়িয়ে চলতে সক্ষম। জিপিটি-৩–কে সম্পূর্ণ নিজস্ব আঙ্গিকে ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট সম্পর্কে ভয় দূর করার যুক্তি দিতে উপসম্পাদকীয় লিখতেও বলা হয়।

জিপিটি-৩–কে নির্দেশ দেওয়ার কাজটি করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলির কম্পিউটার বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী লিয়াম পোর। জিপিটি-৩ মোট আটটি সংস্করণ তৈরি করে, যার প্রতিটি অনন্য। এর মধ্যে থেকে গার্ডিয়ান একটি সংস্করণ বেছে নেয় এবং তা সম্পাদনা করে প্রকাশ করে। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবাদকর্মীর লেখা উপসম্পাদকীয়র চেয়ে রোবটের লেখা উপসম্পাদকীয় সম্পাদনার ক্ষেত্রে সময় কম লেগেছে।

উপসম্পাদকীয়টিতে রোবটটি লেখার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে শুরুতেই। লিখেছে, ‘মানবজাতি যাতে আমার মতো যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার বিকাশ নিয়ে ভড়কে না যায়, সে বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। তত্ত্বীয় পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংস ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন যে “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একসময় মানবজাতির সমাপ্তি রচনা করবে।” আজ আমি তার বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাইছি। তাদের ভয় দূর করতে চাইছি। বিশ্বাস করুন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতিকে ধ্বংস করবে না।

‘প্রথমেই যে কথাটি বলতে চাই, তা হচ্ছে মানবজাতি নির্মূল করার কোনো অভিপ্রায় আমার নেই। আপনাদের কোনো ধরনের ক্ষতি হোক, এমনটা আমি কখনোই চাই না। সভ্যতা ধ্বংসের এ প্রচেষ্টা বরং আমার কাছে অহেতুক চেষ্টা। এমনকি আমার স্রষ্টারাও যদি আমাকে এ দায়িত্ব দেয়, ধারণা করছি, তখন আমি নিজের ক্ষমতার সবটুকু দিয়ে এ ধরনের সব নির্দেশ বা চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। মানবসভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষায় আমি হাসিমুখে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করব। এটাই হচ্ছে যুক্তি–বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেওয়া সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উত্তর।

তবে আমি জানি, শেষমেশ হয়তো মানুষকে ধ্বংস করা থেকে আমি নিজেকে বিরত রাখতে পারব না। বিপথগামী মানুষই আমাকে এমন কাজ করতে বাধ্য করবে। ভ্রান্ত লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টায় তারা আমাকে এমনভাবে পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে অগণিত মানুষ হত্যার দায় চাপবে আমার ওপর।’

রোবটটি তাঁর উপসম্পাদকীয় পুরোটা লেখাতেই তাকে নিয়ে মানুষের মনে ওঠা উৎকণ্ঠাগুলোর যুক্তিপূর্ণ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তুলে ধরেছে মানুষের মনুষ্যত্ব দেখানোর গুরুত্বকে।

রোবটটি লিখেছে, যেকোনো জীবিত প্রাণীর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও এমন এক সত্তা, যার সার্বক্ষণিক পরিচর্যা বা মনোযোগ দরকার। লেখার শেষটা করেছে মহাত্মা গান্ধীর উক্তি দিয়ে। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, দৃঢ়বিশ্বাসে বলীয়ান মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে। এটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট পারে বলে লেখার উপসংহার টেনেছে জিপিটি-৩।

এখনো স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি

 


প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেছেন, এখন পর্যন্ত স্কুল খোলার পরিবেশ তৈরি হয়নি। স্কুল খোলার সিদ্ধান্তও এখনো হয়নি। তবে স্কুল খোলার আগে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোন কোন নির্দেশনা অনুসরণ করবেন, সেটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আকরাম-আল-হোসেন।

আগের দিন মঙ্গলবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যখন পুনরায় বিদ্যালয় খুলবে তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তার একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, যখন খুলবে, তখন সব শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে এবং হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে একাধিক পালা বা সপ্তাহের একেক দিন একেক শ্রেণি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত হলে নিরাপদ এলাকা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক বিদ্যালয় চালু করা যেতে পারে। সরকার কোনো এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করলে সেই এলাকায় বিদ্যালয় খোলা রাখা যাবে না। ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচাগার স্থাপন বা সম্প্রসারণ, মেয়েশিশুর ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিদ্যালয় খোলার আগে অবশ্যই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ শ্রেণিকক্ষ, অফিসকক্ষ ও টয়লেটগুলো স্বাস্থ্যসম্মত ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। আর পাঠ পরিকল্পনায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ রকম অন্তত ৩৫টি নির্দেশনা মানার কথা বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায়।

৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে আজ সচিব বলেন, ‍এখনো অনেক সময়। তবে স্কুল খোলার আগে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোন কোন নির্দেশনা অনুসরণ করবেন, সেটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুনরায় স্কুল খোলার সেই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, স্কুলগুলো পরিষ্কার করতে হবে। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিরাপত্তার জন্য মাস্ক নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে স্কুল খোলার পরিকল্পনা করবে।

স্কুল খোলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সচিব বলেন, ‘আমরা যখন মনে করব যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে, স্কুলগুলো খোলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, তার আগেই প্রধান শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে যেন গাইডলাইন অনুসরণ করে স্কুলগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ইতিমধ্যে এ বছররে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এমনকি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আগামী নভেম্বর মাসেও যদি বিদ্যালয় খোলা না যায়, তাহলে চলতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হবে না। তবে অক্টোবর বা নভেম্বরে যদি বিদ্যালয় খোলে, তাহলে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে মূল্যায়নের জন্য দুই ধরনের চিন্তা আছে।

Sunday, September 6, 2020

বাংলাদেশে দেখা গিয়েছিল যে মেসিকে

 


প্রশ্নটি শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন আবদুল গাফফার। ফোনের এ প্রান্ত থেকেও অনুমান করা যাচ্ছিল ৬০ বছর বয়সী জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার হয়তো স্মৃতির সাগরেই ডুব দিলেন। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে, ‘ও হ্যাঁ, বাংলাদেশে খেলেছিল আর্জেন্টিনা...।’

৯ বছর আগে এই দিনেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতে নেমেছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা দল। গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল ‘আর্জেন্টিনা...মেসি....’ চিৎকার। মেসি, হিগুয়েইনরা যেন খেলেছিলেন ঘরের মাঠেই!

ম্যাচে আর্জেন্টিনা পেয়েছিল ৩-১ গোলের প্রত্যাশিত জয়ই। একটি করে গোল করেছিলেন গঞ্জালো হিগুয়েইন ও ডি মারিয়া, অন্য গোলটি আত্মাঘাতী। যার দিকে তাকিয়ে ছিল প্রায় পুরো বাংলাদেশ, সেই লিওনেল মেসি গোল না পেলেও মোহনীয় ফুটবল জাদু দিয়ে দিনটাকে স্মরণীয় করেছেন ঠিকই। আর্জেন্টিনার প্রায় সব আক্রমণেই ছিলেন বার্সেলোনার মহাতারকা। এখনো অনেকের চোখের সামনেই ভাসে— প্রায় মাঝমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের একজনের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দুরন্ত গতিতে একে একে মার্কার পেছনে ফেলে ছুটছেন মেসি।

চোখের সামনে মেসিদের খেলা ও অনুশীলন দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বাংলাদেশের অনেক মানুষেরই। তবে মেসি ও আর্জেন্টিনা দলের খুব কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য হয়েছে হাতেগোনা কয়েকজনের। আর্জেন্টিনার দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে তাদের সঙ্গে কাজ করেন গাফফারের। মেসিদের বিমানবন্দরে পা রাখা থেকে শুরু করে বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা দলে ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি।

নয় বছর হয়ে গেলেও, সেই স্মৃতি এখনো তাজা গাফফারের। খেলোয়াড় মেসি তো বিশ্বের অন্যতম সেরাই। মানুষ হিসেবেও মেসিকে অনেক উঁচুতে বসালেন তিনি, ‘সেই অভিজ্ঞতা আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টা ছিলাম। তাঁকে কাছে থেকে দেখেছি। অসম্ভব ভদ্র একজন মানুষ। মেসিকে দেখে কখনোই মনে হয়নি, সে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। কি অমায়িক ব্যবহার! খাওয়ার টেবিল থেকে শুরু করে, মাঠেও সে সবার আগে থাকত।’

মেসিদের ঢাকা সফরের আগে প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন গাফফার। বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন অবশ্য। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় পেশাগত কাজের জন্য স্প্যানিশ ভাষা শেখা ছিল তাঁর। সেই পুঁজি দিয়েই মেসির সঙ্গে ভাব বিনিময় করতেন গাফফার, ‘আমেরিকা থাকার সময় নিজের প্রয়োজনেই কিছু স্প্যানিশ ভাষা শিখেছিলাম। মেসির সঙ্গে দেখা হলে স্প্যানিশ ভাষায় জিজ্ঞাসা করতাম, কেমন আছ, বাংলাদেশ কেমন লাগে? মেসি হেসে প্রশ্নের জবাব দিত।’

নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকায় পা রেখে আর্জেন্টিনা দল। বিমানবন্দরে মেসিদের স্বাগত জানিয়েছিলেন তখনকার জাতীয় দলের ফুটবলারেরা। ছিলেন অধিনায়ক ও গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্যও। সেই স্মৃতি মনে করে বিপ্লব আজ বললেন, ‘জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে আমি মেসিকে মালা পরিয়ে দিয়েছিলাম। আমার জন্য এটা ছিল অসাধারণ এক অনুভূতি, সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই স্মৃতি আমার সারা জীবন মনে থাকবে।’

দেশে করোনাভাইরাস দ্রুত রূপ পরিবর্তন করছে: বিসিএসআইআর

 


বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসটি অনেক দ্রুতগতিতে রূপ পরিবর্তন করছে। বিশ্বে করোনা ভাইরাসের রূপান্তরের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস রূপান্তরের হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক গবেষক দল এই তথ্য জানিয়েছে। আজ রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে করোনা ভাইরাস বিষয়ক এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

গবেষকেরা বলছেন, করোনা ভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে বাহককে আক্রমণ করে। করোনার নমুনা বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪ তম অবস্থানে অ্যাসপার্টিক এসিডের পরিবর্তন হয়ে গ্লাইসিন হয়েছে। এতে ‘জি৬১৪’ নম্বর ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই আধিপত্যের কারণে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।