করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত ২৪ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। যে ছুটি আজ ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল। কিন্তু তার আগেই আবারো সরকারি ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ওই ছুটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ শনিবার পর্যন্ত গার্মেন্টস সেক্টরে ছুটি ঘোষণা করে বিকেএমইএ। সেই হিসাবে আজ কারখানায় উপস্থিত থাকার কথা শ্রমিকদের।
কিন্তু একই কারণে দেশে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। ফলে ঢাকায় আসার কোনো যানবাহন পাননি শ্রমিকরা। কিন্তু তাতে কী, কারখানায় তো হাজিরা দিতে হবে। তা না হলে যে চাকরি থাকবে না। আর চাকরি না থাকলে জীবন চলবে কীভাবে? তাই কোনো উপায় না পেয়ে পায়ে হেঁটেই ঢাকার পথে রওনা দেন শ্রমিকরা।
তারা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়তো কেটে যাবে অল্পদিন পর। কিন্তু চাকরি হারালে তো আর পাওয়া যাবে না। চাকরি গেলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। তাই যেভাবেই হোক ঢাকায় পৌঁছতে হবে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা এবং আজ শনিবার সকালে ময়মনসিংহ ব্রিজের বাসস্ট্যান্ড এবং গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আশপাশের এলাকায় এমনই শত শত শ্রমিককে পায়ে হেঁটে ঢাকায় আসতে দেখা যায়। প্রথমে বাড়ি থেকে বের হয়ে মফস্বল এলাকায় রিকশা-ভ্যান, সিএনজি বা অটোরিকশায় তারা মহাসড়কে চলে আসেন। এর পর মহাসড়কের বিস্তৃত পথ ধরে হাঁটতে থাকেন ঢাকার দিকে। কেউ কেউ ভাগ্যক্রমে দুই একটা পেয়ে তাতে উঠে যান।
কথা হয় গার্মেন্টস কর্মী রাকিব হাসানের সঙ্গে। ২৮ বছরের এই যুবক বলেন, গার্মেন্টসে কাজ করেই তাদের পরিবারের খাবার জোটে। তাই কারখানায় হাজিরা না দিতে পারলে তার চাকরি থাকবে না। সুতরাং পায়ে হেঁটেই বলেন আর রিকশায় চড়ে, যেভাবেই হোক ঢাকায় যেতেই হবে।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে শনিবার ভোর ৬টায় গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দেন আফজাল হোসেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবকিছু বন্ধ। অথচ কারখানা খোলা। একদিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে চাকরি হারানোর ভয়। আসলে আমরা কী করব, কোথায় যাব?
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, যানবাহন বন্ধ থাকায় তাদেরই ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা থাকায় কিছুই করার নেই। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত যানবাহন বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান বলেন, কিছু গার্মেন্টস আজ থেকেই খোলা। তাই গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকায় যেতে হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। তবে আমরা যতটুকু পারছি তাদের সহযোগিতা করছি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আজ শনিবারের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত দেশে মোট ৭০ জনকে করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জন সুস্থ হয়েছেন। মারা গেছে ৮ জন।
এমনই পরিস্থিতিতে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গণপরিবন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আজ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment