করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব সভ্যতা নতুন যুগে পা ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞগণ। এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিত্রাণ পেতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া, আড্ডাবাজিসহ সব ধরনের ঘোরাঘুরি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বদলে দিতে পারে মানুষের আটটি স্বভাব।
রাস্তাঘাটে আড্ডাবাজি
রাস্তাঘাটে আড্ডাবাজি পৃথিবীর যে কোনো দেশে এক বিরল জিনিস। আপনি যদি বিকেলে মিরপুর দুই নম্বরের লাভ রোড এলাকায় যান, দেখতে পাবেন রাস্তার ধারে ফুটপাথে বসে শতশত লোক আড্ডা দিচ্ছে! আড্ডার কয়েক হাত দূর দিয়ে যখন-তখন চলে যাচ্ছে গাড়ি। ধুলোয় ভরে যাচ্ছে শ্বাস। তারপরও আড্ডাবাজিতে কারো কোনো অনীহা নেই। অথচ এই ধরনের আড্ডা স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপনের অন্যতম অন্তরায়।
শুধুমাত্র লাভ রোড নয়, ঢাকার অসংখ্য রাস্তাঘাটে এই ধরনের আড্ডা জমে ওঠে প্রতিদিন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আপাতত কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ফলে এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর আড্ডাও আপাতত বন্ধ। বাসায় বন্দি লোকজন নিশ্চয় এটা বুঝতে পারছে যে, এই ধরনের আড্ডা করোনা ভাইরাস বা এই প্রকৃতির ভাইরাস ছড়াতে ভূমিকা রাখে। করোনা ভাইরাসের ভয় দূর হয়ে গেলেও এই আড্ডাবাজি আর নাও জমতে পারে।
দেখা হলেই হাত বাড়িয়ে দেওয়া, কোলাকুলি করা
বন্ধুর সাথে তো বটেই, নতুন কারো সাথে পরিচিত হলেই মানুষ আগে হ্যান্ডশেক করে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, করোনা ভাইরাস যেহেতু মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, সেহেতু হ্যান্ডশেক করা বন্ধ করতে হবে। কিছুদিন হ্যান্ডশেক করা বন্ধ রাখলে মানুষ ভুলে যেতে পারে এই চিরায়ত অভ্যাস। সেই সাথে কোলাকুলির সংস্কৃতিও সীমিত হয়ে আসতে পারে পৃথিবীতে।
হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি, কোনোটাতেই কম যান না বাংলাদেশিরা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আপাতত এই অনুশীলন বন্ধ। এই বন্ধ থাকা বদলে দিতে পারে মানুষের অভ্যাস। দেখা হলেই বন্ধুকে হাত বাড়িয়ে দেওয়া বা বুকে টেনে নেওয়ার রীতিটা মানুষ বহুদিন মিস করবে।
খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কথা বলা
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়েও নির্দিষ্ট একটি দূরত্ব মেপে চলতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল ডিসট্যান্স বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য একজন মানুষের অন্যজন থেকে অন্তত চার থেকে ছয় ফুট দূরে অবস্থান করা অবশ্যকর্তব্য।
বাংলাদেশিদের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে কথা বলার স্বভাব আছে। তাদেরকে এটা বোঝানো কঠিন যে, এই ঘনিষ্ঠতা সবার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। কারণ কেউ জানে না, কে কার শরীরে কোন ভাইরাস বহন করে চলছি। করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের মানুষের এই স্বভাব।
যেখানে-সেখানে হাঁচি কাশি দেওয়া, থুতু ফেলা
দুনিয়াতে ‘সফট স্কিল’ বলে যে একটা ব্যাপার আছে, বহু বাংলাদেশির তা জানা নেই। শুধু বাংলাদেশি কেনো, উপমহাদেশের বহু মানুষের কাছে এই ব্যাপারটা অজানা। বাংলাদশ, ভারত বা পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে লোকজনকে যেখানে সেখানে যেভাবে খুশি হাঁচি বা কাশি দিতে দেখা যায়। এই বদঅভ্যাসটি যে কতোটা ভয়ঙ্কর, এতো দিনে নিশ্চয় জানা হয়ে গেছে।
করোনা ভাইরাস পৃথিবীর অনেক ক্ষতি করে যাচ্ছে সত্য, কিন্তু অনেক উপকারও হয়তো করছে। আমরা জেনেছি, ইতোমধ্যে পৃথিবীর আবহাওয়ার মান বিস্ময়কর রকম ভালো হয়েছে। বহু জায়গা পাখপাখালি বা পশু পাখির সমাবেশ ঘটেছে, যেখানে বহুদিন তারা আসতে পারেনি মানুষের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে। এর পাশাপাশি মানুষের বহু বদঅভ্যাসও হয়তো মুছে দিবে করোনা ভাইরাস।
বাচ্চাদের আদর করতে চুমু দেওয়া, গাল টিপে দেওয়া
মানুষ মাত্রই সম্ভবত এই স্বভাব বহন করে চলে। আদুরে বাচ্চাদের দেখলেই লোকজন গাল টিপে দেয় অথবা চুমু দেয়। কিন্তু এটি অত্যন্ত বাজে একটি স্বভাব। বাচ্চাদের শরীর এমনিতে স্পর্শকাতর। তাদের শরীরে যে কোনো ভাইরাস অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
করোনা ভাইরাস এসে মানুষের অহেতুক ছুঁয়ে দেওয়ার স্বভাব বদলে দিতে পারে। বিশেষ করে পরিবারের বাইরে বাচ্চাদের যখন তখন গালে হাত দিয়ে আদর করার বাজে স্বভাবটি চলে যেতে পারে চিরতরে।
জোরে বা চিৎকার করে কথা বলা
উপমহাদেশের মানুষের অত্যান্ত বাজে স্বভাবগুলোর মধ্যে একটি হলো জোরে বা চিৎকার করে কথা বলা। আপনি যতো জোরে কথা বলবেন, আপনার মুখ থেকে ততো শ্বাসযন্ত্রের ফোঁটা বা ড্রপলেট বের হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, এতে ভাইরাস ছড়ায় সবচেয়ে বিপজ্জনকভাবে।
করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষে মানুষে সরাসরি যোগাযোগ এমনিতেই কমে গেছে। এ বিষয়টি বদলে দিতে পারে উপমহাদেশের মানুষের জোরে কথা বলার স্বভাব।
প্রয়োজন না থাকলে হাত না ধোয়ার স্বভাব
খাওয়ার আগে-পরে এবং টয়লেট ব্যবহারের পরে, এ দুটি সময় ছাড়া উপমহাদেশের বেশির ভাগ মানুষের হাত ধোয়ার স্বভাব নেই বললেই চলে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের এখন প্রতিটি মানুষকে বারবার হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ হাতের মাধ্যমেই করোনা ভাইরাস সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়।
করোনা ভাইরাসের এই সময়ে ঘরে বন্দি থেকে বার বার হাত ধোয়ার স্বভাব নিশ্চয় মানুষকে আরো বেশি সুস্থ্য-সবল থাকতে সহায়তা করবে।
রাস্তাঘাটের খাবার খাওয়া
উপমহাদেশের রাস্তায় রাস্তায় নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে ফুচকা, চটপটির মতো খাবারের স্বাস্থ্যের উপকারিতা তেমন না থাকলেও, এর স্বাদ দারুণ। ফলে মানুষ খায়ও প্রচুর। কিন্তু এ ধরনের খাবার থেকে, ব্যবহৃত থালা-বাটি থেকে ছড়াতে পারে মারণ ভাইরাস।
করোনা ভাইরাসের সময়ে এই সব খাবারের দোকানগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ। মানুষও সচেতন হওয়া শুরু করেছে। সুতরাং করোনা ভাইরাসের কারণে রাস্তাঘাটের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার স্বভাবও চিরতরে বদলে যেতে পারে।
No comments:
Post a Comment