প্রশ্নটি শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন আবদুল গাফফার। ফোনের এ প্রান্ত থেকেও অনুমান করা যাচ্ছিল ৬০ বছর বয়সী জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার হয়তো স্মৃতির সাগরেই ডুব দিলেন। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে, ‘ও হ্যাঁ, বাংলাদেশে খেলেছিল আর্জেন্টিনা...।’
৯ বছর আগে এই দিনেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতে নেমেছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা দল। গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল ‘আর্জেন্টিনা...মেসি....’ চিৎকার। মেসি, হিগুয়েইনরা যেন খেলেছিলেন ঘরের মাঠেই!
ম্যাচে আর্জেন্টিনা পেয়েছিল ৩-১ গোলের প্রত্যাশিত জয়ই। একটি করে গোল করেছিলেন গঞ্জালো হিগুয়েইন ও ডি মারিয়া, অন্য গোলটি আত্মাঘাতী। যার দিকে তাকিয়ে ছিল প্রায় পুরো বাংলাদেশ, সেই লিওনেল মেসি গোল না পেলেও মোহনীয় ফুটবল জাদু দিয়ে দিনটাকে স্মরণীয় করেছেন ঠিকই। আর্জেন্টিনার প্রায় সব আক্রমণেই ছিলেন বার্সেলোনার মহাতারকা। এখনো অনেকের চোখের সামনেই ভাসে— প্রায় মাঝমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের একজনের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দুরন্ত গতিতে একে একে মার্কার পেছনে ফেলে ছুটছেন মেসি।
চোখের সামনে মেসিদের খেলা ও অনুশীলন দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বাংলাদেশের অনেক মানুষেরই। তবে মেসি ও আর্জেন্টিনা দলের খুব কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য হয়েছে হাতেগোনা কয়েকজনের। আর্জেন্টিনার দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে তাদের সঙ্গে কাজ করেন গাফফারের। মেসিদের বিমানবন্দরে পা রাখা থেকে শুরু করে বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা দলে ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি।
নয় বছর হয়ে গেলেও, সেই স্মৃতি এখনো তাজা গাফফারের। খেলোয়াড় মেসি তো বিশ্বের অন্যতম সেরাই। মানুষ হিসেবেও মেসিকে অনেক উঁচুতে বসালেন তিনি, ‘সেই অভিজ্ঞতা আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টা ছিলাম। তাঁকে কাছে থেকে দেখেছি। অসম্ভব ভদ্র একজন মানুষ। মেসিকে দেখে কখনোই মনে হয়নি, সে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। কি অমায়িক ব্যবহার! খাওয়ার টেবিল থেকে শুরু করে, মাঠেও সে সবার আগে থাকত।’
মেসিদের ঢাকা সফরের আগে প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন গাফফার। বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন অবশ্য। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় পেশাগত কাজের জন্য স্প্যানিশ ভাষা শেখা ছিল তাঁর। সেই পুঁজি দিয়েই মেসির সঙ্গে ভাব বিনিময় করতেন গাফফার, ‘আমেরিকা থাকার সময় নিজের প্রয়োজনেই কিছু স্প্যানিশ ভাষা শিখেছিলাম। মেসির সঙ্গে দেখা হলে স্প্যানিশ ভাষায় জিজ্ঞাসা করতাম, কেমন আছ, বাংলাদেশ কেমন লাগে? মেসি হেসে প্রশ্নের জবাব দিত।’
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকায় পা রেখে আর্জেন্টিনা দল। বিমানবন্দরে মেসিদের স্বাগত জানিয়েছিলেন তখনকার জাতীয় দলের ফুটবলারেরা। ছিলেন অধিনায়ক ও গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্যও। সেই স্মৃতি মনে করে বিপ্লব আজ বললেন, ‘জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে আমি মেসিকে মালা পরিয়ে দিয়েছিলাম। আমার জন্য এটা ছিল অসাধারণ এক অনুভূতি, সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই স্মৃতি আমার সারা জীবন মনে থাকবে।’
No comments:
Post a Comment