২৭ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো প্রায় অর্ধশতজন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে পারে। করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি সনাক্ত হওয়ার অন্তত আড়াই মাস আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশকে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলো। বাংলাদেশ সরকারের উচ্চমহল থেকে এখন বলা হচ্ছে, তাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। ফলে তড়িঘড়ি করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এক ধরনের শঙ্কা, আতঙ্ক ও ভয়। এর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য দেশে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। কাজ করছেন সরকারের আমলারাও। কাজ করতে গিয়ে নাগরিকদের সাথে তাদের এমন কিছু আচরণের খবর সামনে এসেছে, যা দেখে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আরো ভয়।
২৭ মার্চ রাতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায় যশোরের একজন সহকারী কমিশনার দুজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তাদের অপরাধ; তারা ফেস মাস্ক পরেননি!
সাইয়েমা হাসান নামের সহকারী কমিশনারের এ রকম আচরণের মাশুল দিতে হয়েছে এরই মধ্যে। যশোর জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে সাইয়েমা হাসানকে তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এর আগে, ছবিটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানান। কিন্তু এটিই একমাত্র ঘটনা নয় যেখানে নাগরিকদের অন্যায়ভাবে অপমান করা হয়েছে। এর আগে, সশস্ত্র বাহিনীর পোশাক পরা এক সদস্যকে দেখা যায় একজন নাগরিককে কান ধরে ওঠবস করাচ্ছেন, দুজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায় একজন রিকশাযাত্রী ও রিকশাচালককে কান ধরে ওঠবস করাচ্ছেন। অন্য একজন পুলিশ সদস্যের ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ে অনলাইনে। যেখানে দেখা যায় একজন নাগরিককে ফাঁকা রাস্তায় গড়িয়ে গড়িয়ে চলার শাস্তি দিচ্ছেন তিনি।
এর বাইরে, নাগরিকদের পেটানোর কিছু ভিডিওচিত্রও ভাইরাল হয়েছে। যে সবে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যরা নির্দেশনার বাইরে গিয়ে এমন কাজ করছেন, যার সমালোচনা করতে হয়েছে স্বয়ং পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. জাবেদ পাটোয়ারীকে।
জাবেদ পাটোয়ারী নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, পুলিশ সদস্যরা যাতে নাগরিকদের সাথে বিনয়ী আচরণ করেন। তিনি বলেন, “জনজীবন সচল রাখতে চিকিৎসা, ওষুধ, নিত্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং ও মোবাইল ফোনসহ আবশ্যক সব জরুরি সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও যানবাহনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করুন। দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ জনগণের সঙ্গে বিনয়ী, সহিষ্ণু ও পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন।”
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বহু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। জরুরি সেবায় নিয়োজিত নয়, এ রকম সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ফলে জনজীবন কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হচ্ছে। তারপরও সাধারণ মানুষ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ করতে এই পরিস্থিতি মেনে নিচ্ছেন।
No comments:
Post a Comment