Friday, April 12, 2019

অষ্টম শ্রেণী: গণিত: তৃতীয় অধ্যায়: পরিমাপ: লেকচার-০১



পরিমাপ

প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার ভোগ্যপণ্য ও অন্যান্য দ্রব্যের আকার, আকৃতি ও ধরনের ওপর এ পরিমাপ পদ্ধতি নির্ভর করে। দৈর্ঘ্য মাপার জন্য, ওজন পরিমাপ করার জন্য ও তরল পদার্থের আয়তন বের করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পরিমাপ পদ্ধতি রয়েছে। ক্ষেত্রফল ও ঘনফর নির্ণয়ের জন্য দৈর্ঘ্য পরিমাপ দ্বারা তৈরি পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।



পরিমাপের একক:
যেকোনে গণনায় বা পরিমাপে একক প্রয়োজন। গণনার জন্য একক হচ্ছে প্রথম স্বাভাবিক সংখ্যা ১। দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যকে ১ একক ধরা হয়। অনুরূপভাবে, ওজন পরিমাপের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওজনকে একক ধরা হয়, যাকে ওজনের একক বলে। আবার তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপের এককও অনুরূপভাবে বের করা যায়। ক্ষেত্রফল পরিমাপের ক্ষেত্রে ১ একক দৈর্ঘ্যের বাহুবিশিষ্ট একটি বর্গাকার ক্ষেত্রকে একক ধরা হয়। একে ১ বর্গ একক বলে। তদ্রুপ ১ একক দৈর্ঘ্যের বাহুবিশিষ্ট একটি ঘনকের ঘনফলকে ১ ঘন একক বলে।

মেট্রিক পদ্ধতিতে পরিমাপ:
বিভিন্ন দেশে পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পরিমাপ পদ্ধতি প্রচলিত থাকায় আন্তর্জাতিক ব্যবসাবাণিজ্যে ও আদানপ্রদানে অসুবিধা হয়। তাই ব্যবসা বাণিজ্যে ও আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে পরিমাপ করার জন্য আন্তর্জাতিক রীতি তথা মেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

মেট্রিক পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একককে মিটার বলে। দৈর্ঘ্য ছোট হলে সেন্টিমিটারে এবং বেশি হলে কিলোমিটারে প্রকাশ করা হয়। এ পদ্ধতিতে ওজনের একককে গ্রাম বলে। ওজন কম হলে গ্রামে এবং বেশি হলে কিলোগ্রামে (কে.জি)-এ প্রকাশ করা হয়।

মেট্রিক পদ্ধতিতে কোনো কিছুর পরিমাপ কম হলে মিলি, সেন্টি, ডেসি এবং বেশি হলে কিলো, হেক্টা ও ডেকো দ্বারা প্রকাশ করা হয়। মেট্রিক পদ্ধতিতে এককের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দশগুণোত্তর। মেট্রিক পদ্ধতিতে কোনো দৈর্ঘ্যকে নিম্নতর থেকে উচ্চতর অথবা উচ্চতর থেকে নিম্নতর এককে পরিবর্তিত করতে হলে, অঙ্কগুলো পাশাপাশি লিখে দশমিক বিন্দুটি প্রয়োজনমতো বামে বা ডানে সরাতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় মানের একটি সম্পর্ক হচ্ছে-
নিম্নতরের ক্ষেত্রে,
১/১০ ডেসি = .১ ডেসি (দশমাংশ)
১/১০০ সেন্টি = .০১ সেন্টি (শতাংশ)
১/১০০০ মিলি = .১ মিলি (সহস্রাংশ)

উচ্চতরের ক্ষেত্রে,
১০ ডেকা (দশক)
১০০ হেক্টো (শতক)
১০০০ কিলো (সহস্র)
গ্রিক ভাষায় ডেকা অর্থ ১০ গুণ, হেক্টো অর্থ ১০০ গুণ এবং কিলো অর্থ ১০০০ গুণ। ল্যাটিন ভাষায় ডেসি অর্থ দশমাংশ, সেন্টি অর্থ শতাংশ এবং মিলি অর্থ সহস্রাংশ।

একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে পারব-
যেমন, ৫ কি.মি. ৪ হে.মি. ৭ ডেকা.মি. ৬ মি. ৯ ডেসি. মি. ২ সে.মি ৩ মি.মি
= (৫০০০০০০ + ৪০০০০০ + ৭০০০০ + ৬০০০ + ৯০০ + ২০ + ৩) মি.মি
= ৫৪৭৬৯২৩ মি.মি.
= ৫৪৭৬৯২.৩ সে.মি
= ৫৪৭৬৯.২৩ ডেসি.মি.
= ৫৪৭৬.৯২৩ মিটার
= ৫৪৭.৬৯২৩ ডেকা. মি.
= ৫৪.৭৬৯২৩ হে.মি.
= ৫.৪৭৬৯২৩ কি.মি.

দৈর্ঘ্য পরিমাপের এককাবালি:
মেট্রিক পদ্ধতি:
১০ মিলিমিটার (মি.মি.) = ১ সেন্টিমিটার (সে.মি.)
১০ সেন্টিমিটার = ১ ডেসিমিটার (ডেসি.মি.)
১০ ডেসিমিটার = ১ মিটার (মি.)
১০ মিটার = ১ ডেকামিটার (ডেকা.মি.)
১০ ডেকামিটার = ১ হেক্টোমিটার (হে.মি.)
১০ হেক্টোমিটার = ১ কিলোমিটার (কি.মি.)

ব্রিটিশ পদ্ধতি:
১২ ইঞ্চি = ১ ফুট
৩ ফুট = ১ গজ
১৭৬০ গজ = ১ মাইল
৬০৮০ ফুট = ১ নটিকেল মাইল
২২০ গজ = ১ ফার্লং
৮ ফার্লং = ১ মাইল

মেট্রিক ও ব্রিটিশ পরিমাপের সম্পর্ক:
১ ইঞ্চি = ২.৫৪ ইঞ্চি (প্রায়)
১ গজ = ০.৯১৪৪ মি. (প্রায়)
১ মাইল = ১.৬১ কি.মি. (প্রায়)
১ মিটার = ৩৯.৩৭ ইঞ্চি (প্রায়)
১ কি.মি. = ০.৬২ মাইল (প্রায়)

উদাহরণ:
একজন দৌড়বিদ ৪০০ মিটারবিশিষ্ট গোলাকার ট্র্যাকে ২৪ চক্কর দৌড়ালে, সে কত দূরত্ব দৌড়াল?

সমাধান:
১ চক্কর দৌড়ালে ৪০০ মিটার হয়
সুতরাং ২৪ চক্কর দৌড়ালে দূরত্ব হবে (৪০০×২৪) = ৯৬০০ মিটার বা ৯ কি.মি. ৬০০ মিটার।

অতএব, দৌড়বিদ ৯ কি.মি. ৬০০ মিটার দৌড়াল।


No comments:

Post a Comment