Showing posts with label স্বাস্থ্যকথা. Show all posts
Showing posts with label স্বাস্থ্যকথা. Show all posts

Sunday, March 15, 2020

নতুন দুইজন আক্রান্ত, ৩৭ জেলায় কোয়ারেন্টাইনে ১৩৪৫

স্বেচ্ছায় শরীরে করোনাভাইরাস নিলে ৪ লাখ টাকা!

আইসোলেশনে ইভাংকা ট্রাম্প!

ইউরোপ থেকে আসা বন্ধ, অন-অ্যারাইভাল ভিসাও স্থগিত

স্বাস্থ্যমন্ত্রী: দেশে নতুন করে দুইজন আক্রান্ত

Sunday, March 8, 2020

করোনা এবার বাংলাদেশে, আক্রান্ত ৩ জন

Thursday, March 5, 2020

ডেঙ্গু জ্বর সচেতনতা এখনই


ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপক প্রভাব ছিল গত বছর। এখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত কিছু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল এগিয়ে এসেছে এবং দীর্ঘায়িত হয়েছে। গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকসহ অনেকে মারাও গেছেন। তাই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে মানুষের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা ছিল এবং আছে।

এ বিষয়ে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, জ্বর মানেই ডেঙ্গু, এমন কোনো কথা নেই। তবে জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম। প্রাথমিক অবস্থায় কারণ জেনে চিকিৎসা করা গেলে জ্বরও তাড়াতাড়ি যেমন ভালো হবে, তেমনি অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকিগুলোও এড়ানো যাবে।

জ্বরের সঙ্গে যদি সর্দি-কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোনো সমস্যা থাকে, সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্য কিছু হতে পারে। আবার একই সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বর ও অন্য সমস্যাও হতে পারে। আবার ডেঙ্গু জ্বর নেমে গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে। কারণ, জ্বর–পরবর্তী সমস্যায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।

কী খাবেন

প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাওয়ার স্যালাইন। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে, পানিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। তেল বা চর্বিজাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া খাবার এই সময়ে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

যেসব ওষুধ খাওয়া উচিত নয়

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না। আরও কিছু ওষুধ আছে যেগুলো বন্ধ করতে হতে পারে। অর্থাৎ কী ওষুধ খাওয়া যাবে আর কী ওষুধ খাওয়া যাবে না, তা চিকিৎসকের পরামর্শে ঠিক করুন।

প্লাটিলেট বা রক্তকণিকা নিয়ে কি চিন্তিত

ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট বা রক্তকণিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদি শরীরের কোনো অংশ দিয়ে রক্তপাত না হয়, তবে প্লাটিলেটের সংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কখন প্লাটিলেট দিতে হবে, সেই বিষয়টি বরং চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।

মেয়েদের ক্ষেত্রে সতর্কতা

মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেক দিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে পারে। যাদের এখনো ঋতুস্রাব হয়নি, তাদেরও এই ডেঙ্গু জ্বরের কারণে তা শুরু হয়ে যেতে পারে। এমন হলে অবশ্যই তৎক্ষণাৎ চিকিৎসককে জানাতে হবে। তা না হলে প্রচুর রক্তপাত হতে হতে রোগী শকে গিয়ে মারাও যেতে পারে।

ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়

ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। ভাগগুলো হচ্ছে এ, বি এবং সি।

প্রথম ভাগের রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ভাগের। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

‘বি’ ভাগের ডেঙ্গু রোগীদের শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। শরীরের যেকোনো অংশে রক্তপাত হতে পারে, জন্ডিস দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় জ্বর ভালো হয়ে যায় কিন্তু রক্তচাপ কমে যায়, শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হতে হবে।

‘সি’ ঘরানার ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।

পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন

জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি বা বেশি পরিশ্রম করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। জ্বর ভালো হলেও বিশ্রামে থাকতে হবে। কারণ, ডেঙ্গু জ্বর–পরবর্তী সমস্যা তাতে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কত দিন বিশ্রাম নিতে হবে, তা ডেঙ্গু–পরবর্তী সমস্যার তীব্রতার ওপর নির্ভর করবে। তাই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।

লেখক: চিকিৎসক

বধিরতার কারণ ও প্রতিরোধ


৩ মার্চ ছিল বিশ্ব শ্রবণ দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শ্রবণশক্তিই জীবন: বধিরতা যেন আপনার সীমাবদ্ধতা না হয়’।

আমাদের পঞ্চেন্দ্রিয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে শ্রবণশক্তি। অথচ শ্রবণশক্তির যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে আমরা বরাবরই উদাসীন। জন্মগত বধিরতা বাক্‌শক্তি বিকাশে বাধা দেয়। শ্রবণক্ষীণতা ও বধিরতা মানুষকে সমাজে অগ্রহণযোগ্য করে ফেলে। শিশুর ভাষা শিক্ষা, লেখাপড়া ও সামাজিক যোগাযোগের জন্য স্বাভাবিক শ্রবণশক্তি অপরিহার্য।

একটু সচেতনতা
সামান্য সচেতনতা যেমন উচ্চ আওয়াজে গান না শোনা, জোরে হর্ন না বাজানো, কর্মক্ষেত্রের শব্দদূষণের মাত্রা বেশি হলে যথাযথ শব্দরোধকের ব্যবহার করা—শ্রবণশক্তি হ্রাস প্রতিরোধ করতে পারে। অন্যদিকে যারা বধির, যথাযথ শ্রবণযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে তারাও নিজেদের সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারে। শ্রবণশক্তি হ্রাস রোধ এবং বিশ্বজুড়ে শ্রবণশক্তির যত্ন কীভাবে নেওয়া যায়, সে সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের ৩ মার্চ বিশ্ব শ্রবণশক্তি দিবস পালন করা হয়। প্রতিবছরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একটি নতুন স্লোগান ঘোষণা করে এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পোস্টার, লিফলেট এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেটি সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করে।

বধিরতায় কর্মহীনতা
বধিরতার কারণে বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ কোনো না কোনো মাত্রার শ্রবণ সমস্যায় ভুগছেন। বধিরতা সমস্যার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে মধ্যকর্ণের প্রদাহ, আঘাতজনিত সমস্যা, উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে সৃষ্ট বধিরতা। শব্দদূষণের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার শব্দে হেডফোন দিয়ে গান শোনা, উচ্চমাত্রার হর্ন বাজানো, লাউডস্পিকারের শব্দ ইত্যাদি।

বধিরতা কেন
 বংশগত কারণে মানুষ বধির হতে পারে

 প্রসবকালীন জটিলতা যেমন কম ওজন, প্রিম্যাচিউরিটি, বার্থ এসফ্যাক্সিয়া, নিউনেটাল জন্ডিসের কারণেও বধিরতা হতে পারে

 বধিরতার জন্য দায়ী মায়ের গর্ভকালীন কিছু সংক্রমণ। যেমন সাইটোমেগালো ভাইরাস, রুবেলা

 শিশুর মেনিনজাইটিস, মাম্পস, মিসেলস, মধ্যকর্ণের সংক্রমণে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়

 উচ্চ শব্দ। হেডসেট বা হেডফোনের বেশি ভলিউম এবং আতশবাজির শব্দ কানের জন্য ক্ষতিকর

 কানের ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার

 কানের অন্যান্য অসুখ

প্রতিরোধ
টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা

শিশুদের শ্রবণক্ষমতা স্ক্রিনিং কর্মসূচি

স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষিত করা

হিয়ারিং ডিভাইস এবং থেরাপি সহজলভ্য করা

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ, ওটোটক্সিক ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার

কিছু পরামর্শ
কানে কোনো কিছুই ঢোকানো যাবে না। এমনকি কান পরিষ্কার করার জন্য কাঠি, মুরগির পালক বা কটনবাড ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।

খৈল জমে কান বন্ধ ভাব হলে বা কানের মধ্যে বাইরের কোনো বস্তু প্রবেশ করলে অপসারণ করতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কানে তেল বা অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।

কানে যাতে পানি না যায়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

কানে সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. মো. আরিফুজ্জামান : নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ, স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা

Wednesday, March 4, 2020

রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর উপায়


ট্রাইগ্লিসারাইড বা টিজি মূলত একধরনের ফ্যাট। স্থূলতা, ডায়াবেটিস, বেশি শর্করা খাওয়া এবং কম কায়িক শ্রমের কারণে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যেতে পারে। বিপরীতে কমে যায় গুড কোলেস্টেরল বা এইচডিএল। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে প্যানক্রিয়াটাইটিস, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি হতে পারে। তবে কিছু সচেতনতা আর খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে খুব সহজেই ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ বা কমানো যায়। এ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাই সবচেয়ে জরুরি।

মনে রাখতে হবে, ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে—

• প্রক্রিয়াজাত মাংস, ট্রান্স ফ্যাট খাওয়া বর্জন করতে হবে।

• আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।

• রিফাইন্ড কার্বস খাওয়া যাবে না।

• খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৭ শতাংশের কম হতে হবে।

• মদ্যপান বর্জন করতে হবে।

ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে যা খাবেন

ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমানোর সবচেয়ে উপযোগী ডায়েট হলো মেডিটেরানিয়ান ডায়েট বা ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস।

• এই ডায়েটে মূল খাবার হিসেবে শাকসবজি, ফল বেশি প্রাধান্য পায়। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন প্রচুর সবুজ ও রঙিন শাকসবজি এবং তাজা মৌসুমি ফলমূল রাখতে হবে।

• কার্বোহাইড্রেট হিসেবে পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার যেমন লাল চাল, গমের আটা, ভুট্টা, ওটস বা এ ধরনের খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে। মেডিটেরানিয়ান ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট খাওয়া নিষেধ নয়, তবে তা অল্প পরিমাণে খেতে হয়। দিনে ৩৫ গ্রামের বেশি কার্বোহাইড্রেট না খাওয়াই উত্তম। আর শর্করাজাতীয় খাবার সেগুলোই বেছে নিতে হবে, যেগুলোয় আঁশ বা ফাইবার বেশি থাকে।

• প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাছ বা মুরগির মাংস সপ্তাহে ২-৩ দিন খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাছকে প্রাধান্য দেওয়াই উত্তম। সামুদ্রিক মাছ খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩, ইপিএ, ডিএইচএ থাকে। প্রতিদিন ৪ গ্রাম ইপিএ/ডিএইচএ খেলে তা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। রেডমিট (গরু, ছাগল বা এই জাতীয় প্রাণীর মাংস) মাসে এক বা দুদিনের বেশি খাওয়া যাবে না।

• খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন বাদাম রাখতে হবে। বাদামে প্রচুর ওমেগা-৩ এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া সূর্যমুখী, কুমড়া ও তিলের বীজ খাওয়াও খুব উপকারী।

• ভোজ্যতেল হিসেবে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, বাদামের তেল বা খাঁটি সরিষার তেলকে প্রাধান্য দিতে হবে।

• রান্নায় মসলা হিসেবে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, এলাচি, লবঙ্গ, দারুচিনি, পুদিনাপাতা ব্যবহার করতে হবে।

• দুধ, দই, পনির প্রতিদিন ১ থেকে ৩ সার্ভিংস পর্যন্ত খাওয়া যাবে।

• সপ্তাহে ৪টা ডিমের কুসুম খাওয়া যাবে। ডিমের সাদা অংশ খেতে বাধা নেই।

• মেডিটেরানিয়ান ডায়েটের সঙ্গে দরকার নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

লেখক: পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা কনসালটেশন সেন্টার, বাড্ডা

শিশুদের নাকের পেছনের টনসিলের সমস্যা


শিশু ডাক্তারদের কাছে আসা শিশুদের অনেক সমস্যার মধ্যে একটি সমস্যা হলো এডেনয়েড বা এডেনোটনসিলাইটিস। নাক ও মুখের ছিদ্রের মাধ্যমে আমাদের দেহের খাদ্যনালি ও শ্বাসতন্ত্রের সঙ্গে পরিবেশের যোগাযোগ হয়। তাই নাকের পেছনে ও গলায় কিছু প্রহরী থাকে। এদের একসঙ্গে ওয়েল্ডেয়ার্স রিং বলে। এই ওয়েল্ডেয়ার্স রিংয়ের মধ্যে অন্যতম হলো নাকের পেছনের টনসিল আর গলার পাশের টনসিল। নাকের পেছনের টনসিলকে বলা হয় ন্যাজোফ্যারিঞ্জিয়াল টনসিল। ঘন ঘন সংক্রমণ হয়ে যখন এর গঠনে স্থায়ী পরিবর্তন চলে আসে, তখন একে এডেনয়েড বলা হয়। গলার টনসিল বড় হয়েও সমস্যা করতে পারে, তবে এদের তখন আলাদা কোনো নাম হয় না। একটি শিশুর শুধু এডেনয়েডের সমস্যা হতে পারে আবার টনসিলের সমস্যার সঙ্গে মিলে এডেনোটনসিলাইটিসও হতে পারে। এই লেখায় এডেনয়েড নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে। কারণ, শিশুদের এই সমস্যাটি নিয়ে ডাক্তারদের কাছে আসা মা–বাবার দুশ্চিন্তা ডাক্তারদের সত্যি ভাবিয়ে তোলে।

লক্ষণ
এ রোগে প্রথমত শিশুর যে সমস্যা নজরে আসে তা হলো, শিশু ঠিকমতো নিশ্বাস নিতে পারে না। রাতে হাঁ করে ঘুমায়, বালিশে লালা পড়ে, নিশ্বাস নিতে খাঁ খাঁ করে শব্দ হয়, খেতে চায় না, প্রায়ই সর্দি-কাশি হয়। এ ছাড়া খেলাধুলার প্রতি শিশুর অনীহা দেখা যায়, নতুন কিছু শিখতে চায় না, পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়। অনেক সময় শিশু কানে কম শোনে। পাশের রুম থেকে ডাকলে সাড়া দেয় না, ক্লাসে পড়া বোঝে না। এ সময় অনেকে শিশুর ওপর বাড়তি চাপ দিয়ে থাকেন। শিশু দুষ্টুমি করে লেখাপড়া করছে না বলে বকাবকি করেন, গায়ে হাত তোলেন। এতে শিশু আরও বিগড়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, শিশুর যে সমস্যা নজরে আসে তা হলো, শিশু প্রায়ই পেটব্যথা বা পা ব্যথার অভিযোগ করে। এটার অনেক কারণ আছে। কিন্তু টনসিল বা এডেনোটনসিলের সমস্যা থাকা শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। সবচেয়ে বেশি যে জীবাণুর আক্রমণে টনসিল বা এডেনোটনসিলের সমস্যা হয়, তার নাম বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাস। সময়মতো ও উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করা না হলে স্বভাবতই শরীর এই জীবাণুর বিপক্ষে একটা প্রতিরোধব্যবস্থা নেয়। কিন্তু সমস্যা হলো সেই প্রতিরোধব্যবস্থা শিশুদের শরীরে হৃৎপিণ্ডের দেয়াল, কিডনির দেয়াল এবং হাঁটুর সংযোগস্থলেও আক্রমণ করে। কিন্তু শিশুরা তাদের সমস্যার কথা ঠিকভাবে বলতে পারে না। তখন তারা শুধু বলে পেটব্যথার কথা, হাঁটুব্যথার কথা। এ জন্য তাদের অনেক যত্ন ও সময় নিয়ে না দেখলে ঠিক বোঝা যায় না মূল সমস্যা কোথায়।

তৃতীয়ত, যে সমস্যাটা হয় সেটা হলো ঘন ঘন কান পাকা। দেখা যায় কিছু কিছু শিশুকে নিয়ে মা–বাবা কয়েক দিন পরপরই কান পাকা রোগের জন্য বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়ে থাকেন। রোগের ইতিহাস খুঁজলে জানা যায়, শিশু হয়তো ছোট থেকেই কানে হাত দিয়ে চুলকাত, কেউ আমলে নেয়নি ব্যাপারটা। কিংবা একবার দুবার বলেছে কানব্যথার কথা, ব্যথার ওষুধে সেরে গিয়েছে। কিন্তু তারপর আর কোনো খোঁজ না নেওয়ায় একেবারে কান ফেটে পুঁজ বের হয়ে কান পাকা রোগ জটিল আকার ধারণ করেছে।

চতুর্থত, যে সমস্যা দেখা যায়, শিশু খাবারের ভালো খারাপ, নিজের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে উদাসীন হয়ে যায়। খেয়াল করলে দেখা যাবে, শিশু নাকের ঘন ঘন সংক্রমণের কারণে নাকে ঘ্রাণ পায় না। তাই খাবারের স্বাদ পায় না, খেতে চায় না। নিজের ও আশপাশের ভালোমন্দ ঘ্রাণ পায় না, তাই পরিচ্ছন্নতা নিয়ে উদাসীন থাকে।

এ রকম আরও অনেক কিছু আছে, যেগুলোর এক বা একাধিক বিষয় নিয়ে মা–বাবা আসেন তাঁদের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তারের কাছে।

চিকিৎসা
শিশুকে ভালোভাবে দেখে, পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ডাক্তাররা বোঝার চেষ্টা করেন যে তার এডেনয়েডের সমস্যাটি কি ওষুধে সেরে যাবে, সেটি শুধু কি অ্যালার্জি বা পারিপার্শ্বিকতার কারণে হয়েছে, নাকি অপারেশন বা শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন আছে। অনেকের ক্ষেত্রে ওষুধ এবং অপারেশন দুই–ই প্রয়োজন হয়। অনেকের ক্ষেত্রে কেবল কিছুদিন ওষুধ খেলে সেরে যায়।

এডেনয়েড খুবই অদ্ভুত একটা জিনিস। ডাক্তাররা সাধারণত শিশুকে এক পাশ থেকে মুখ হাঁ করিয়ে এক্স-রে করিয়ে এডেনয়েডের অবস্থা জানতে চেষ্টা করেন। অনেক সময় দেখা যায় নাকের পেছনে বিশাল করে ঢিবি হয়ে আছে এডেনয়েড। কিন্তু বাস্তবে হয়তো সেটা কেবল মাঝবরাবরই আছে। এ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করতে শিশুর অন্যান্য সমস্যা কতটুকু আছে, সেটা ভালোভাবে খেয়াল করতে হয়।

আবার অনেকের এক্স-রেতে দেখা যায় এডেনয়েড প্রায় নেই বললেই চলে, কিন্তু শিশুর টনসিলের সমস্যা আছে কিংবা সে কানে ঠিকমতো শুনতে পায় না। সে ক্ষেত্রে তার শ্রবণশক্তির পরীক্ষা করা, কানের ভেতরটা দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব যাচাই করে যদি দেখা যায় এডেনয়েডের কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, তবে দেরি না করে দ্রুত অপারেশন করা না হলে শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে বা পুরোপুরিভাবে কমে যেতে পারে।

শিশুর মা–বাবা এবং চিকিৎসকের মধ্যে এডেনয়েড নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় অনেক শিশুর জীবনে জটিলতা তৈরি হতে দেখেছি। কখনো মা-বাবা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসরণ করতে খামখেয়ালিপনা করেন। কখনো শিশু ওষুধ খেতে চায় না। কখনো মা-বাবা অপারেশনের পক্ষে মত দেন না। কখনো মা-বাবা ও নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ অপারেশনের পক্ষে থাকলেও শিশু বিশেষজ্ঞ আরও কিছুদিন অপারেশন ছাড়া মুখে খাওয়ার ওষুধে আস্থা রাখার পক্ষে থাকেন।

তবে মোটাদাগে শিশুর বর্তমান পরিস্থিতি, পরীক্ষা–নিরীক্ষার রিপোর্ট এবং চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা অপারেশনের পক্ষে গেলে দেরি না করে অভিজ্ঞ কারও হাতে অপারেশনে যাওয়া শিশুর সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করে। কারণ, দেরিতে অপারেশন করা হলে এডেনয়েড বা এডেনোটনসিলাইটিস থেকে আরোগ্য পাওয়া গেলেও এগুলোর কারণে স্থায়ী কোনো সমস্যা তৈরি হয়ে গেলে সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।

প্রতিটি শিশুই গুরুত্বপূর্ণ। সিদ্ধান্তহীনতা বা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার কারণে বাতজ্বর, শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, পুষ্টিহীনতা, মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে কোনো শিশু বড় হোক এটা কারও কাম্য নয়। তাই মা–বাবা কষ্ট করে হলেও একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক খুঁজে নিয়ে তাঁর ওপর আস্থা রেখে উপযুক্ত চিকিৎসা নিয়ে উপকৃত হোন। ভালো থাকুক আপনাদের কোলের শিশু।

লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি-১৮), বিসিএস (স্বাস্থ্য), ডিএলও ট্রেইনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।

Tuesday, March 3, 2020

মিষ্টি যখন দাঁতের জন্য ক্ষতিকর


অনেকেই মনে করেন, মিষ্টিজাতীয় খাবার মানেই দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। তাই এ ধরনের খাবার অনেকে এড়িয়ে চলেন। চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার নিজে তেমন সমস্যা করে না। তবে মিষ্টিজাতীয় খাবার থেকে তৈরি হওয়া অ্যাসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয়ের জন্য দায়ী। মাড়ির জন্যও তা ক্ষতিকর। তাই মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে তার অবশিষ্টাংশ যেন দাঁতের ফাঁকে বা মুখের আনাচে-কানাচে না আটকে থাকে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য খাওয়ার পরই ব্রাশ করা সবচেয়ে ভালো উপায়। এ ছাড়া কোন ধরনের মিষ্টিজাতীয় খাবার দাঁত ও মুখের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, তা–ও জানা জরুরি।

■ প্রক্রিয়াজাত ও রিফাইন্ড চিনি দিয়ে তৈরি খাবার যেমন কোমল পানীয়, ক্যান্ডি, চকলেট, আইসক্রিম, জুস ইত্যাদি দাঁত ও মাড়ির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। মনে রাখতে হবে, প্যাকেটজাত চিপস, সাইট্রাস বা খুব টক জিনিস, মধু, শুষ্ক ফলও দাঁতের জন্য ভালো নয়। চুইংগাম, মিষ্টি বিস্কুট, জ্যাম, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, চিনি ইত্যাদিও এড়িয়ে চলতে হবে। আর খেলেও ব্রাশ করে, ভালো করে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে, যাতে মুখে আটকে থাকা খাবারের টুকরো ধুয়ে যায়।

■ খুব ঠান্ডা বা খুব গরম খাবার দাঁতের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে এমন ঠান্ডা বা গরম খাবার পরপর খাওয়া আরও বেশি ক্ষতিকর।

■ মিষ্টি হলেও দাঁত ও মাড়ির জন্য ভালো খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম তাজা ফলমূল। যেমন কলা, পেঁপে, কমলা, আপেল, গাজর, আম, শালগম, ভুট্টা ইত্যাদি। আঁশজাতীয় খাবার এবং আমিষযুক্ত খাবার যেমন পনির, দুধ, বাদাম দাঁতকে মজবুত করে। এ ছাড়া সুগার ফ্রি গাম বা মিন্টে জাইলিটল নামে একধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা দাঁতের জন্য ভালো।

অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল, অধ্যক্ষ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ

দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া কতটা ভালো



অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যখন-তখন এবং টানা দীর্ঘদিন পিপিআই (প্রোটন-পাম্প ইনহিবিটর) বা অ্যান্টি আলসারেন্ট ওষুধ (যেমন ওমিপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, ল্যান্সোপ্রাজল, রাবিপ্রাজল, ডেক্সল্যান্সোপ্রাজল ইত্যাদি) সেবন করে থাকেন। বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, পিপিআই বা অ্যান্টি আলসারেন্ট জাতীয় ওষুধের কোনো ক্ষতিকর দিক নেই। কিন্তু জেনে রাখা ভালো, কোনো ওষুধই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়।

প্রোটিন জাতীয় খাদ্য বিপাক এবং খাবারের জীবাণু ধ্বংসে পাকস্থলীর অ্যাসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া খাবারের লৌহ আত্তীকরণেও এর ভূমিকা অপরিসীম। লৌহ আমাদের রক্তকণিকা, মাংসপেশি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্নায়ুবিকাশে বিশেষ প্রয়োজনীয়।

পিপিআইয়ের মূল কাজ পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণ কমিয়ে দেওয়া। এতে পাকস্থলীর অম্লতা কমে যায় এবং স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম শোষণও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শরীরে বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, পাশাপাশি রক্তশূন্যতা, অস্টিওপোরোসিসের মতো হাড়ের ক্ষয়রোগ, কিডনি কার্যকারিতা হ্রাস এবং গ্যাস্ট্রিক পলিপের মতো রোগের আশঙ্কা অনেকাংশে বেড়ে যায়।

পিপিআই মূলত পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট মেয়াদে ব্যবহার করার কথা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফাংশনাল বাওয়েল ডিসঅর্ডার বা আইবিএস, নন-আলসার ডিসপেপসিয়ার চিকিৎসায় অনেকেই না বুঝে এসব ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করেন। আবার কখনো কখনো কেউ কেউ হুট করে এসব ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন। এতে তাঁরা অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির সমস্যায় পড়েন। অন্য অনেক ওষুধের মতো এগুলোও সেবনের যেমন নিয়ম আছে, তা ছাড়ারও নিয়ম আছে। তাই পিপিআই ওষুধ শুরু ও বন্ধ করার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। 

পাকস্থলীতে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকলে আলসার বা অ্যাসিডিটি সহজে সারে না। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট চিকিৎসা আছে, যা রোগ নির্ণয় করে নির্দিষ্ট মেয়াদে গ্রহণ করতে হবে, শুধু পিপিআই খেয়ে গেলে চলবে না। আবার দীর্ঘদিন অ্যাসিডিটির ব্যথা, হজমের সমস্যা, গ্যাস বা পেট ফাঁপার পেছনে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে (যেমন পিত্তথলির সমস্যা, পাকস্থলীর ক্যানসার ইত্যাদি)। এ কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় বছরের পর বছর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা করাতে হবে।

ডা. রাশেদুল হাসান, সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন), গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ

প্রস্রাব ঝরে পড়া রোধে ব্যায়াম

অজান্তে প্রস্রাব ঝরে পড়া বা ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স বয়স্কদের জন্য বিব্রতকর একটি সমস্যা। পুরুষদের তুলনায় নারীরা এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা কোনো রোগ নয়। এটি আসলে রোগের উপসর্গ। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, মাসিক, জরায়ু ফেলে দেওয়া ইত্যাদি কারণে পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশি দুর্বল ও নিচের দিকে ঝুলে পড়তে পারে। এর থেকে সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। পুরুষদের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হওয়া, প্রোস্টেট ক্যানসার ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে মূত্রথলি ও মূত্রনালির পেশির দুর্বলতা দেখা দেয় এবং প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। অতিরিক্ত ওজন, কিছু স্নায়ুগত রোগ (পারকিনসন, স্ট্রোক, ব্রেইন টিউমার, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি), অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণের কারণেও প্রস্রাব ঝরতে পারে। 

সমাধান

নির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকলে তার সমাধান করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ধূমপান ত্যাগ করুন এবং সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান। সমস্যা কমাতে নিয়মিত পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করুন। নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম ও ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেটরের মাধ্যমে পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশি শক্তিশালী করে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে এ সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব।

জেনে নিন কিছু ব্যায়াম

পেলভিক ফ্লোর: প্রথমে একটি চেয়ারে বসুন। মেরুদণ্ড সোজা রেখে একটু সামনের দিকে ঝুঁকুন। এবার প্রস্রাব ধরে রাখার জন্য দরকারি মাংসপেশিগুলো সংকুচিত করুন। এই অবস্থায় ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড থাকুন। এবার সংকুচিত মাংসপেশি ছেড়ে দিন। পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৪ বার করুন।

আরেকটি ব্যায়ামও করতে পারেন। একটি শক্ত বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার দুই হাঁটুর ফাঁকে একটি ফুটবল রেখে এতে চাপ দিন এবং ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন আর ছাড়ুন। পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ থেকে ১৫ বার এবং দিনে ৪ বার করুন। 

ব্রিজিং: সোজা চিত হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার কোমর ওপরের দিকে ওঠান, ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং ছাড়ুন। এটিও দিনে ৪ বেলা এবং প্রতিবার ১০ থেকে ১৫ বার করুন।

ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন: এই পদ্ধতিতে রেক্টাস অথবা ভেজাইনার ভেতরে ইলেকট্রোড বসিয়ে স্টিমুলেশনের মাধ্যমে পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশি শক্তিশালী করা হয়।

ব্লাডার ট্রেনিং: প্রস্রাবের বেগ শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর প্রস্রাব করার অভ্যাস করা।

ডাবল ভোয়েডিং: প্রস্রাব করার পরও কিছু সময় বসে থেকে অপেক্ষা করে আবার প্রস্রাবের চেষ্টা করা। এ ছাড়া প্রস্রাবের বেগ না এলেও ২ থেকে ৪ ঘণ্টা পরপর প্রস্রাবের চেষ্টা করা।

Wednesday, February 19, 2020

হবু মায়ের ওজন


আমায় এরা যেতে বলে,
যদি বা যাই, জানি তব
দূরকে খুঁজে খুঁজে শেষে
মায়ের কাছেই ফিরতে হবে।’

কবিগুরুর কাব্যে মায়ের কাছে ফেরার আকুতি। যেখানেই যাওয়া হোক, যা কিছুই পাওয়া হোক—মায়ের তুলনা মিলবে না। মা হওয়ার আনন্দও অতুলনীয়। সন্তান গর্ভে ধারণ করার পর নিজের ভালোমন্দের কথা ভাবতেই যেন ভুলে যান মা। তবে গর্ভধারণের সময় থেকেই মায়ের ভালোমন্দের সঙ্গে সন্তানের ভালোমন্দ জড়িয়ে যায়। মায়ের ওজন বৃদ্ধির দিকটাই যেমন। গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়বে। এটি খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে সর্বোচ্চ কতটা ওজন বাড়া স্বাস্থ্যকর, আর কতটা না বাড়লেই নয়, তা জানা থাকা প্রয়োজন। ওজন বাড়াতে হবে, বেশি বেশি খেতে হবে—এই ভাবনায় খুব বেশি মুটিয়ে যাওয়াটাও ভালো কথা নয়।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা কুতুবী বলেন, ‘আদর্শ ওজন নিয়ে একজন নারী মা হবেন, এটাই আমরা আশা করি। অর্থাৎ, গর্ভধারণের শুরুতেই একজন নারীর ওজন স্বাস্থ্যকর থাকবে। গর্ভধারণের আগে একজন নারীর ওজন যদি বয়স ও উচ্চতার তুলনায় কম বা বেশি থাকে, তাহলে গর্ভধারণের আগেই আদর্শ ওজনে আসতে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেয়া উচিত।’

গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন বৃদ্ধির নানান দিক সম্পর্কে জানা গেল অধ্যাপক আফরোজা কুতুবীর কাছ থেকে

স্বাস্থ্যকর ওজন কী

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর ওজন প্রতি সপ্তাহে আধা কেজি (৫০০ গ্রাম) করে বাড়া উচিত। তবে প্রথম তিন মাস বমিভাব বেশি থাকার কারণে অনেকেই খুব একটা খাওয়াদাওয়া করতে পারেন না। তাই এই সময়টুকুতে মা যতটা পারেন, ততটা খেলেই চলবে। তিন মাস পেরোনোর পর এমনভাবে খেতে হবে, যাতে ওজন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা পার হয়ে খুব বেশি ওজন বাড়ানোও যাবে না। কতটা ওজন বাড়ছে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনের তুলনায় ওজন বৃদ্ধি কম হলে পরবর্তী সপ্তাহে সেটুকু পূরণ করে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, আর অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকলে ওজনের ভারসাম্যের চেষ্টা করতে হবে পরবর্তী সপ্তাহে। তবে পরপর দুই সপ্তাহে যদি ওজনের অস্বাভাবিকতা থাকে, তাহলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে (কম ওজনের ক্ষেত্রে শিশুর বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে কি না আর বেশি ওজনের ক্ষেত্রে প্রি-একলাম্পসিয়ার দিকে যাচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে)। এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী গর্ভকালীন চেকআপের জন্য কাছের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যেতে হবে।

ওজন নিয়ে কেন ভাববেন

মায়ের স্বাস্থ্যকর ওজন—মা আর শিশু দুজনের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় কম হলে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়, শিশুর ওজন কম হয়। এ ছাড়া গর্ভকাল পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তানের জন্ম হয়ে যাবার ঝুঁকি থাকে মায়ের ওজন কম থাকলে। কম ওজন নিয়ে কিংবা পূর্ণ গর্ভকাল পেরোনোর আগে জন্মানো শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা স্বাভাবিক শিশুদের চেয়ে কম হয়। নানান জটিলতায় ভোগে এই শিশুরা।

অন্যদিকে মায়ের ওজন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বেড়ে গেলে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতা বাড়ে। মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলাম্পসিয়া, একলাম্পসিয়া ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। গর্ভস্থ শিশু অত্যধিক বড় হয়ে যেতে পারে, প্রসবের সময় শিশু বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে (অবস্ট্রাক্টেড লেবার), প্রসব হতে খুব বেশি সময় লাগতে পারে (প্রলম্বিত প্রসব)। প্রসবের সময় শিশুর মাথা বের হয়ে ঘাড় আটকে যেতে পারে, এমনকি প্রসবকালীন শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। ওজন বাড়তি থাকলে প্রসব–পরবর্তী সময়ে মায়ের অত্যধিক রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা মাকেও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা

সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। পর্যাপ্ত খাবেন, কিন্তু ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন। সহজ ও হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। হাত-পা নেড়ে যেসব ব্যায়াম করতে হয়, সেগুলো করা যাবে। তবে যেসব ব্যায়াম করলে পেটে চাপ পড়ে, সেগুলো করবেন না। দৌড়ঝাঁপ বা লাফালাফি করতে হয়, এ রকম ব্যায়ামও নয়। পরিমিত হাঁটুন। হাঁটতে হাঁটতে যেন হয়রান হয়ে না পড়েন। একেবারে শুয়েবসে দিন কাটানো উচিত নয়। তবে বিশেষ কোনো অসুবিধার কারণে চিকিত্সকের পক্ষ থেকে বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকলে আলাদা কথা।

Saturday, February 8, 2020

কান চুলকানোর যত কারণ


কটন বাড কিংবা কবুতরের পালক অথবা একটু শক্ত কিছু দিয়ে যখন কান চুলকানো হয়, আহা, সে আরামের কথা শুধু যে মানুষটা কান চুলকায়, তিনিই জানেন। আবেশে কখনো কখনো চোখ বন্ধ হয়ে আসে। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন কি কেন কান চুলকায়? কত কারণে কান চুলকাতে পারে?

কান চুলকানো ব্যাপারটা সামান্য মনে হলেও আসলে অনেক বড়। আমাদের চেম্বার বা আউট পেশেন্ট ডিপার্টমেন্টে আসা রোগীদের একটা বিশাল অংশ কান চুলকানো ব্যাপারটা নিয়ে আসে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আমাদের হিস্ট্রি নেওয়া থেকে, তাদের গায়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করা এবং ইনভেস্টিগেশন দেওয়া—সবকিছুই ভিন্ন হয়, মিল খুব কমই থাকে।

কান চুলকানোর প্রথম কারণ হতে পারে এক্সটার্নাল অডিটরি ক্যানালে। অর্থাৎ কানের বাইরের যে সরু রাস্তাটা কানের ভেতর পর্দা পর্যন্ত চলে গেছে, সেখানকার কোনো সমস্যা থেকে। অনেকের এই রাস্তার চামড়া শুষ্ক থাকে। এই শুষ্কতার কারণে কান চুলকাতে পারে। অনেকের গোসলের সময় পানি ঢুকে বা গরমের সময় ঘাম ঢুকে চুলকাতে পারে। অনেকের আবার কানের খৈল জমে গিয়ে কান চুলকাতে পারে। কারও কারও নানা রকম চর্ম রোগের সংক্রমণ হয়ে কান চুলকাতে পারে।

এরপর কানের পর্দা। কানের পর্দার নানা সমস্যার কারণে কান চুলকাতে পারে। কানের পর্দার দুপাশের বায়ুচাপের তারতম্যের ফলে কান চুলকাতে পারে। কানের পর্দার পেছনে কফ বা পানি জমে গিয়ে কান চুলকাতে পারে। কানের পর্দা ফেটে গিয়ে, কানের সংক্রমণ হয়ে কান চুলকাতে পারে।

কানের পর্দা আগে থেকে ফাটা বা ছিদ্র থাকলে মধ্যকর্ণের নানা রকম সংক্রমণ থেকেও কান চুলকাতে পারে। কান থেকে গলের ভেতর একটা সরু রাস্তা খোলে। এটাকে ইউস্টেশিয়ান টিউব বলে। এটার সমস্যা থেকেও কানে চুলকানোর অনুভূতি হতে পারে।

এ ছাড়া কানে ঘন ঘন কটন বাড, চাবি, কলমের ঢাকনা, পাখির পালক, ধাতব বস্তু ইত্যাদি জিনিস দিয়ে খোঁচালে কান চুলকাতে পারে, কানে সংক্রমণ হতে পারে।

নাকের হাড় বাঁকা, মাংস বৃদ্ধি, পলিপ, অ্যালার্জি, ঘন ঘন সাইনাসের সংক্রমণ ইত্যাদির কারণে কান চুলকাতে পারে। নাকের পেছনে থাকে একধরনের টনসিল। এগুলো বেড়ে যাওয়াকে বলে এডেনয়েড। এডেনয়েডের সমস্যা থেকেও কান চুলকাতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এটা বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া নাকের পেছনে যে জায়গাটাকে ন্যাসোফ্যারিংস বলা হয়, সেখানকার কোনো ধরনের রোগের শুরুতেই কানে চুলকানোর একটা অনুভূতি হতে পারে।

এরপর আসে গলার নানাবিধ সমস্যা। টনসিলের ঘন ঘন সংক্রমণের কারণে কান চুলকাতে পারে। কারণ, ওই যে খানিক আগে বলেছি ইউস্টেশিয়ান টিউবের কথা, সেটা মধ্যকর্ণের এক কোনা থেকে শুরু হয়ে নাকের পেছনে তালু যেখানে শেষ, সেদিকে এসে টনসিলের মাথার দিকটায় গিয়ে গলায় খোলে। তাই টনসিলের সমস্যা থেকে কান চুলকানো খুবই স্বাভাবিক। এ ছাড়া গলার অন্যান্য যেকোনো সংক্রমণের ক্ষেত্রেও কান চুলকাতে পারে।

নাক-কান-গলার সমস্যাগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটার সঙ্গে আরেকটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেক সময় অনেক যত্ন নিয়ে দেখেও অনেক অভিজ্ঞ চোখে অনেক কিছু ধরা নাও পড়তে পারে। তাই সময়মতো সশরীরে এসে চিকিৎসা নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি যাঁর কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে, তাঁর কাছে পুনরায় এসে চিকিৎসা কত দূর কার্যকর হলো বা হলো না, সেটা যাচাই করাও জরুরি। অযত্নে, অবহেলায়, ভালোভাবে না দেখে, এমনকি অনলাইনে বা ফোনে কথা বলেও অনেক ওষুধ দেওয়া যায়। কিন্তু তাতে প্রকৃত রোগ নির্ণয় করা যায় না কখনোই। যদিও আজকাল অনলাইনে ভিডিও কল করা যায়, যোগাযোগব্যবস্থা অনেক উন্নত, কিন্তু নিজের সামনে বসিয়ে যত্ন নিয়ে দেখেও যেখানে অনেক রোগের কারণ অধরা রয়ে যায়, সেখানে আপন-পর যেমন রোগীই হোক না কেন, না দেখে চিকিৎসা করাটা দুঃসাহসিক এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনৈতিক। এতে রোগীর ভালো থেকে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কানের সমস্যাই হোক আর শরীরের অন্য যেকোনো সমস্যাই হোক, সামান্যতে বা শুরু থেকেই একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানের শরণাপন্ন হোন। আমাদের অনেকে সপ্তাহের মাঝামাঝি শুরু হওয়া সমস্যা চেপে বসে থাকেন। পরে দেখা যায় বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার সন্ধ্যা বা গভীর রাতে ছুটোছুটি করতে হয়। এতে রোগী ও ডাক্তারদের একে অপরের প্রতি বিরূপ ধারণা জন্মে।
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি-১৮), বিসিএস (স্বাস্থ্য), ডিএলও ট্রেইনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।

Friday, February 7, 2020

করোনাভাইরাস কতটা প্রতিরোধ করবে মাস্ক?


চীন থেকে অনেক দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এরপর পথেঘাটে, অফিসে অনেকেই মাস্ক পরছেন। আবার মাস্ক ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে মতও দিচ্ছেন অনেকে। ঘুরেফিরে উঠে আসছে একটি প্রশ্নই, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কতটা প্রতিরোধ করবে ফেস মাস্ক?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ফেস মাস্ক পরলেই নিজেকে নিরাপদ ভাবার সুযোগ নেই। পাতলা সার্জিক্যাল মাস্ক সাধারণ দূষণ, ধুলাবালু আটকাতে বেশি ব্যবহৃত হলেও তা পুরোপুরি নিরাপত্তা দেয় না। তবে ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির মাস্ক পরা জরুরি। এর বাইরে মাস্কের দুটো উপকার আছে: মাস্ক পরা থাকলে নাকেমুখে হাতের স্পর্শ পড়ে কম, আর একেবারে মুখের সামনে কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে মাস্ক কিছুটা নিরাপত্তা দেয়। তবে সাধারণ মাস্কের ফাঁকফোকর গলে ভাইরাস বা বাতাসবাহিত ড্রপলেট সহজেই প্রবেশ করতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাস্ক মুখে ঠিকমতো ফিটও হয় না। 

সাধারণ চারকোনা সার্জিক্যাল মাস্ক পরে কিছু বৃহদাকার ড্রপলেট সংক্রমণ যেমন ফ্লু, হুপিং কফ, মেনিনজাইটিস অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। আক্রান্ত রোগী ও তার পরিচর্যাকারী, চিকিৎসক, নার্স, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের এটা পরা উচিত। তবে প্রতিবার রোগীর পরিচর্যার পর ডিসপোজিবল এই মাস্ক ফেলে দিতে হবে। আধঘণ্টা পরপর পরিবর্তন করলে ভালো। মাস্কের নীল অংশটা পানিপ্রতিরোধী। আর ভেতরের (সাদা) অংশ নাক থেকে বের হওয়া পদার্থ শুষে নেয়। কেউ কাশি দিলে ভেতরের অংশটা সেটা শুষে নেয়। মাস্ক সঠিকভাবে পরা, আলাদা ঘরে বা কোণে গিয়ে খোলার পর সঠিক জায়গায় ফেলা ও ফেলার পর হাত পরিষ্কার করা উচিত। 

করোনা, সার্স, যক্ষ্মা, হাম, চিকেন পক্স ইত্যাদি ভাইরাসের ক্ষুদ্র ড্রপলেট বাতাসে ভেসে বেড়ায়। একে প্রতিরোধ করার জন্য সম্ভব হলে গোলাকার এন-৯৫ রেসপিরেটর মাস্ক পরা উচিত। আক্রান্ত রোগী এ ক্ষেত্রে পেস মাস্ক পরবেন, কিন্তু পরিচর্যাকারী এন-৯৫ রেসপিরেটর পরবেন। 

শুধু মাস্ক পরলেই হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বারবার হাত ধোয়া, নাকমুখে হাতের স্পর্শ না লাগানো আর যেকোনো ফ্লু আক্রান্ত রোগী থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরে অবস্থান করা—এই তিনটি নিয়ম পালন করা জরুরি। 

ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, লালবাগ, ঢাকা।

Thursday, February 6, 2020

সমস্যার নাম টেক্সট নেক


জীবনাচরণ পদ্ধতির নানা ভুলে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন অনেক সমস্যা। তেমনই একটি সমস্যার নাম হচ্ছে টেক্সট নেক।

মেরুদণ্ড বা পিঠ কুঁজো করে মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘ সময়ের জন্য মোবাইল ফোন, ট্যাব, আইপ্যাড, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করার ফলে ঘাড় ও কাঁধের মাংসপেশিতে অতিরিক্ত টান লেগে ইনজুরি হওয়াকে টেক্সট নেক সিনড্রোম বলে। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে পাঁচ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ চালানোর ফলে প্রতি ১০ জনের ৭ জনই টেক্সট নেকে ভুগছেন। 

আমরা যখন স্বাভাবিক অবস্থানে থাকি অর্থাৎ ঘাড় সোজা থাকে, তখন ঘাড়ের মাংসপেশিকে শুধু মাথার ওজনই বহন করতে হয় (১০-১২ পাউন্ড)। কিন্তু মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে থাকলে ঘাড়ের পেশিকে বাড়তি ওজন বহন করতে হয়। যেমন ১৫ ডিগ্রি সামনে ঝোঁকার জন্য ২৭ পাউন্ড, ৩০ ডিগ্রির জন্য ৪০ পাউন্ড, খুব বেশি ঝুঁকলে, ৬০ ডিগ্রির জন্য ৬০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন বহন করতে হবে। এই অতিরিক্ত ওজন বহনের জন্য ঘাড় ও কাঁধের পেশি ও স্নায়ু ছিঁড়ে যাওয়া এমনকি ডিস্ক পর্যন্ত সরে যেতে পারে।

যেসব সমস্যা হতে পারে

■ তীব্র ঘাড় ও কাঁধের ব্যথা। 

■ ঘাড় ও কাঁধের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া 

■ মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা। 

■ ঘাড় থেকে ব্যথা হাতের দিকে যাওয়া। 

■ হাত ও আঙুল অবশ ও ভারী অনুভূত হওয়া। 

■ মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত রোগ। 

■ অল্প বয়সে পিঠব্যথা, কোমরব্যথা। 

■ মেরুদণ্ডের ডিস্ক সরে যাওয়া। 

■ মাংসপেশি ও নার্ভ ছিঁড়ে যাওয়া। 

■ মেরুদণ্ডের আকৃতির পরিবর্তন। 

করণীয়

■ মোবাইল ফোন ও অন্যান্য গ্যাজেট যতটুকু সম্ভব চোখের দৃষ্টিশক্তি বরাবর রাখা উচিত। 

■ মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত, প্রয়োজনে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর বিরতি নেওয়া ও চোখের কিছু ব্যায়াম করা। 

■ সোজা হয়ে সঠিক অবস্থানে বসে ঘাড় ও মাথা সামনের দিকে না ঝুঁকে কাজ করা। 

■ দীর্ঘক্ষণ একই ধরনের অবস্থানে না থাকা। প্রয়োজনে প্রতি ২০-৩০ মিনিট পরপর একটু হাঁটুন ও ঘাড়ের ব্যায়াম করুন। 

কিছু ব্যায়াম

ক) ঘাড় ডানে, বাঁয়ে, সামনে, পেছনে টান টান করে ধরে রাখুন ও ছাড়ুন। প্রতি ঘণ্টায় ১০-১৫ বার। 

খ) ঘাড় সোজা করে থুতনি টান টান করে সামনে আনুন, ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। আবার পেছনে আনুন। এটিও ঘণ্টায় ১০-১৫ বার। 

গ) সোজা হয়ে বসে কাঁধ দুটো সামনে–পেছনে টান টান করে ধরে রাখুন। প্রতি ঘণ্টায় ১০-১৫ বার। 

ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি হলে বিভিন্ন ধরনের ডিপ ট্রান্সভার্স ফ্রিকশন ম্যাসাজ, স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ জয়েন্ট মবিলাইজেশন, হিট থেরাপি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, ড্রাই নিডলিং ইত্যাদির মাধ্যমে দু-চার সপ্তাহের মধ্যে টেক্সট নেক থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।

লেখক: ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Wednesday, February 5, 2020

করোনার ঝুঁকি এড়াতে ভ্রমণে সতর্কতা


চীন ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই ভাইরাসের সংক্রমণকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। বছরের এই সময়ে অনেকেই বেড়াতে বের হন। ব্যবসা ও পড়াশোনার কাজেও অনেককে দেশের বাইরে যেতে হয়। অনেকে আকাশ পরিবহনে ও বিমানবন্দরে চাকরি করেন। কাজেই করোনাভাইরাস নিয়ে এমন ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের উদ্বেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে সহজেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানো যায়।

• প্রথম কথা হলো, যত দিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসে, তত দিন চীন, বিশেষ করে দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহর ভ্রমণ না করাই ভালো।

• বাইরে যেকোনো জায়গায় রেলিং, দরজার নব, গেট, হাতল, কম্পিউটারের মাউস, টাকা, পাসপোর্ট ইত্যাদি স্পর্শ করার পরপরই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে সব জায়গায় সাবান-পানি পাওয়া যায় না। তাই ব্যাগে বা পকেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন। চোখ, নাক ও মুখে হাত বা আঙুল লাগানো থেকে বিরত থাকুন।

• জ্বর-কাশি থাকলে ভ্রমণ বাতিলের চেষ্টা করুন। ভ্রমণরত অবস্থায় এই দুই উপসর্গের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। চীন বা অন্য আক্রান্ত এলাকায় সম্প্রতি সফর করে থাকলে তা চিকিৎসককে জানান।

• যেকোনো জ্বর-কাশির রোগী থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে বিমানবন্দরের কর্মীদের মাস্ক ব্যবহার করা এখন অপরিহার্য।

• হাঁচি-কাশি এলে কনুইয়ের ভাঁজে নাক, মুখ গুঁজে দিন। টিস্যু পেপার ব্যবহার করে সঙ্গে সঙ্গে তা নিরাপদ জায়গায় বা বিনে ফেলতে হবে।

• মাস্ক ব্যবহার করলে খেয়াল রাখতে হবে যেন নাক-মুখ ঢাকা থাকে। একবার ব্যবহার্য মাস্ক নিরাপদ জায়গায় ফেলে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।

• খাবার ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে।

• যেখানে-সেখানে থুতু ফেলা যাবে না।

• পশুপাখি সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ নিরাপদ নয়। পশুপাখির খামারে যেতে হলে সুরক্ষামূলক গ্লাভস, মাস্ক ও গাউন পরতে হবে।

• হোটেলে খাবার টেবিল, ট্রে, ওয়াশ রুম পরিষ্কার ও পরিশোধিত কি না, তা আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। বেয়ারাকে হাত পরিষ্কার করে পরিবেশন করতে বলুন।

• সারিতে দাঁড়াতে হলে নিজের সুরক্ষার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

• ভ্রমণের পর ১৪ দিন পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় লোকসমাগমে না যাওয়াই ভালো।

অধ্যাপক খাজা নাজিমুদ্দিন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

Monday, February 3, 2020

জিব ও মুখের ঘা অবহেলা নয়


অনেকে পানের সঙ্গে জর্দা খান, কেউ মুখে গুল নেন। অনেকে আবার তামাকপাতার সঙ্গে চুন মিশিয়ে গালে রাখেন। এসব ব্যবহারে জিবে ও মুখে ঘা হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে ক্যানসারের রূপ নিতে পারে। এসব অভ্যাসের সঙ্গে যাঁদের ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে, তাঁদের ঝুঁকি আরও বেশি।

যাঁদের ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, রিউমাটিক ডিজিজ ও পরিপাকতন্ত্রের রোগ রয়েছে এবং দীর্ঘদিন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, বিশেষ করে স্টেরয়েড গ্রহণ করছেন, যাঁরা কৃত্রিম দাঁত ব্যবহার করেন, তাঁদেরও মুখে ঘায়ের ঝুঁকি রয়েছে। কাজেই মুখের ভেতর যেকোনো ধরনের ঘা বা রং পরিবর্তন হওয়ামাত্র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে খাবার খাওয়ার সময় মুখের ভেতর জ্বালা বা ব্যথা করে কি না। এ ছাড়া জিব ফেটে গেলে বা জিভের রং পরিবর্তন হলে, মুখের ভেতরের দিকে, মাড়িতে, গালের ভেতরের অংশে ঘা হলে অবহেলা করা চলবে না। মুখের ভেতরে কোথাও দেবে যাওয়া, সাদা রঙের ক্ষতও ক্যানসারের পূর্বাবস্থা হতে পারে।

কাজেই ব্রাশ করার সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখের ভেতর ও গালের ভেতরটা ভালো করে খেয়াল করতে হবে। যেকোনো ঘা, তা ছত্রাকজনিত বা ওষুধজনিত কিংবা ভিটামিনের অভাব, যে কারণেই হোক না কেন অবহেলা না করে চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসার পরও দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ঘা স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শে বায়োপসি অথবা মাংসের টিস্যু পরীক্ষা করতে হবে।

অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী, দন্ত বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল

কানে ব্যথা ও হঠাৎ কানের পর্দা ফেটে যাওয়া


মানুষের শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর মধ্যে কান অন্যতম। অথচ কানের রোগ বিষয়ে আমরা খুব একটা সচেতন নই। সামান্য কারণেই কানে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। অসাবধান হলে সেসব রোগ খুবই গুরুতর হয়ে দেখা দিতে পারে মানুষের জন্য। আবার একটুখানি সচেতন হলেই এড়ানো যায় কানের অনেক রোগ। সচেতনতা আসলে রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক পদক্ষেপ।

কানে ব্যথা: কানের ডাক্তারদের কাছে আসা রোগীদের একটা বিশাল অংশ আসেন কানে ব্যথার সমস্যার জন্য। কানের ব্যথা ব্যাপারটাকে যতটা সামান্য মনে হয়, বাস্তবে তা ততটা সামান্য নয়। অনেক সময় রোগী বা রোগীর স্বজনদের দেওয়া তথ্য অপূর্ণ হওয়ায় বা পারিপার্শ্বিকতার কারণে চিকিৎসকের জন্য কানে ব্যথার আসল কারণ নির্ণয় করা কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

কানে ব্যথা সাধারণত কানের সমস্যার কারণে হতে পারে বলে আমাদের মনে হলেও, বাস্তবে কান ছাড়াও অন্যান্য অনেক কারণে কানে ব্যথা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কান পরীক্ষা করে দেখা যায় আক্রান্ত ব্যক্তির কান সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

সাধারণত আচমকা কানে ব্যথা শুরু হয় কানের ভেতরকার রাস্তায়—যাকে এক্সটার্নাল অডিটরি ক্যানাল বলা হয়। সেখানে যদি ব্রণের মতো হয় (ফারাংকুলোসিস) তাহলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। বিশেষ করে খাবার চিবানো বা হাই তোলার সময় ব্যথার তীব্রতা বাড়ে। তীব্র ব্যথা হওয়ার আরেকটি কারণ হলো মধ্যকর্ণের সংক্রমণ। অনেক সময় রোগী বলতে পারেন যে কানে প্রচণ্ড ব্যথা এবং ব্যথাটা দপ দপ করছে। খাবার বা পানি গেলার সময় ব্যথার তীব্রতা বাড়ে। এটা অনেক ক্ষেত্রে নিজ থেকে সেরে যায়। সে ক্ষেত্রে রোগী জানান যে তীব্র ব্যথা থাকার পর হঠাৎ ব্যথা কমেছে কিন্তু কান থেকে পানি পড়ছে। এ সমস্যায় ক্ষেত্র বিশেষে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। মধ্য কর্ণের সংক্রমণের কারণেও কানে ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া কানে আঘাত, চড়, আচমকা পুকুরে ঝাঁপ, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ, যেমন—বাজি, পটকার আওয়াজ, গাড়ির হর্ন ইত্যাদির কারণেও কানে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

দীর্ঘদিনের সংক্রমণ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তবে সেটার শুরু হয় ধীরে ধীরে। এ ব্যথা প্রচণ্ড হতে কিছুটা সময় নেয়। মধ্যকর্ণের ক্যানসারের ব্যথা শুরু হতেও সময় নেয়। মধ্যকর্ণের সংক্রমণের ব্যথা, কানের চামড়ার একজিমার সংক্রমণ, কানের জমে থাকা খৈল ইত্যাদির কারণে হওয়া ব্যথা খুব একটা তীব্র হয় না। তবে এগুলো থাকা অবস্থায় কানে পানি ঢুকলে তারপর ব্যথার তীব্রতা বাড়ে।

এ ছাড়া দাঁতের বিভিন্ন সমস্যার কারণেও কানে ব্যথা হতে পারে। যেমন—দাঁতের ক্ষয় (ক্যারিস), মাড়ির দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা, দাঁত খাঁজে খাঁজে না বসা ইত্যাদি। মুখের ভেতরকার নানারকম ঘা, মাড়ির সমস্যা, জিহ্বার ক্যানসার, টনসিলের সমস্যার কারণেও কানে ব্যথা হতে পারে। সবকিছু আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক থাকার পরও দীর্ঘমেয়াদি কানের ব্যথার আরেকটি কারণ হলো চোয়ালের হাড়ের সংযোগস্থলের সমস্যা।

কানের ব্যথা সব সময় কান থেকেই হবে, এমন কথা নেই। কানের সবকিছু স্বাভাবিক থাকার পরও কান ব্যথা হতে পারে। কানে ব্যথা নিয়ে তাই প্রাথমিকভাবে একজন জেনারেল প্র্যাক্টিশনারের কাছে যাওয়া নিরাপদ। তিনি দেখে-শুনে-বুঝে চিকিৎসা দিতে পারেন। অথবা তিনি রোগীর অবস্থা বুঝে তাঁকে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, ডেন্টাল সার্জন অথবা ওরাল-ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। এতে করে এদিক-ওদিক ঘুরে রোগীর অর্থ ও সময় নষ্ট কম হবে, সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে।

আচমকা কানের পর্দা ফেটে যাওয়া: শুধু জীবাণুদের দোষে নয়, অনেক সময় আমাদের পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে আচমকা কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। যেমন:
১. আচমকা চড়, আঘাত
২. বাজি-পটকা বা বোমার শব্দ, ঢাক-ঢোল, বাদ্য-বাজনা
৩. হঠাৎ পানিতে ঝাঁপ দেওয়া
৪. অদক্ষ হাতে কান পরিষ্কার করা
৫. বহুতল ভবনে লিফটে আরোহণ
৬. উড়োজাহাজ উড্ডয়ন বা অবতরণের সময়
৭. জোরে নাক ঝাড়া বা হাঁচি দেওয়া
৮. দুর্ঘটনাবশত মাথায় আঘাত লাগা
৯. কটন বাড, মুরগির পালক, চাবি, কলমের ঢাকনা ইত্যাদি দিয়ে কান খোঁচানো।

সাধারণত একজন চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষা না করানো পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যায় না ওপরের কোনো কারণে কানের পর্দা আসলেই ফেটেছে কি না। তবে কানের পর্দা ফেটে থাকলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দেয়:

১. কানে তীব্র ব্যথা
২. কান থেকে পরিষ্কার বা রক্ত মিশ্রিত পানি বের হওয়া
৩. কানে কম শোনা
৪. কানে শো শো বা মেশিন চলার মতো শব্দ
৫. মাথা ঘোরানো

চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে আক্রান্ত কানে পানি ঢোকানো যাবে না। সম্ভব হলে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে হবে। কান পরিষ্কার করার চেষ্টা না করা ভালো, কানে জমাট রক্ত থাকলে সেগুলোও নাড়াচাড়া না করা উচিত। প্রাথমিকভাবে কানে কোনো ধরনের ড্রপ দেওয়া যাবে না। কানের পর্দা ফাটার সঙ্গে সঙ্গে কোনো ড্রপ ব্যবহার করা হলে তা মধ্যকর্ণের ক্ষতি করে। তবে পর্দা ফাটার অনেক দিন পর চিকিৎসা করাতে এলে কানের ভেতর যদি সংক্রমণ পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক কানের ড্রপ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন। ফেটে যাওয়া পর্দা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজে নিজে ঠিক হয়ে যায়। তবে কেবল চিকিৎসায় ঠিক না হলে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

এ ধরনের সমস্যার জন্য জেনারেল ফিজিশিয়ানের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তার পরামর্শ অনুসারে অবশ্যই একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। নিজে থেকে কিছু করতে যাবেন না। তাতে আপনার নিজের ক্ষতি আরও বেশি হতে পারে।
সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি-১৮), বিসিএস (স্বাস্থ্য), ডিএলও ট্রেইনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।