হিমেল হাওয়ার দিনগুলোতে কমবেশি সবারই ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে; এমনকি তেলতেলে ত্বকও শুষ্ক হয়ে পড়ে। অনেকেরই ত্বক ফেটে যায় এ সময়। তবে যাঁদের ত্বক এমনিতেই একটু শুষ্ক ও রুক্ষ প্রকৃতির, অন্যদের চেয়ে তাঁদের সমস্যা একটু বেশিই হয় এ সময়। শুষ্ক ত্বকের জন্য এ সময় তাই দরকার বাড়তি যত্ন।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা খাতুন বলেন, শীতে কারও কারও ত্বক অতিরিক্ত ফেটে যায়। অতিরিক্ত ত্বক ফাটার সমস্যা হতে পারে জন্মগত কারণে। আবার কিছু রোগের কারণেও এমন হতে পারে। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পরও অতিরিক্ত ত্বক ফাটলে বুঝতে হবে, কোনো সমস্যার কারণে এমন হচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন ত্বক শুষ্ক হয়
● আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়। অল্প আর্দ্রতা, খুব সূর্যের আলো ও ঠান্ডা বাতাস এর কারণ।
● বংশগত বা জিনগত কারণে, ৪০ বছর বয়সের পর তেল ও ঘামগ্রন্থির সংখ্যা কমে যায়।
● পাতলা ত্বক এবং পেশাগত কাজের (যেমন কৃষিকাজ, নির্মাণকাজ কিংবা বাগানের কাজ) কারণেও এমন হয়।
● ক্লোরিনযুক্ত পানিতে অতিরিক্ত সাঁতার কাটলে বা গোসল করলে, বিশেষ করে গরম পানি বা ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করলে, ধূমপান, অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন গ্রহণ, অতিরিক্ত আকাশপথে ভ্রমণ।
ভিটামিন এ ও বি-এর অভাব হলে। জিংক ও ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলেও ত্বক শুষ্ক হয়।
● কিছু চর্মরোগ, কিছু ওষুধ সেবন, এসিতে অতিরিক্ত অবস্থান, থাইরয়েড সমস্যা, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদিও ত্বক শুষ্ক করে।
প্রতিকার কীভাবে
● ত্বক শুষ্ক হওয়ার প্রকৃত কারণ বের করুন।
● ত্বক যাতে শুষ্ক না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
● ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ময়েশ্চারাইজার লাগানোর আগে ত্বকের মরা কোষ পরিষ্কার করে নিন।
● ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন।
● প্রচুর পানি খাবেন। নরম সুতির আরামদায়ক পোশাক পরার চেষ্টা করবেন।
● অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
● গোসলের সময় আরাম অনুভব হলেও অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মুখ, মাথা ধোয়া থেকে বিরত থাকবেন। অতিরিক্ত গরম পানি মুখের ত্বকের ফলিকলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে, যা ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। গোসলের সময় পানিতে কয়েক ফোঁটা জোজোবা বা বাদাম তেল দিয়ে নিলে তা ত্বককে আর্দ্র ও মসৃণ করতে সহায়তা করে।
হাতের তালু ও পায়ের তলার যত্ন
● এ সময় ইউরিয়াযুক্ত, পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে হাতের তালু অনেকটা মসৃণ হয়ে আসে। শীতে অনেকের পায়ের তলা ফেটে যায়।
● সেলিসাইলিক অ্যাসিড অয়েন্টমেন্ট অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়মিত মাখতে পারেন।
মুখের যত্ন
ভালো ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। যাঁদের ব্রণের সমস্যা আছে, তাঁরা ক্রিমের সঙ্গে একটু পানি মিশিয়ে নিতে পারেন।
শীত আসছে বলে ভাববেন না যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
ঠোঁটের যত্ন
ঠান্ডা বাতাসে ঠোঁট বারবার ফেটে যায়। কখনো এতটাই ফেটে যায় যে চামড়া উঠে আসে ও রক্ত বের হয়। কখনোই জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়।
কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার একটি কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে ঠোঁটে হালকা করে তিন-চারবার চাপ দিন। তারপর ভেসলিন বা গ্লিসারিন পাতলা করে লাগিয়ে নিন। ঠোঁটের জন্য ভালো কোনো প্রসাধনী ব্যাগে রাখুন এবং দিনে তিন-চারবার লাগাতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন
l জলপাই তেল গোসলের কয়েক মিনিট আগে সারা শরীরে মেখে গোসল করুন।
l জলপাই তেল ১ টেবিল চামচ, ৫ টেবিল চামচ লবণ ও ১ টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিন। সেটি মুখে ও সারা শরীরে লাগাতে পারেন। এতে মরা কোষ দূর হবে। শুষ্ক জায়গায় মালিশ করে দু-তিন মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
l নারকেল তেল আক্রান্ত জায়গায় ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
l অ্যালোভেরা জেল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
l প্রচুর শাকসবজি খান। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খান। ত্বকের পরিচর্যা করুন।
● যাঁদের পুরোনো চর্মরোগ যেমন সোরিয়াসিস, একজিমা, ইকথায়সিস ইত্যাদি আছে, তাঁদের ত্বকের সমস্যা এই সময় বেড়ে যেতে পারে। তাই তাঁদের হতে হবে আরও সচেতন। প্রয়োজনে আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
No comments:
Post a Comment