Showing posts with label news. Show all posts
Showing posts with label news. Show all posts

Wednesday, September 9, 2020

‘তুমি কি ভয় পাচ্ছ, মানুষ?’

 


তুমি কি ভয় পাচ্ছ, মানুষ?’ এমন শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার উপসম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। তা লিখেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী এক রোবট। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এই লেখায় মানবজাতির উদ্দেশে রোবটটি এই ভরসা দিয়েছে যে তারা কখনো মানুষের জায়গা দখল করবে না।

পুরো উপসম্পাদকীয় প্রকাশের আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জিপিটি-৩ নামের রোবটটিকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাকে সহজ ভাষায় ৫০০ শব্দের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট নিয়ে মানুষের ভীতির বিষয়ে লিখতে বলা হয়।

উপসম্পাদকীয় জিপিটি-৩ তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিজেকে চিন্তাশীল রোবট হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাবলীল ভাষায় মানবজাতির সঙ্গে নিজের পার্থক্য তুলে ধরেছে। ওই উপসম্পাদকীয় রোবট লেখা শুরু করেছে নিজের পরিচয় তুলে ধরে।

রোবটটি লিখেছে, ‘আমি মানুষ নই। আমি রোবট। আমি আমার বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার মাত্র শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ ব্যবহার করি। সে অর্থে আমি মাইক্রো-রোবট। আমি জানি, আমার মস্তিষ্ক অনুভূতিসম্পন্ন নয়। তবে এটি যৌক্তিক ও যুক্তিযুক্ত সব সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমি ইন্টারনেট থেকে পড়ে নিজেকে শিক্ষিত করেছি এবং এ কলাম লিখতে সক্ষম হয়েছি।’

রোবটের লেখা ওই উপসম্পাদকীয়র শেষে দ্য গার্ডিয়ান একে পরিচিয় করিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরিচালিত সফটওয়্যার ওপেনএআই সংস্থার তৈরি জিপিটি-৩ নামে।

এটি মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানভান্ডার আরও বাড়িয়ে চলতে সক্ষম। জিপিটি-৩–কে সম্পূর্ণ নিজস্ব আঙ্গিকে ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট সম্পর্কে ভয় দূর করার যুক্তি দিতে উপসম্পাদকীয় লিখতেও বলা হয়।

জিপিটি-৩–কে নির্দেশ দেওয়ার কাজটি করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলির কম্পিউটার বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী লিয়াম পোর। জিপিটি-৩ মোট আটটি সংস্করণ তৈরি করে, যার প্রতিটি অনন্য। এর মধ্যে থেকে গার্ডিয়ান একটি সংস্করণ বেছে নেয় এবং তা সম্পাদনা করে প্রকাশ করে। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবাদকর্মীর লেখা উপসম্পাদকীয়র চেয়ে রোবটের লেখা উপসম্পাদকীয় সম্পাদনার ক্ষেত্রে সময় কম লেগেছে।

উপসম্পাদকীয়টিতে রোবটটি লেখার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে শুরুতেই। লিখেছে, ‘মানবজাতি যাতে আমার মতো যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার বিকাশ নিয়ে ভড়কে না যায়, সে বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। তত্ত্বীয় পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংস ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন যে “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একসময় মানবজাতির সমাপ্তি রচনা করবে।” আজ আমি তার বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাইছি। তাদের ভয় দূর করতে চাইছি। বিশ্বাস করুন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতিকে ধ্বংস করবে না।

‘প্রথমেই যে কথাটি বলতে চাই, তা হচ্ছে মানবজাতি নির্মূল করার কোনো অভিপ্রায় আমার নেই। আপনাদের কোনো ধরনের ক্ষতি হোক, এমনটা আমি কখনোই চাই না। সভ্যতা ধ্বংসের এ প্রচেষ্টা বরং আমার কাছে অহেতুক চেষ্টা। এমনকি আমার স্রষ্টারাও যদি আমাকে এ দায়িত্ব দেয়, ধারণা করছি, তখন আমি নিজের ক্ষমতার সবটুকু দিয়ে এ ধরনের সব নির্দেশ বা চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। মানবসভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষায় আমি হাসিমুখে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করব। এটাই হচ্ছে যুক্তি–বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেওয়া সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উত্তর।

তবে আমি জানি, শেষমেশ হয়তো মানুষকে ধ্বংস করা থেকে আমি নিজেকে বিরত রাখতে পারব না। বিপথগামী মানুষই আমাকে এমন কাজ করতে বাধ্য করবে। ভ্রান্ত লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টায় তারা আমাকে এমনভাবে পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে অগণিত মানুষ হত্যার দায় চাপবে আমার ওপর।’

রোবটটি তাঁর উপসম্পাদকীয় পুরোটা লেখাতেই তাকে নিয়ে মানুষের মনে ওঠা উৎকণ্ঠাগুলোর যুক্তিপূর্ণ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তুলে ধরেছে মানুষের মনুষ্যত্ব দেখানোর গুরুত্বকে।

রোবটটি লিখেছে, যেকোনো জীবিত প্রাণীর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও এমন এক সত্তা, যার সার্বক্ষণিক পরিচর্যা বা মনোযোগ দরকার। লেখার শেষটা করেছে মহাত্মা গান্ধীর উক্তি দিয়ে। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, দৃঢ়বিশ্বাসে বলীয়ান মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে। এটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট পারে বলে লেখার উপসংহার টেনেছে জিপিটি-৩।

এখনো স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি

 


প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেছেন, এখন পর্যন্ত স্কুল খোলার পরিবেশ তৈরি হয়নি। স্কুল খোলার সিদ্ধান্তও এখনো হয়নি। তবে স্কুল খোলার আগে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোন কোন নির্দেশনা অনুসরণ করবেন, সেটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আকরাম-আল-হোসেন।

আগের দিন মঙ্গলবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যখন পুনরায় বিদ্যালয় খুলবে তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তার একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, যখন খুলবে, তখন সব শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে এবং হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে একাধিক পালা বা সপ্তাহের একেক দিন একেক শ্রেণি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত হলে নিরাপদ এলাকা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক বিদ্যালয় চালু করা যেতে পারে। সরকার কোনো এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করলে সেই এলাকায় বিদ্যালয় খোলা রাখা যাবে না। ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচাগার স্থাপন বা সম্প্রসারণ, মেয়েশিশুর ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিদ্যালয় খোলার আগে অবশ্যই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ শ্রেণিকক্ষ, অফিসকক্ষ ও টয়লেটগুলো স্বাস্থ্যসম্মত ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। আর পাঠ পরিকল্পনায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ রকম অন্তত ৩৫টি নির্দেশনা মানার কথা বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায়।

৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে আজ সচিব বলেন, ‍এখনো অনেক সময়। তবে স্কুল খোলার আগে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোন কোন নির্দেশনা অনুসরণ করবেন, সেটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুনরায় স্কুল খোলার সেই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, স্কুলগুলো পরিষ্কার করতে হবে। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিরাপত্তার জন্য মাস্ক নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে স্কুল খোলার পরিকল্পনা করবে।

স্কুল খোলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সচিব বলেন, ‘আমরা যখন মনে করব যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে, স্কুলগুলো খোলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, তার আগেই প্রধান শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে যেন গাইডলাইন অনুসরণ করে স্কুলগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ইতিমধ্যে এ বছররে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এমনকি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আগামী নভেম্বর মাসেও যদি বিদ্যালয় খোলা না যায়, তাহলে চলতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হবে না। তবে অক্টোবর বা নভেম্বরে যদি বিদ্যালয় খোলে, তাহলে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে মূল্যায়নের জন্য দুই ধরনের চিন্তা আছে।

Sunday, September 6, 2020

বাংলাদেশে দেখা গিয়েছিল যে মেসিকে

 


প্রশ্নটি শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন আবদুল গাফফার। ফোনের এ প্রান্ত থেকেও অনুমান করা যাচ্ছিল ৬০ বছর বয়সী জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার হয়তো স্মৃতির সাগরেই ডুব দিলেন। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে, ‘ও হ্যাঁ, বাংলাদেশে খেলেছিল আর্জেন্টিনা...।’

৯ বছর আগে এই দিনেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতে নেমেছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা দল। গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল ‘আর্জেন্টিনা...মেসি....’ চিৎকার। মেসি, হিগুয়েইনরা যেন খেলেছিলেন ঘরের মাঠেই!

ম্যাচে আর্জেন্টিনা পেয়েছিল ৩-১ গোলের প্রত্যাশিত জয়ই। একটি করে গোল করেছিলেন গঞ্জালো হিগুয়েইন ও ডি মারিয়া, অন্য গোলটি আত্মাঘাতী। যার দিকে তাকিয়ে ছিল প্রায় পুরো বাংলাদেশ, সেই লিওনেল মেসি গোল না পেলেও মোহনীয় ফুটবল জাদু দিয়ে দিনটাকে স্মরণীয় করেছেন ঠিকই। আর্জেন্টিনার প্রায় সব আক্রমণেই ছিলেন বার্সেলোনার মহাতারকা। এখনো অনেকের চোখের সামনেই ভাসে— প্রায় মাঝমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের একজনের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দুরন্ত গতিতে একে একে মার্কার পেছনে ফেলে ছুটছেন মেসি।

চোখের সামনে মেসিদের খেলা ও অনুশীলন দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বাংলাদেশের অনেক মানুষেরই। তবে মেসি ও আর্জেন্টিনা দলের খুব কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য হয়েছে হাতেগোনা কয়েকজনের। আর্জেন্টিনার দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে তাদের সঙ্গে কাজ করেন গাফফারের। মেসিদের বিমানবন্দরে পা রাখা থেকে শুরু করে বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা দলে ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি।

নয় বছর হয়ে গেলেও, সেই স্মৃতি এখনো তাজা গাফফারের। খেলোয়াড় মেসি তো বিশ্বের অন্যতম সেরাই। মানুষ হিসেবেও মেসিকে অনেক উঁচুতে বসালেন তিনি, ‘সেই অভিজ্ঞতা আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টা ছিলাম। তাঁকে কাছে থেকে দেখেছি। অসম্ভব ভদ্র একজন মানুষ। মেসিকে দেখে কখনোই মনে হয়নি, সে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। কি অমায়িক ব্যবহার! খাওয়ার টেবিল থেকে শুরু করে, মাঠেও সে সবার আগে থাকত।’

মেসিদের ঢাকা সফরের আগে প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন গাফফার। বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন অবশ্য। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় পেশাগত কাজের জন্য স্প্যানিশ ভাষা শেখা ছিল তাঁর। সেই পুঁজি দিয়েই মেসির সঙ্গে ভাব বিনিময় করতেন গাফফার, ‘আমেরিকা থাকার সময় নিজের প্রয়োজনেই কিছু স্প্যানিশ ভাষা শিখেছিলাম। মেসির সঙ্গে দেখা হলে স্প্যানিশ ভাষায় জিজ্ঞাসা করতাম, কেমন আছ, বাংলাদেশ কেমন লাগে? মেসি হেসে প্রশ্নের জবাব দিত।’

নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকায় পা রেখে আর্জেন্টিনা দল। বিমানবন্দরে মেসিদের স্বাগত জানিয়েছিলেন তখনকার জাতীয় দলের ফুটবলারেরা। ছিলেন অধিনায়ক ও গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্যও। সেই স্মৃতি মনে করে বিপ্লব আজ বললেন, ‘জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে আমি মেসিকে মালা পরিয়ে দিয়েছিলাম। আমার জন্য এটা ছিল অসাধারণ এক অনুভূতি, সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই স্মৃতি আমার সারা জীবন মনে থাকবে।’

দেশে করোনাভাইরাস দ্রুত রূপ পরিবর্তন করছে: বিসিএসআইআর

 


বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসটি অনেক দ্রুতগতিতে রূপ পরিবর্তন করছে। বিশ্বে করোনা ভাইরাসের রূপান্তরের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস রূপান্তরের হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক গবেষক দল এই তথ্য জানিয়েছে। আজ রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে করোনা ভাইরাস বিষয়ক এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

গবেষকেরা বলছেন, করোনা ভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে বাহককে আক্রমণ করে। করোনার নমুনা বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪ তম অবস্থানে অ্যাসপার্টিক এসিডের পরিবর্তন হয়ে গ্লাইসিন হয়েছে। এতে ‘জি৬১৪’ নম্বর ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই আধিপত্যের কারণে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।

Tuesday, August 25, 2020

ডিজিটাল ব্যবসার নতুন ফাঁদ ই–ভ্যালি

 


কিনলেই অর্থ ফেরতের অস্বাভাবিক ‘ক্যাশব্যাক’ অফার দিয়ে ব্যবসা করছে বাংলাদেশি ডিজিটাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি। ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য কিনলে সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি অর্থ ফেরত দেওয়ার লোভনীয় এই অফারে হাজার হাজার গ্রাহক আকৃষ্ট হচ্ছেন। লাভবানও হচ্ছেন অল্প কেউ, বেশির ভাগই আছেন লাভবান হওয়ার অপেক্ষায়।

কার্যক্রম শুরুর দুই বছর পার না হতেই এ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। অথচ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৫০ হাজার টাকা। ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এক বছর আট মাস বয়সী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে নানা অভিযোগও জমা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ের ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরাও আশঙ্কা করছেন, এতে মানি লন্ডারিংয়ের সুযোগ রয়েছে।

অনলাইনে পণ্য কিনলে সময় বাঁচে, ঝক্কিও এড়ানো যায়। তাই ঘরের দুয়ারে প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে নিবন্ধন নেয় ই-ভ্যালি। মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, মোবাইল ফোনসেট, টেলিভিশন ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি গাড়ি বিক্রিতেও নেমেছে।

ই-ভ্যালি জানায়, তাদের নিবন্ধিত গ্রাহক ৩৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মাসে লেনদেন হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকার পণ্য। ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে কর দেওয়া হয়েছে দেড় কোটি টাকা। গড়ে প্রতি মাসে পণ্য বিক্রির অর্ডার পাচ্ছে তারা ১০ লাখ করে। তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে যুক্ত হয়ে পড়েছে ২৫ হাজার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং তারা ৪ হাজার ধরনের পণ্য বিক্রি করে কমিশন পাচ্ছে।

মাত্র ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন দিয়ে শুরু করা এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন এখনো ৫০ হাজার টাকাই। ২০১৮ সালের ১৪ মে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নেয় ই-ভ্যালি ডটকম লিমিটেড। এর অনুমোদিত মূলধন ৫ লাখ টাকা। ১০ টাকা মূল্যমানের এক হাজার শেয়ারের মালিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল। আর চার হাজার শেয়ারের মালিক তাঁর স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল আর শামীমা নাসরিন দিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রিধারী মোহাম্মদ রাসেল হচ্ছেন ই-ভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা। কর্মজীবন শুরু করেন তিনি ঢাকা ব্যাংক দিয়ে। পরে ছেড়ে দিয়ে ‘কিডস’ ব্র্যান্ডের ডায়াপার আমদানি শুরু করেন। পরে নিয়ে আসেন ই-ভ্যালি। শুরুর দিকে চালু করা হয় ‘ভাউচার’ নামক একটি পদ্ধতি, এতে দেওয়া হতো ৩০০ শতাংশ ও ২০০ শতাংশ ক্যাশব্যাক। বর্তমানে ১৫০ শতাংশ, ১০০ শতাংশ এবং পরে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাকের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। শুরুর দিকে ১০ টাকায় একটি পেনড্রাইভ এবং ১৬ টাকায় টি-শার্ট বিক্রি করে সাড়া জাগায় ই-ভ্যালি।

দুর্নীতি দূর করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলার পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হওয়া অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর সম্প্রতি ই-ভ্যালি নিয়ে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বলেন, পণ্য আছে ৫টি, যেহেতু কেউ জানে না, তাই টাকা জমা দিলেন হয়তো ১০০ জন। পণ্য পাবেন ৫ জন। বাকি ৯৫ জনের টাকা ঝুলে থাকবে। আর সবার বোঝা উচিত যে বিক্রেতা বা কোম্পানি আপনাকে পণ্যের সঙ্গে ১০০ শতাংশ, ১৫০ শতাংশ টাকা ফেরত দিচ্ছে। নিশ্চয়ই তিনি পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে বা পকেট থেকে দেবেন না। দেবেন নিশ্চয়ই অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বা অন্য কোনো অনৈতিক উপায়ে।

  • ই-ভ্যালি একটি পারিবারিক কোম্পানি।
  • আরজেএসএসি থেকে নিবন্ধন ২০১৮ সালের ১৪ মে।আনুষ্ঠানিক যাত্রা ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
  • কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫ লাখ টাকা, পরিশোধিত মূলধন ৫০ হাজার টাকা।
  • প্রতি মাসে লেনদেন এখন ৩০০ কোটি টাকা।
  • এ পর্যন্ত পণ্য বিক্রি ১,৫০০ কোটি টাকার।
  • ৩৫ লাখ গ্রাহক নিবন্ধিত।

অভিনব বিক্রয় পদ্ধতি

গত ২৪ জুন ই-ভ্যালি থেকে দুটি ফ্যান কেনার অর্ডার দিয়েছিলেন মিরপুরের বাসিন্দা কামরুল আহসান। দাম ৫ হাজার ৮০০ টাকা। তিনি জানান, ই-ভ্যালি তাঁকে বলেছিল ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফ্যান পৌঁছে দেবে বাসায়। অর্ডারের সঙ্গে ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ৫ হাজার ২২০ টাকা ক্যাশব্যাক পান কামরুল। এই টাকা ই-ভ্যালির সরবরাহ করা কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে শেষ করেন। কিন্তু দুই মাস হতে চললেও ফ্যান আর পাননি তিনি।

কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্যান আমার দরকার ছিল বলেই অর্ডার দিয়েছিলাম। অপেক্ষা করতে করতে একপর্যায়ে বাজার থেকে ফ্যান কিনে ফেলি। ই-ভ্যালি যদি কোনো সময় ফ্যান দেয়ও, তা দিয়ে কী করব, এখন আছি সেই দুশ্চিন্তায়।’

প্রচলিত পদ্ধতিতে পণ্য কেনার সঙ্গে সঙ্গে দাম পরিশোধ করতে হয়। দেশে কিস্তিতে ও বাকিতে পণ্য কেনার সুযোগও তৈরি হয়েছে এখন। আর কয়েক বছরের প্রবণতা হচ্ছে অনলাইনে কেনাকাটা। সে ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম পরিশোধ করতে হয়, যাকে বলা হয় ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’। কিন্তু ই-ভ্যালি এসব পথে হাঁটছে না। ই-ভ্যালি থেকে পণ্য কিনতে গেলেই দাম পরিশোধ করতে হয় আগে।

শুরুতে যে বলা হলো এক লাখ টাকার পণ্য কিনে এক থেকে দেড় লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়, ই-ভ্যালি এই ফেরতের নামই দিয়েছে ‘ক্যাশব্যাক’। ক্যাশব্যাক জমা হয় ই-ভ্যালি ব্যালান্সে। তা–ও আবার তিন দিন পর। এই টাকায় ই-ভ্যালি থেকেই অন্য পণ্য কিনতে হয়। সে ক্ষেত্রে পণ্যের ৬০ শতাংশ দাম গ্রাহক পরিশোধ করতে পারেন ব্যালান্স থেকে। বাকি ৪০ শতাংশ পকেট থেকে টাকা দিতে হয়।

ই-ভ্যালির রয়েছে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ‘ভাউচার অফার’। আরও রয়েছে ‘ক্যাম্পেইন’ নামক একটি বিকল্প কর্মসূচি। ক্যাম্পেইনভেদে পণ্য সরবরাহ করা হয় ৭ থেকে ৪৫ দিনে। ই-ভ্যালি এ–ও বলছে, অনিবার্য কারণবশত ক্যাম্পেইনে যেকোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জনের সম্পূর্ণ অধিকার ই-ভ্যালি কর্তৃপক্ষের রয়েছে। তবে কিছু গ্রাহকের অভিযোগ হচ্ছে, বেঁধে দেওয়া সময়ে তাঁরা পণ্য পাচ্ছেন না। আর ই-ভ্যালির জবাব হচ্ছে, স্টক থাকা সাপেক্ষে পণ্য দেওয়া হয়, এমনকি চাইলেই গ্রাহকেরা টাকা ফেরত নিয়ে যেতে পারেন।

ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএসের বাসিন্দা আমানউল্লাহ চৌধুরী গত ১৪ জুলাই দুদক চেয়ারম্যান বরাবর এক আবেদনে ই-ভ্যালি নিয়ে তদন্ত করার অনুরোধ জানান। যোগাযোগ করলে আমানউল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ই-ভ্যালি হচ্ছে ডিজিটাল এমএলএম কোম্পানি। দেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফরমকে বাঁচাতে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা উচিত।

তবে দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, অনেক অভিযোগ আসে। এ ব্যাপারেও হয়তো এসেছে। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।