Sunday, March 22, 2020

করোনা: প্রধানমন্ত্রীর কাছে নাগরিকদের খোলা চিঠি


দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ১০ দফা দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন অর্ধশতাধিকের বেশি সচেতন নাগরিক। তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাপকাঠিতে করোনা সংক্রমণের যে চারটি স্তরের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশ এর তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছে। তাই এখনি জরুরি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি ভয়ানক রুপ ধারণ করবে।

আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সামিনা লুৎফা গণমাধ্যমে এ চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, পুরো বিশ্বে ইতোমধ্যে ভাইরাসটিকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশ এখন মহামারির চারটি স্তরের মধ্যে তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ দেশের ভেতরেই এই রোগ কমিউনিটি সংক্রমণের পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মহামারির চতুর্থ স্তরটি হলো ব্যাপক সংক্রমণ ও মৃত্যু। যা ইতোমধ্যে চীন, ইরান, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝা যায়, করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো দীর্ঘ দুই মাস সময় পাওয়ার পরও সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

তাছাড়া এই মহাবিপদ মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই, সমন্বয় নেই, আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা নেই। চিকিৎসকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা, যথেষ্ট পরিমাণে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ভেন্টিলেটার নেই। ফলে সরকার আক্রান্ত সংখ্যার যে তথ্য দিচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। সবকিছু বিবেচনায় দেশের নাগরিকরা এই মুহূর্তে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ১০ দফা দাবিসমূহ-

১) আর সময় অপচয় না করে করোনা মহামারি রোধের পরিকল্পনা ও কার্যকর প্রণালী জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। লিফলেটে ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কতজন স্বাস্থ্যকর্মী আছেন এবং তাদের সুরক্ষার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম কবে নিশ্চিত করা যাবে, প্রতিটি হাসপাতালে কতটি বেড প্রস্তুত করা যাবে, কতটি ভেন্টিলেটর প্রস্তুত আছে, করোনা পরীক্ষার কতগুলো কিট আছে, ব্যবহারের মানসম্মত গ্লাভস, মাস্ক ইত্যাদির মজুত কতদিনের মধ্যে নিশ্চিত করা যাবে, এসব তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

২) অবিলম্বে দেশের সব জায়গায় বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার কিটসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ ও তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার জোগান করতে হবে। কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে দ্রুত খালাস ও কর মওকুফ করতে হবে।

৩) দেশের সব প্রবেশপথে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। দ্রুততার সহিত করোনা সংক্রমিত দেশ থেকে যেসব প্রবাসী ফিরে এসেছেন তাদের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে একটি খসড়া মানচিত্র তৈরি করতে হবে। যেন প্রয়োজন অনুযায়ী অঞ্চলভিত্তিক জরুরি ব্যবস্থা নেয়া যায়। দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।

৪) কোয়ারেন্টাইনের জন্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা নয়। বরং কোনো হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট কিংবা উপযোগী অন্যকোনো ভবন অস্থায়ীভাবে কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্দিষ্ট করতে হবে। বিভিন্ন স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম, খালি ভবনে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা যায়। একইসঙ্গে সিএমএইচ ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সমন্বিত পরিকল্পনায় যুক্ত করতে হবে।

৫) সকল স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপদ পোশাক ও প্রয়োজনীয় কিট সরবরাহ করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই (পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট) সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৬) গণপরিবহন ও সংক্রমণের সম্ভাব্য জায়গা নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কারাগারে জনচাপ দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, বিনা বিচারে আটক, মেয়াদ উত্তীর্ণদের মুক্তি দেয়াসহ সব ব্যবস্থা দ্রুততার সহিত করতে হবে। ছিন্নমূল ও ভাসমান মানুষদের জন্য নিরাপদ স্থানে আশ্রয় শিবির খুলতে হবে। বস্তিবাসীদের নিরাপত্তায় পরিচ্ছন্নতার উপকরণ সরবরাহ এবং মনিটরিং সেল স্থাপন করতে হবে। তাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৭) জরুরি কাজ ছাড়া পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের সবেতনে সাময়িক ছুটি দিতে হবে। ছুটিকালীন শ্রমিকরা যেন তাদের বেতন ঠিকমতো পায়, তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

৮) নিত্যপণ্য দ্রব্যের মজুত বন্ধ করে ন্যায্যমূল্যে সেগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্যে রেশনের ব্যবস্থা করা। এই সময়ের মধ্যে ঋণখেলাপি, চোরাই টাকার মালিকদের কোনো বাড়তি সুবিধা দেয়া যাবে না।

৯) বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্যকর্মী ও আলেমদের সাহায্যে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় স্থানীয় ক্লাব, সংগঠন ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে তাদের প্রচার ও রোগ প্রতিরোধের কাজে লাগানো।

১০) পাশাপাশি ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া মোকাবেলায় সরকারের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে। যেন বর্ষা আসার আগেই ডেঙ্গু মৃত্যু রোধের প্রস্তুতি শেষ করা যায়।

No comments:

Post a Comment