Showing posts with label বিভিন্ন খবর. Show all posts
Showing posts with label বিভিন্ন খবর. Show all posts

Friday, October 11, 2019

দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষার্থীরা, অবস্থান কর্মসূচি পঞ্চম দিনে


বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবিতে টানা পঞ্চম দিনের মতো অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার সকালে আবরার হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ১০ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। আন্দোলনকারীরা জানান, দাবি আদায়ে তারা অনড় থাকবেন। উপাচার্যের কথা আশ্বস্ত না হলে সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।

এ সময় আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী আবরার হত্যার ঘটনাকে কোনও ব্যক্তি বা দলের স্বার্থের এজেন্ডা হিসেবে ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান।

আন্দোলনের কারণে পাঁচদিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বুয়েটে।

শিক্ষার্থী আবরার হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে শুক্রবার দুপুর ২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত হয়ে জবাবদিহি করা ও দাবি মানার আহ্বান জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে এ আহ্বান জানিয়ে ওইদিন এই সময়ের মধ্যে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে না এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

শিক্ষার্থীদের ওই ঘোষণার বৃহস্পতিবার রাতেই উপাচার্যের ব্যক্তিগত সচিব কামরুল হাসান জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল ৫টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন উপাচার্য। তবে আন্দোলনকারীদের দাবি অনুসারে, সবার সঙ্গে নয়, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।

আবরার হত্যার বিচারসহ বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবির কথা আবারও তুলে ধরা হয়। শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- খুনিদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে আজীবন বহিষ্কার, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন, মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীন স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি, অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিসিয়াল নোটিশ প্রদান এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও জানান, আবরারের মতো নিরীহ একজন ছাত্র নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর ভিসি যথাসময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি। ৩৮ ঘণ্টা পর তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাজির হন। কিন্তু কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। তাই শুক্রবার দুপুর ২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে হাজির হয়ে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।

তারা জানান, আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগ-এর নামে এবং ভিন্নমত দমানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা প্রকাশে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার, নিরাপত্তার জন্য সব হলের উইংয়ের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা বসানো এবং হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে শেষেরটি এরই মধ্যে পূরণ হয়েছে। শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল খান গত বুধবারই পদত্যাগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে তারা ছাত্র রাজনীতি নয়, ক্যাম্পাসে কেবল 'সংগঠনভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি'র বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন বলে জানান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দাবির বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন উল্লেখ করে এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

এদিন সবশেষে বিকেল ৪টার দিকে দিনের কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার সকাল থেকে পুনরায় আন্দোলনে নামার কথাও বলেন তারা।

সূত্র: সমকাল 

Wednesday, October 9, 2019

বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা : রোমহর্ষক সোয়া ৬ ঘণ্টা



'তুই শিবির কর্মী। স্বীকার কর। নইলে তোর রক্ষা নাই। হলে আর কে কে শিবিরের সঙ্গে জড়িত তোকে বলতে হবে।' শিবির সন্দেহে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ওপর নৃশংস নির্যাতনের সময় এভাবেই তার স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছিল। শিবিরের সঙ্গে জড়িত নই- এটা বারবার বলতে থাকলে বাড়তে থাকে নির্যাতনের মাত্রাও। রোববার রাত ৮টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় আবরারের ওপর এভাবে নিষ্ঠুর নির্যাতন চলে। এরপর রাত সোয়া ২টা পর্যন্ত তার নিস্তেজ দেহ নিয়ে ছোটাছুটি করেন হত্যায় জড়িতরা। সব মিলিয়ে সোয়া ছয় ঘণ্টার সেই বিভীষিকা। আবরারকে পেটানোর সময় ছাত্রলীগের অন্তত তিন নেতা মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।

আবরার হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃতরা রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন। আবরারের ওপর নির্যাতনের কথাও তারা স্বীকার করেন। আবরার হত্যা মামলায় ১৯ আসামির ১০ জন বুয়েট ছাত্রলীগের পদধারী; বাকিরা কর্মী ও সমর্থক।

জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রলীগের নেতারা স্বীকার করেন, নির্যাতনের মুখে রাত পোহালেই হল ছেড়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আবরার। শেরেবাংলা হলের দুটি কক্ষে দুই দফায় তার ওপর চলে নির্মম নির্যাতন। এর আগে রাত ৮টায় হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে আবরারকে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্য মুনতাসিরুল আল জেমি ও এহেতাশামুল রাব্বি তানিম। ২০১১ ও ২০০৫ নম্বর কক্ষে চালানো হয় নির্যাতন। আবরারের নিস্তেজ দেহ কক্ষে ফেলে রেখে পলাশী মোড়ে কয়েকজন খেতেও যান। রাত ২টার কিছুক্ষণ পর তার মরদেহ নিচে নামিয়ে আনেন কয়েকজন।

মেধাবী ছাত্র আবরারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের করা চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে সমালোচনামূলক স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এজন্য তাকে ছাত্রশিবির হিসেবে সন্দেহ করা হয় এবং নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

ওই ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১১ নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়। গত সোমবার রাতে নিহত আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলে ওই রাতেই হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের গতকাল আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া গতকাল গ্রেফতার করা হয় আরও তিনজনকে। তারা হলেন- শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির ও আকাশ হোসেন। মনির ও আকাশ এজাহারভুক্ত আসামি। রাফাতকে সন্দেহভাজন হিসেবে ধরা হয়। আবরার হত্যা মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। এ নিয়ে এ হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হলো ১৩ জন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, আবরার হত্যার ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের অল্প সময়ের মধ্যে ধরা হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন সমকালকে বলেন, গ্রেফতারকৃতরা আবরারের ওপর হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

আবরারকে কক্ষ থেকে ডেকে আনেন জেমি ও তানিম :আবরার শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ কক্ষের আবাসিক ছাত্র। গতকাল তার কয়েকজন সহপাঠী জানিয়েছেন, রোববার রাত পৌনে ৮টার মধ্যে ১৭ ব্যাচের এমই বিভাগের ছাত্র মুনতাসির আল জেমি ও একই ব্যাচের সিই বিভাগের এহতেশামুল রাব্বি তানিম তার কক্ষে যান। ওই সময়ে তারা আবরারকে বলেন, বড় ভাই রাসেল, ফুয়াদ ও রবিন তাকে দোতলায় ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকেছেন। এক পর্যায়ে ওই দু'জন আবরারকে সঙ্গে করে নিয়ে যান বলে জানিয়েছেন আবরারের কক্ষের পাশের কয়েকজন আবাসিক ছাত্র।

ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, জেমি ও তানিম বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সদস্য। এরই মধ্যে তাদের সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হেেয়ছে। এ ছাড়া দু'জনই আবরার হত্যার এজাহারভুক্ত আসামি।

ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারাও প্রাথমিকভাবে জেনেছেন, জেমি ও তানিম নামের দুই শিক্ষার্থী আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নেন। এর মধ্যে জেমিকে গ্রেফতার করা গেলেও তানিম পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

শিবির কর্মীদের নাম বলতে না পারায় মারধর : তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে জানান, 'শিবির সন্দেহে' আবরারকে রাত পৌনে ৮টার দিকে সকাল ও অমিত সাহার কক্ষে ধরে আনা হয়। এরপর তার মোবাইল, ল্যাপটপ সবকিছু পরীক্ষা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আবরার শিবির কর্মী এটা স্বীকার করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এ ছাড়া হলে আর কে কে শিবির করে এটা জানতে চাওয়া হয়। এ সময় তাকে বেদম পেটানো হচ্ছিল। আবরার জানান, আমি শিবির করি না। এমনকি কোনো শিবির কর্মী তার চেনাজানা নেই বলেও জানান। আবরারের কথায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আরও ক্ষুব্ধ হন। দফায় দফায় রাত ১টা পর্যন্ত আরবারের ওপর চলতে থাকে অমানবিক নির্যাতন। এ সময় বারবার প্রাণে বাঁচার আকুতি জানান তিনি। তবে এতে হামলাকারীদের মন গলেনি।

জানা গেছে, প্রায়ই বুয়েটের কিছু কক্ষকে টর্চারসেল বানিয়ে সন্দেহভাজন শিবির কর্মীদের মারধর করা হয়। এরপর তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আবরারকেও মারধর করে পুলিশের কাছে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বেদম প্রহারে তার প্রাণই চলে যায়। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন মদ্যপ। ফলে তাদের স্বাভাবিক জ্ঞান ছিল না। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গ্রেফতার কয়েকজন এই কাজে জড়িত থাকায় অনুতপ্ত বলে জানান।

তদন্ত সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে থাকা তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, ঘটনার সময় অমিত সাহা ক্যাম্পাসে ছিলেন না। পূজা উপলক্ষে তিনি ক্যাম্পাস ছাড়েন। তবে ক্যাম্পাসে না থাকলেও যদি তদন্তে আবরার হত্যার সঙ্গে অমিতের কোনো সংশ্নিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে তাকেও আসামি করা হবে।

ঘটনার পর কেন জড়িতদের অধিকাংশই পালিয়ে যাননি- এমন প্রশ্নের জবাবে রিমান্ডে থাকা আসামিরা জানান, তাদের বিশ্বাস ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই তারা বেশি নিরাপদ।

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। গতকাল ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে হত্যায় সরাসরি জড়িতদের নাম উঠে এসেছে। ওই সূত্রগুলো বলছে, আগেই ২০১১ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন। জেমি এবং তানিম আবরারকে ওই কক্ষে নেওয়ার পর তারা তাদের জেরা করেন। ওই সময়ে কক্ষে ঢোকেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকারসহ কয়েকজন। তখন আবরারকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। এক পর্যায়ে 'সিনিয়র নেতারা' তাকে শিবির আখ্যা দেন। এরপরই স্টাম্প দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। একপর্যায়ে মারতে মারতে তাকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ তাকে আটকে রাখা হয়। এরপর আবার শুরু হয় নির্যাতন। আবরার চিৎকার করলে সহসভাপতি ফুয়াদ তাকে মুখ চেপে ধরেন। একপর্যায়ে আবরারকে হল ছেড়ে চলে যেতে বললে তিনি তাতে রাজি হয়েছিলেন।

ওই সূত্রটি জানায়, পুরো নির্যাতনে সক্রিয় অংশ নেন ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশররফ সকাল, উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুনতাসির আল জেমি এবং ছাত্রলীগ কর্মী ১৭তম ব্যাচের এমই বিভাগের সাদাত, একই ব্যাচ ও বিভাগের হোসেন মোহাম্মদ তোহা এবং ১৬তম ব্যাচের তানভীর আহম্মেদ। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন আরও কয়েকজন।

নির্যাতনে বড় ভূমিকা মো. অনিক সরকারের :ছাত্রলীগ সূত্র জানিয়েছে, মারধরের সময়ে বড় ভূমিকা ছিল মো. অনিক সরকারের। তিনি ঘটনার সময় মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। আবরারকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটান তিনি। তার সঙ্গে অন্যরা যোগ দেন। ওই ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে করা তদন্ত কমিটির প্রধান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ সমকালকে বলেন, এখন পর্যন্ত তারা ১১ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। তবে মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে যাদের নাম রয়েছে তাদের সম্পৃক্ততা পেলে সংগঠন থেকে অবশ্যই স্থায়ী বহিস্কার করা হবে।

আবরারের নিথর দেহ বের করেন যারা :আবরারকে মারধরের দৃশ্যপট সিসিটিভিতে ধরা না পড়লেও বুয়েট শিক্ষার্থীদের হাতে কয়েক মিনিটের একটি ফুটেজ ঘুরছে। তাতে দেখা যায়, আবরারের নিথর দেহ কক্ষ থেকে বের করছেন তিনজন। তাদের পেছনে হাঁটছেন আরও অন্তত পাঁচজন। ডিবি পুলিশ ওই ফুটেজ বিশ্নেষণ করে প্রায় সবাইকে শনাক্ত করেছে। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থীরাও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করেছেন। ডিবি ও শিক্ষার্থী সূত্র জানায়, আবরারকে চ্যাংদোলা করে বের করার সময় কালো গেঞ্জি পরা অবস্থায় ছিলেন মো. মোয়াজ। তিনি ১৭তম ব্যাচের সিএসই বিভাগের ছাত্র। সংগঠনে তার পদ না থাকলেও তিনি বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে। পাশে ছিলেন সদস্য মুনতাসির আল জেমি, আবরারের ঠিক পেছনে ছিলেন অপর সদস্য তানিম এবং এরপরই ঠিক পেছনে ছিলেন উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল। এর কিছুক্ষণ পরই পেছন পেছন বেরিয়ে আসেন ছাত্রলীগের সদস্য মুজাহিদুর রহমান, কর্মী ও ১৭তম ব্যাচের এমএমই বিভাগের মাজেদুল ইসলাম, ১৬ ব্যাচের এমই বিভাগের তানভীর আহম্মেদ, ১৭তম ব্যাচের এমই বিভাগের মো. মোর্শেদ এবং একই বিভাগ ও ব্যাচের হোসেন মোহাম্মদ তোহা।

অপর একটি ফুটেজে দেখা যায়, দোতলার একটি কক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন বেরিয়ে আসছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের মধ্যে সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। তবে রাসেল বা রবিনকে ফুটেজে দেখা যায়নি। তদন্ত সংশ্নিষ্ট ডিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বুয়েট ঘটনার পর অনেক ফুটেজ ঘুরছে ফেসবুকে। নানা ফুটেজ ছড়িয়ে এগুলো বুয়েটের ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। সবকিছুই যাচাই করা হচ্ছে।

এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে হলের ভেতরে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও যথাসময়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করায় হল প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ফোনালাপে সেই রাতের বিবরণ :বুয়েটের ঘটনায় একটি ফোনালাপের লিঙ্ক গতকাল দিনভর ছিল আলোচনায়। ফোনালাপটি ছিল ঘটনার পর ছাত্রলীগ গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাহিত্য সম্পাদক আসিফ তালুকদার এবং বুয়েট ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটুর। ওই ফোনালাপে শোনা যায়, বিটু ওই রাতের ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন। আসিফ তালুকদারকে বিটু জানাচ্ছিলেন, শিবির সন্দেহে রাত ৮টায় মারধরের শুরু হয়। এতে সকাল, মনির, তানভীর, জেমি, তামিম, সাদাত, রাফিদ, তোহা ও অনিকসহ অনেকে যোগ দেন। বিটুকে বলতে শোনা যায়, 'জেমি আর তানিম আবরারকে ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে আসে। তার সঙ্গে আমাদের ব্যাচের আরও কিছু ছেলেপেলে ওই রুমে আসে। আমি পরে বের হয়ে এসে মনিরকে বলি, কী হয়েছে। মনির আমাকে বলে, মারধর একটু বেশি হয়ে গেছে। সেই সময় মনির বলে, অনিক বেশি মেরেছে।'

আসামিদের পরিচয় :আবরারের বাবার দায়ের করা মামলায় ১৯ আসামির মধ্যে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলকে। তিনি ১৩ ব্যাচের সিই বিভাগের ছাত্র। এর পরের আসামিদের মধ্যে ১৪তম ব্যাচের সিই বিভাগের ছাত্র ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, ১৫তম ব্যাচের ছাত্র এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার, একই ব্যাচের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ও ১৬ ব্যাচের ইফতি মোশাররফ সকাল, সাহিত্য সম্পাদক ও একই ব্যাচের মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়া সম্পাদক ও ১৫ ব্যাচের মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ১৭তম ব্যাচের মাজেদুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সদস্য ও ১৬তম ব্যাচের মুজাহিদুর রহমান, একই ব্যাচের ছাত্র তানভীর আহম্মেদ, ১৭তম ব্যাচের হোসেন মোহাম্মদ তোহা, ১৬ ব্যাচের মো. জিসান, একই ব্যাচের মো. আকাশ, ১৭ ব্যাচের শামীম বিল্লাহ ও মো. সাদাত, ছাত্রলীগ সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম, ১৭ ব্যাচের মো. মোর্শেদ ও একই ব্যাচের মো. মোয়াজ এবং ছাত্রলীগ সদস্য ও ১৭ ব্যাচের ছাত্র মুনতাসির আল জেমি। মামলার সব আসামিই শেরেবাংলা হলের বিভিন্ন তলার আবাসিক ছাত্র। তাদের মধ্যে মাজেদুল, তানভীর, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, জিসান, আকাশ, শামীম, সাদাত, মোর্শেদ ও মোয়াজ ছাত্রলীগের কোনো পদে রয়েছেন কি-না তা জানা যায়নি। তবে শেরেবাংলা হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, সক্রিয় কর্মী হিসেবে তারা নিয়মিত ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে যান এবং সবাই সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের কর্মী।

সূত্র: সমকাল

Tuesday, October 8, 2019

১৪ অক্টোবরের ডিগ্রি পরীক্ষা স্থগিত



জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য ২০১৮ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষার আগামী ১৪ অক্টোবরের পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। এ পরীক্ষাটি আগামী ২১ অক্টোবর দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হবে। 

এ পরীক্ষার অন্যান্য সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকবে।

সোমবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও পরামর্শ দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

Monday, October 7, 2019

বুয়েটে শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার



বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হল থেকে আবরার ফাহাদ (২১) নামের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

বুয়েটের চিকিৎসক মাসুক এলাহী জানান, অন্য ছাত্রদের মাধ্যমে খবর পেয়ে শেরে বাংলা হলের প্রথমতলা ও দ্বিতীয়তলার মাঝামাঝি জায়গায় ফাহাদের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তার শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। 

তিনি জানান, রাত্রিকালীন ডিউটিতে ছিলেন। খবর পেয়ে শেরে বাংলা হলে গিয়ে ফাহাদকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে নিজে পরীক্ষা করে দেখেন, তিনি মারা গেছেন। পরে বুয়েট কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।

চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন জানান, ভোরে সংবাদ পেয়ে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের উত্তর ব্লকের ২য় তলার সিঁড়ি থেকে ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাতের কোনো এক সময় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখেছে কেউ। 

তিনি জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার মৃত্যুর বিষয়ে আরও ধারণা পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

সহপাঠীদের অভিযোগ, রোববার রাত আটটার দিকে শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে কয়েকজন আবরারকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত দুইটা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের ধারণা, ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে তাকে পিটানো হয়।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।


সূত্র: সমকাল 

ষষ্ঠ শ্রেণিতেও স্কুলে বেতন দিতে হবে না শিক্ষার্থীদের


আগামী বছর থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ালেখাও অবৈতনিক হচ্ছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির মতো ষষ্ঠ শ্রেণিতেও স্কুলে বেতন দিতে হবে না শিক্ষার্থীদের। ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর টিউশন ফি পরিশোধ করবে সরকার। এই ফি হবে সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা। আর সর্বোচ্চ কত টাকা মাসিক টিউশন ফি পরিশোধ করা হবে, তা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অবৈতনিক শিক্ষা চালুর কর্মপন্থা তৈরির জন্য এ বৈঠক করা হয়। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষক নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদও এতে অংশ নেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ৩৫ টাকা করে টিউশন ফি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরের বছর থেকে সপ্তম শ্রেণিতেও অবৈতনিক শিক্ষা চালু হবে। এভাবে ২০২২ সালে অষ্টম শ্রেণিতে এবং ২০২৬ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে অবৈতনিক শিক্ষা চালুর কাজ সম্পূর্ণ করা হবে।

সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন সমকালকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক স্তরের মতো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া অবৈতনিক করতে চান। পর্যায়ক্রমে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করতে চান প্রধানমন্ত্রী। এ লক্ষ্যে প্রথম ধাপ হিসেবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণির লেখাপড়া অবৈতনিক করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

একই সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষায় উপবৃত্তিপ্রাপ্তদের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

তবে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করলেও শুধু ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বেতন দিতে হয় না। কিন্তু বেসরকারি স্কুল এবং সরকারি মাধ্যমিকের যেখানে প্রথম শ্রেণি রয়েছে, সেখানেও শিক্ষার্থীদের বেতন দিতে হয়। এমনকি বেসরকারি অনেক স্কুলেই মাসিক বেতন এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রশ্ন উঠেছে, যদি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাও অবৈতনিক করা হয়, তাহলে তা শুধু সরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কি-না? শহরে ও গ্রামের স্কুলের টিউশন ফি একেক জায়গায় একেক রকম। সে ক্ষেত্রে কমন ফি নির্ধারণ হলে জটিলতা সৃষ্টি হবে বলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা মনে করছেন।


সূত্র: সসকাল