Sunday, March 3, 2019

অষ্টম শ্রেণী: গণিত: প্রথম অধ্যায়: প্যাটার্ন: লেকচার-০১


প্যাটার্ন: 

প্যাটার্ন অর্থ সুনির্দিষ্ট বিন্যাস বা স্তরে স্তরে সাজানো বা নির্দিষ্টভাবে সাজানো। প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়। বৈচিত্র্যের কারণেই প্রকৃতিকে আমাদের ভালো লাগে। প্রকৃতির এই বৈচিত্র্য আমরা গণনা, সংখ্যা এবং চিত্রের মাধ্যমে উপলব্ধি করি। সংখ্যা ও চিত্রের বিভিন্ন প্যাটার্ন আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। গাছের শাখা-প্রশাখায় পত্রবিন্যাস একটি প্যাটার্ন, স্থাপত্য নিদর্শন তাজমহলের গায়ে কারুকার্যময় নকশাও একটি প্যাটার্ন। আবার, ৫ এর গুণিতকগুলোর শেষে ০ বা ৫ থাকে। এটিও একটি প্যাটার্ন। সংখ্যা প্যাটার্ন দক্ষতা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের পোশাকে নানা রকম বাহারি নকশা থাকে, এটিও এক ধরনের প্যাটার্ন। এ অধ্যায়ে সাংখ্যিক ও জ্যামিতিক প্যাটার্ন বিষয়ে আমরা কিছুটা ধারণা পাবার চেষ্টা করব এবং অধ্যায় শেষে আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো শিখতে পারব-
  • প্যাটার্ন কী তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • রৈখিক প্যাটার্ন লিখতে ও বর্ণনা করতে পারব।
  • বিভিন্ন ধরনের জ্যামিতিক প্যাটার্ন লিখতে ও বর্ণনা করতে পারব।
  • আরোপিত শর্তনুযায়ী সহজ রৈখিক প্যাটার্ন লিখতে ও বর্ণনা করতে পারব।
  • রৈখিক প্যাটার্নকে চলকের মাধ্যমে বীজগণিতীয় রাশিমালায় প্রকাশ করতে পারব।
  • রৈখিক প্যাটার্নের নির্দিষ্টতম সংখ্যা বের করতে পারব।


ভিডিও লেকচার দেখুন: 



স্বাভাবিক সংখ্যার প্যাটার্ন:

মৌলিক সংখ্যা: আমরা জানি যে, ১-এর চেয়ে বড় যে সব সংখ্যার ১ এবং ঐ সংখ্যাটি ছাড়া অন্য কোনো গুণনীয়ক নেই, সেগুলো মৌলিক সংখ্যা। অর্থাৎ যে সংখ্যাটিকে ১ এবং ঐ সংখ্যাটি ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যায় না তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে। যেমন: ১, ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩ ইত্যাদি। ইরাটোস্থিনিস (Eratosthenes) ছাঁকনির সাহায্যে সহজেই মৌলিক সংখ্যা নির্ণয় করা যায়। ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত স্বাভাবিক সংখ্যাগুলো একটি চার্টে লিখি। এবার সবচেয়ে ছোট মৌলিক সংখ্যা ২ চিহ্নিত করি এবং এর গুণিতকগুলো কেটে দেই। এরপর ক্রমান্বয়ে ৩, ৫ এবং ৭ ইত্যাদি মৌলিক সংখ্যার গুণিতকগুলো কেটে দিই। তালিকায় যে সংখ্যাগুলো টিকে রইল সেগুলো মৌলিক সংখ্যা।

ইরাটোস্থিনিস (Eratosthenes) ছাঁকনি


ফিবোনাক্কি সংখ্যা: 

ফিবোনাক্কি সিরিজের প্রথম অঙ্ক দুটি হলো ০ এবং ১। পরবর্তী প্রতিটি সংখ্যা হবে পূর্ববর্তী দুটি সংখ্যার যোগফল।
০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ....... এই সিরিজ বা ধারাকে ফিবোনাক্কি সিরিজ বা ধারা বলে।

ইতালির বিখ্যাত সৌখিন গণিতবিদ লিওনার্দো ফিবোনাক্কি (১১৭০-১২৫০) ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ফিবোনাক্কি সংখ্যা আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারে এই সংখ্যার নামকরণ করা হয়। গণিতবিদ প্রকৃতির বিভিন্ন জিনিস যেমন, সূর্যমূখী ফুলের দলবিন্যাস, শামুকের স্পাইরাল আকৃতির খোলস ইত্যাদির সাথে এ সংখ্যার মিল খুঁজে পেয়েছেন।


সংখ্যা শ্রেণির নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ণয়:

১) প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর পরবর্তী দুইটি সংখ্যা নির্ণয় করা: ৩, ১০, ১৭, ২৪, ৩১, ....

সমাধান:
তালিকার সংখ্যাগুলো ৩, ১০, ১৭, ২৪, ৩১
এখানে লক্ষ্য করি, পাশাপাশি দুইটি সংখ্যার পার্থক্য ৭
অতএব, পরবর্তী দুইটি সংখ্যা হবে যথাক্রমে ৩১+৭=৩৮ ও ৩৮+৭=৪৫।

২) প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর পরবর্তী সংখ্যাটি নির্ণয় কর: ১, ৪, ৯, ১৬, ২৫, ....

সমাধান: 
প্রদত্ত সংখ্যাগুলো ১, ৪, ৯, ১৬, ২৫, ....
পাশাপাশি দুইটি সংখ্যার পার্থক্য: ৩, ৫, ৭, ৯
লক্ষ্য করি, প্রতিবার পার্থক্য ২ করে বাড়ছে। অতএব, পরবর্তী সংখ্যাটি হবে ২৫+(৯+২)= ২৫+১১=৩৬


৩) প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর পরবর্তী সংখ্যাটি নির্ণয় কর: ১, ৫, ৬, ১১, ১৭, ২৮, .....

সমাধান: 
তালিকার সংখ্যাগুলো ১, ৫, ৬, ১১, ১৭, ২৮
পাশাপাশি দুইটি সংখ্যার যোগফল: ৬, ১১, ১৭, ২৮, ....
প্রদত্ত সংখ্যাগুলো একটি প্যাটার্নে লেখা হয়েছে। পরপর দুইটি সংখ্যার যোগফল পরবর্তী সংখ্যাটির সমান। অতএব, পরবর্তী সংখ্যাটি হবে ১৭+২৮=৪৫।


৪) ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, .... সংখ্যাগুলোকে ফিবনাক্কি সংখ্যা বলা হয়। সংখ্যাগুলোতে কোনো প্যাটার্ন দেখতে পাও কি? পরবর্তী ১০টি ফিবোনাক্কি সংখ্যা বের কর।

সমাধান:  
এখানে লক্ষ্য করা যায়,
১ পাওয়া যায় এর পূর্ববর্তী ২টি সংখ্যা যোগ করে (০+১)
২ পাওয়া যায় এর পূর্ববর্তী ২টি সংখ্যা যোগ করে (১+১)
৩ পাওয়া যায় এর পূর্ববর্তী ২টি সংখ্যা যোগ করে (১+২)
৫ পাওয়া যায় এর পূর্ববর্তী ২টি সংখ্যা যোগ করে (২+৩)

সুতরাং পরবর্তী ১০টি ফিবোনাক্কি সংখ্যা হবে –
২১+৩৪=৫৫
৩৪+৫৫=৮৯
৫৫+৮৯=১৪৪
৮৯+১৪৪=২৩৩
১৪৪+২৩৩=৩৭৭
২৩৩+৩৭৭=৬১০
৩৭৭+৬১০=৯৮৭
৬১০+৯৮৭=১৫৯৭
৯৮৭+১৫৯৭=২৫৮৪
১৫৯৭+২৫৮৪=৪১৮১

অর্থাৎ সিরিজটি এখন হবে-
০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭, ৬১০, ৯৮৭, ১৫৯৭, ২৫৮৪, ৪১৮১


স্বাভাবিক ক্রমিক সংখ্যার যোগফল নির্ণয়:

১) ১ থেকে ১৫ পর্যন্ত ক্রমিক স্বাভাবিক সংখ্যাগুলোর যোগফল বের করে সূত্র প্রতিষ্ঠা কর। 

মনে করি, ১ থেকে ১৫ পর্যন্ত ক্রমিক স্বাভাবিক সংখ্যাগুলোর যোগফল ক। 

সুতরাং, ক = ১+২+৩+৪+৫+......+১৫ 

বিপরীতক্রমে ক=১৫+১৪+১৩+......+১ 



সুতরাং, ক+ক=(১+১৫)+(২+১৪)+......+(১৫+১) 



বা, ২ক = ১৬+১৬+.....+১৬ 



বা, ২ক = ১৬×১৫ [যেহেতু, পদসংখ্যা=১৫] 



বা, ২ক = (১+১৫)×১৫ 


বা ক = {(১+১৫)×১৫}/২ 

অর্থাৎ যোগফল = {(প্রথম পদ + শেষ পদ)×পদসংখ্যা}/২ 


২) প্রথম দশটি বিজোড় সংখ্যার যোগফল নির্ণয়: 

১+৩+৫+৭+.....+১৯ 

মনে করি, সংখ্যাগুলোর যোগফল ক। 

সুতরাং, ক = ১+৩+৫+৭+......+১৯ 

বিপরীতক্রমে ক=১৯+১৭+১৩+১১+......+১ 

সুতরাং, ক+ক=(১+১৯)+(৩+১৭)+......+(১৯+১) 

২ক = ২০+২০+.....+২০ 

২ক = ২০×১০ [যেহেতু, পদসংখ্যা=১০] 

২ক = ২০০ 

ক = ১০০ 

আমরা লক্ষ করি, 

১+৩=৪ একটি পূর্ণ বর্গসংখ্যা 

১+৩+৫=৯ একটি পূর্ণ বর্গসংখ্যা 

১+৩+৫+৭=১৬ একটি পূর্ণ বর্গসংখ্যা 

অর্থাৎ যত সংখ্যক বিজোড় সংখ্যার যোগফল তততম সংখ্যার বর্গের সমান। অর্থাৎ ২টি ক্রমিক বিজোড় সংখ্যার যোগফল ২ এর বর্গ, ৩টি ক্রমিক বিজোড় সংখ্যার যোগফল ৩ এর বর্গ। এভাবে ৫০টি ক্রমিক বিজোড় সংখ্যার যোগফল হবে ৫০ এর বর্গ। 


৩) যোগফল বের কর: ১+৪+৭+১০+১৩+১৬+১৯+২২+২৫+২৮+৩১ 

মনে করি, প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল = ক 

সুতরাং, ক= ১+৪+৭+১০+১৩+১৬+১৯+২২+২৫+২৮+৩১ 

আবার বিপরীতক্রমে ক = ৩১+২৮+২৫+২২+১৯+১৬+১৩+১০+৭+৪+১ 

সুতরাং, ক+ক = (১+৩১)+(৪+২৮)+......+(৩১+১) 

বা, ২ক = ৩২+৩২+........+৩২ 

বা, ২ক = ৩২×১১ [যেহেতু, পদসংখ্যা ১১] 

বা, ২ক = ৩৫২ 

ক = ১৭৬ 

সুতরাং, নির্ণেয় যোগফল = ১৭৬


সংখ্যাকে দুইটি বর্গের সমষ্টি রূপে প্রকাশ: 

কিছু সংখ্যা রয়েছে যেগুলোকে দুইটি বর্গের সমষ্টিরূপে প্রকাশ করা যায়। যেমন,
২ = ১+১
৫ = ১+২
৮ = ২+২
১০ = ১+৩
১৩ = ২+৩ ইত্যাদি।

এভাবে ১ থেকে ১০০-এর মধ্যে ৩৪টি সংখ্যাকে দুইটি বর্গের যোগফল হিসেবে প্রকাশ করা যায়।

আবার কিছু স্বাভাবিক সংখ্যাকে দুই বা ততোধিক উপায়ে দুইটি বর্গের সমষ্টিরূপে প্রকাশ করা যায়।
যেমন,
৫০ = ১+৭ = ৫+৫
৬৫ = ১+৮ = ৪+৭

১) ১৩০, ১৭০, ১৮৫ কে দুইভাবে দুইটি বর্গের সমষ্টিরূপে প্রকাশ কর।

সমাধান:
১৩০ = ৩+১১ অথবা, ৭+৯
১৭০ = ৭+১১ অথবা, ১৩+১
১৮৫ = ১১+৮ অথবা, ১৩+৪

২) ৩২৫ সংখ্যাটি তিনটি ভিন্ন উপায়ে দুইটি বর্গের সমষ্টিরূপে প্রকাশ কর।

সমাধান:
৩২৫ = ১+১৮ অথবা, ৬+১৭ অথবা, ১০+১৫

5 comments:

  1. (1-100) এর মধ্যে কয়টি সংখ্যাকে‌ ভিন্ন দুইভাবে দুইটি বর্গের সমষ্টি রূপে প্রকাশ করা যায়?

    ReplyDelete