Showing posts with label রূপচর্চা. Show all posts
Showing posts with label রূপচর্চা. Show all posts

Tuesday, January 21, 2020

শীতেও কোমল থাকুক ত্বক




ত্বকের যত্ন
এ সময় সবচেয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের। গুঁড়া দুধ, মধু, হলুদের গুঁড়া, ময়দার মতো জিনিস প্রায় সবার বাসায় থাকে। গুঁড়া দুধ, মধু ও এক চিমটি হলুদগুঁড়ার সঙ্গে ৫টি কাঠবাদামের গুঁড়া মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখের ত্বকে লাগাতে পারেন। এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলের জন্য সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করতে হবে। এটি শুষ্ক ত্বকের পাশাপাশি স্বাভাবিক ত্বককেও ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করবে। শুষ্ক ত্বকে প্রতিদিন গোসলের পর তেল ব্যবহার করা ভালো। হালকা মিঠে রোদে চুল শুকাতে শুকাতে ত্বকে বুলিয়ে নিতে পারেন কাঠবাদাম বা জলপাই তেলের পরশ। একইভাবে কাজের ফাঁকে গল্প করতে করতে একটি আলুর অর্ধেক কুড়ে নিন, সঙ্গে যোগ করুন কমলার খোসার গুঁড়া, ১ চা-চামচ ময়দা ও মধু। ত্বকে লাগিয়ে না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। যাদের তৈলাক্ত ত্বক সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন তারা প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

পায়ের যত্ন
এ সময় বাইরে থেকে এসে কিছুক্ষণ কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ ও গোলাপের পাপড়ি মিশিয়ে হাত–পা ভিজিয়ে রাখলে ত্বক পরিষ্কার হবে। সেই সঙ্গে হালকা আরামও পাবেন। পায়ের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে কাঠবাদামের তেল বা জলপাই তেলের সঙ্গে ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল মিশিয়ে নিয়ে হাত–পায়ে প্রতিদিন অন্তত একবার মালিশ করতে পারেন।

ঠোঁটের যত্ন
খুব সহজে আর্দ্রতা হারানোর কারণে শীতকালে ঠোঁটের একটু বেশিই যত্নের প্রয়োজন হয়। ঠোঁট ভালো রাখতে লেবু, মধু ও চিনির স্ক্রাব মিশিয়ে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। ২ বা ৩টি গোলাপের পাপড়ি, মধু, দুধ বা দুধের সর একসঙ্গে বেটে ঠোঁটে ১০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে ৩ থেকে ৪ দিন ব্যবহার করুন।

এ তো গেল বাহ্যিক রূপচর্চার কথা। এ ছাড়া শীতে ভিটামিন সি–জাতীয় ফলমূল যেমন—কমলা, পেয়ারা, আমলকী ইত্যাদি খাওয়া ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। সুস্থ ত্বকের জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। বেশি করে কাঠবাদাম, আখরোট, খেজুর, কিশমিশ খান। এ ছাড়া ত্বককে সুস্থ ও সজীব রাখতে প্রতিদিন অন্তত ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন।

Wednesday, January 15, 2020

চুল রাঙাতে


চুল পাকা নাকি অভিজ্ঞতার বাহ্যিক প্রকাশ। তবে কারও বয়স হলেও চুল দেখে বোঝা যায় না, আবার কারও কম বয়সেই চুল পেকে যায়। চুল না পাকলে তরুণ দেখায় বটে, কিন্তু যাঁদের চুল কম বয়সেই পাকে, তাঁরা খানিক ঝক্কিতেই পড়েন বৈকি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম বখতিয়ার কামাল জানালেন, কম বয়সে চুল পাকার সঠিক কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। নানা কারণে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, চুলে পাক ধরতে পারে বলে ধারণা করা হয়। বংশগত কারণেও হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার করা যায়নি।

জেনে নিন

শোভন মেকওভারের কসমেটোলজিস্ট শোভন সাহা জানালেন এ–সম্পর্কিত কিছু বিষয়ের কথা। পড়ালেখা, পারিবারিক সমস্যা, অল্প বয়সের আবেগময় সম্পর্ক, কম বয়সে অনেকের নানা চাপ থাকতে পারে (কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে)। মানসিক চাপে ঘুম কমে, সিগারেট বা মাদক সেবনের প্রবণতা থাকে। অবসন্নতায় রুচি কমতে পারে, খাবারে অনিয়মও হয়। ফলে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে। কিছু রোগের প্রভাবও থাকতে পারে।

প্রতিকার নেই?

পেকে যাওয়া চুল আর কালো হবে না। হার্বস আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি জানালেন চুল পাকার হার কমানোর কিছু উপায়—

● ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খান।

● মাথার ত্বক শুষ্ক হলে হালকা ধাঁচের শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এ ছাড়া সপ্তাহে ১ দিন ১টি পাকা কলা (ছোট আকৃতির), ১ টেবিল চামচ মধু আর ১টা গোটা পেঁয়াজ পেস্ট করে সরাসরি মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখতে পারেন ১ ঘণ্টা।

● ১ কাপ মেহেদিপাতার রসে ২ টেবিল চামচ মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পেস্ট করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১ ঘণ্টা, সপ্তাহে ২ দিন।

● ১ কাপ কাঁচা আমলকীর রসে ৬টি হরীতকী ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। সকালে পেস্ট করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন, এভাবে সপ্তাহে ২ দিন মাথায় ব্যবহার করুন।

পাকা চুলে কী হবে?

পাকা চুল ওঠালে আরও চুল উঠতে পারে। মেহেদি লাগাতে পারেন। এ ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে বার্গেন্ডি-জাতীয় রং আনার উপায় জানালেন আফরিন মৌসুমি—

১ কাপ তাজা মেহেদিপাতা বাটা ও ১ কাপ বিটের রস একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন। অন্য পাশে এক কাপ পানিতে ৩ চা–চামচ চাপাতা ফোটাতে হবে, ঘন হয়ে আধা কাপ পরিমাণমতো হলে এক টেবিল চামচ কফি দিন। এবার প্রথম মিশ্রণটি গরম থাকা অবস্থায় তাতে চা ও কফির এই মিশ্রণ ভালোভাবে মেশান। চুলে লাগিয়ে ধোয়ার আগে দুই-আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।

সবার জন্য

চুলে রাসায়নিক ব্যবহার না করাই ভালো, নিতান্ত করতে চাইলেও মানসম্মত উপাদানে (তবে মাথার ত্বকে নয় কখনোই)। যাঁরা চুলে রং, ব্লো-ড্রাই, স্ট্রেইটনিং প্রভৃতি করেন, তাঁরা প্রতিদিন তেল মালিশ করুন অবশ্যই। তেলে সামান্য কর্পূর মিশিয়ে নেওয়া ভালো।

প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে হালকা ধরনের শ্যাম্পু বেছে নিন। না হলে সাধারণ শ্যাম্পুর সঙ্গে সমপরিমাণ গোলাপজল মিশিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে ব্যবহার করুন।

মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলে বারবার শ্যাম্পু করার প্রবণতা থাকে। ফলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। যাঁদের মাথার ত্বক তৈলাক্ত, মাথা ঘামে বা মাথার ত্বকে ফুসকুড়ি হয়, তাঁরা শ্যাম্পুর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন (দুই টেবিল চামচ শ্যাম্পু নিলে তাতে মাঝারি আকৃতির লেবুর দুটি টুকরার রস মেশাতে হবে)।

নিয়ম না জেনে চুলে প্যাক লাগাবেন না।

Monday, January 13, 2020

রূপচর্চায় শঙ্খচূর্ণ



চেহারাটা যেমনই হোক, সামান্য যত্নে সেটি হয়ে ওঠে সতেজ, পরিপাটি, আকর্ষণীয়। কত মাধ্যমেই না রূপের চর্চা করা যায়! বড় শামুক বা শঙ্খ কেটে মেয়েদের হাতে পরার শাঁখা বানানো হয়। শাঁখা বানানোর সময় শাঁখারিদের হাত গলে ছড়িয়ে পড়ে শঙ্খের গুঁড়া। সেই সাদা ধবধবে চক পাউডারের মতো দেখতে গুঁড়াই হতে পারে রূপচর্চার অন্যতম অনুষঙ্গ। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় রূপচর্চার জন্য শঙ্খ প্রায় সব ত্বকেই দারুণভাবে মানিয়ে যায়। শঙ্খতে রয়েছে জিংক অক্সাইড, যেটি রোদ থেকে বাঁচায়। কালচে ছোপের হাত থেকে বাঁচাতেও এটি দারুণ কার্যকর। সব ধরনের ত্বকের জন্য হলেও ধরন অনুযায়ী প্যাক তৈরি ও প্রয়োগে ভিন্নতা থাকবে। জানালেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ইরফান উল্লাহ জানিয়েছেন, রূপচর্চার সামগ্রী হলেও যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল, তাঁেদর কিছুটা সাবধান থাকা ভালো শঙ্খগুঁড়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে। পাউডার–জাতীয় হলেও যেহেতু এই গুঁড়া শক্ত শামুকের খোল থেকে তৈরি, ত্বকে ব্যবহারের সময় জোরে ঘষাঘষি না করাই ভালো। সামান্য অসাবধানতায় ত্বক কেটে যেতে পারে। চিকন ছিদ্রের চালুনি দিয়ে চেলে নিলে কিছুটা নিরাপদ হতে পারে। নাজুক ত্বকের ক্ষেত্রে কখনো কখনো জ্বালাপোড়া, র‌্যাশ, ফুসকুড়ি হতে পারে। কারও কারও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ও প্রদাহ দেখা দিতে পারে, কিছু ক্ষেত্রে ত্বক ফুলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। এমন হলে শঙ্খচূর্ণ ব্যবহার বন্ধ করে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী শঙ্খচূর্ণ দিয়ে কীভাবে রূপচর্চা করা যায় জানালেন তারই সাতসতেরো। পাউডারের মতো তুলির সাহায্যে শঙ্খচূণ ব্যবহার করা যায়। আবার কখনো অন্য উপাদানের সঙ্গে যুক্ত করে প্যাক বানিয়ে লাগিয়ে রাখলেও ত্বকের জন্য উপকারী। ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্নভাবে শঙ্খগুঁড়া ব্যবহার করা যায়। বাতাস ঢুকবে না, এমন কৌটায় সংরক্ষণ করে ফ্রিজে রেখে দুই থেকে িতন দিন অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। গুণগত মানও থাকবে অটুট। পুরো শরীরে লাগানোর প্যাক তৈরি করে ডিপ ফ্রিজে রাখলে পরে আবার ব্যবহারের উপযোগী হবে। ত্বকের ধরন বুঝে নানাভাবে শঙ্খচূর্ণ ব্যবহার করা যায়, তারই কিছু পদ্ধতি রইল পাঠকদের জন্য।

শুষ্ক ত্বকের জন্য

শুষ্ক ত্বকে কালচে ছোপ পড়ে যায়। যাঁদের ত্বকে কালচে ছোপ হয়েই গেছে, এই প্যাক তাঁদের জন্য। মাত্র ২ সপ্তাহ নিয়মিত ব্যবহারে কালচে ছোপ হালকা করে ফেলতে প্যাকটির জুড়ি মেলা ভার। ১ টেবিল চামচ শঙ্খচূর্ণ, ২ চা-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, ৪-৫ ফোঁটা কাঠবাদামের তেল, ভিটামিন সি ট্যাবলেট বা ১টি সিভিট গুঁড়া ও সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য

যাঁদের ব্রণ ও ব্ল্যাক হেডসের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা ২ টেবিল চামচ তুলসী পাতার রস, ১ টেবিল চামচ শঙ্খের গুঁড়া মিশিয়ে নিন ভালোভাবে। এবার সামান্য বাদামি চিনি দিয়ে গুলে সারা মুখে লাগাতে হবে। ৫ মিনিট পর একটু ঘষে তুলে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকে সপ্তাহে ১ দিন ও ছোট দানা বা ব্রণযুক্ত ত্বকে সপ্তাহে প্রতিদিন প্যাকটি লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।

সব ধরনের ত্বকের জন্য

১ টেবিল চামচ শঙ্খগুঁড়া, লেবুর খোসাবাটা আধা চা-চামচ, ৩-৪ ফোঁটা গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগান। ৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রতিদিন ১ বার করে প্যাকটি লাগালে রোদের প্রভাবে কালচে ভাব দূর হয়ে যায়।

সারা শরীরে লাগানোর জন্য

১ কাপ শঙ্খগুঁড়ার সঙ্গে ১ কাপ মসুরের ডালের বেসন, ১টি ডিম ও লেবুর রস মিশিয়ে সারা শরীরে লাগিয়ে রাখতে হবে মিনিট দশেক। তারপর ছোট রুমাল বা টাওয়েল ভিজিয়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ১ দিন প্যাকটি লাগালেই যথেষ্ট। এই প্যাক লাগালে সাবান দেওয়ার দরকার হবে না। গলা, ঘাড়সহ শরীরের যেসব স্থানে কালচে ভাব হয়েছে সেটি তুলে ফেলবে নিয়মিত ব্যবহারে।

রোদ থেকে বাঁচতে

সমান পরিমাণ শঙ্খের গুঁড়া, কেওলিন পাউডার ও মুলতানি মাটির গুঁড়া ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। বাইরে যাওয়ার সময় নিয়মিত ব্যবহারে রোদে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচা যায়।


কোথায় পাওয়া যায়

নকলের ভিড়ে আসল শঙ্খচূর্ণ পাওয়ার সবচেয়ে সহজ, বড় ও বিশ্বস্ত জায়গা শাঁখারীবাজার। এখানে ১০০ টাকা কেজি দরে গুঁড়া বিক্রি করছে মা মনসা শঙ্খ শিল্পালয়। ২০ ও ৫০ টাকা দরে প্যাকেট আকারে বিক্রির ব্যবস্থাও রেখেছে তারা। এ ছাড়া জয় গুরু শঙ্খ ভান্ডার, বিধান শঙ্খ ভান্ডারসহ শাঁখা তৈরি করে, এমন সব দোকানেই মিলবে এটি। এ ছাড়া স্বামীবাগ লোকনাথ মন্দিরের পাশে জয় বাবা স্টোরেও মিলবে শঙ্খগুঁড়া, এমনটাই জানালেন সুমন ভৌমিক। তিনি জানালেন সত্যিকারের শঙ্খগুঁড়া চেনার দারুণ তথ্য। খাঁটি শঙ্খগুঁড়া ত্বকে লাগালে সামান্য গরম অনুভূত হয়, কিন্তু নকল গুঁড়াতে একেবারেই সেটা অনুভব করা যায় না।একই জায়গার লোকনাথ সামগ্রীতে সেটি পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন সুপারশপেও খুঁজলে মিলবে শাঁখের গুঁড়া।

Sunday, January 12, 2020

কমলার খোসায় ত্বকের যত্ন


কমলার পুষ্টিগুণ কে না জানে। শীতের সময়টায় সহজলভ্যও বটে। তাই শীতে কমলা কমবেশি সব বাড়িতেই খাওয়া হয়। বাড়িতে কমলা এনে খেয়ে তো ফেলবেনই, তবে খেয়ে সবটা ‘ফেলবেন’ না যেন। বিচিটা ফেলে দিলেও কাজে লাগান খোসাটুকু।

কমলার খোসায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, নানা খনিজ পদার্থ এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় তেল (এসেনশিয়াল ওয়েল)। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, ব্রণ, বলিরেখা ও বয়সের ছাপ কমাতে দারুণ কার্যকর কমলার খোসা। তবে কমলার খোসা ব্যবহার করতে হবে সঠিক নিয়মে। নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে (যেমন, ত্বকে ফুসকুড়ি), এমনটাই জানালেন হার্বস আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি।


জেনে নিন তাঁর পরামর্শ সংরক্ষণের নিয়ম

গ্রেটারের সাহায্যে কমলার খোসার ওপরের দিক থেকে কুরিয়ে নিন (আলুভাজি করার জন্য আলু যেভাবে করা হয়, তবে খোসার ভেতরের সাদা অংশ বাদে)। অথবা ভেতরের সাদা অংশ ফেলে কুচি করে নিন। প্রথম পদ্ধতিটিই ভালো। এরপর কাগজ বিছিয়ে এর ওপর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় (যে ঘরে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চলছে না, রান্নাঘরেও হতে পারে) দুই থেকে তিন দিন রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর নেড়েচেড়ে দিন। শেষ দিন ১০ মিনিটের জন্য রোদে দিন। কাচের বয়ামে রেখে দিতে পারেন সারা বছরের জন্য। নিয়ম না জেনে সংরক্ষণ করতে গেলে কার্যকারিতাও কমে আসে, এতে ত্বকে খারাপ প্রভাব পড়ার ঝুঁকিও বাড়ে।

ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী প্যাক

l মেছতা থাকলে এক টেবিল চামচ কমলার খোসা তিন টেবিল চামচ আলুর রসে ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর পেস্ট করে নিয়ে একটি ডিমের সাদা অংশ ও এক চা–চামচ কমলার রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। বিশেষত, হালকা মেছতা থাকলে প্রতিদিন এ প্যাক ব্যবহারে মেছতা আর গাঢ় হয় না।

l ব্রণের জন্য এক টেবিল চামচ কমলার খোসা, সমপরিমাণ পুদিনাপাতার রস ও শঙ্খ গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে পুরো মুখে ব্যবহার করুন একটানা ৭ দিন।

l বলিরেখা দূর করতে এক টেবিল চামচ কমলার খোসা পেস্ট ও এক টেবিল চামচ কমলার রস দিয়ে পেস্ট করুন। দুটি কাঠবাদাম যোগ করুন। পুরো মুখে দিন প্রতিদিন।

l রোজ বাইরে থেকে ফিরে আরেকটি প্যাক কাজে লাগাতে পারেন। এক টেবিল চামচ কমলার খোসা সমপরিমাণ রস (কমলার) দিয়ে পেস্ট করুন। সঙ্গে ভালোভাবে পেস্ট করা এক টেবিল চামচ পাকা কলা যোগ করুন। মিশ্রণে ভারসাম্য আনতে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন যোগ করতে হবে। বাইরের দূষণে নিষ্প্রাণ, অনুজ্জ্বল, নিস্তেজ হয়ে পড়া ত্বক সতেজ হয়ে উঠবে। চাইলে এটি প্রতিদিনই ব্যবহার করা যায়।

l ব্ল্যাকহেডস দূর করতে এক চা–চামচ কমলার খোসা পেস্ট (তাজা, সংরক্ষিত নয়) ও সমপরিমাণ মধু দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। শুধু ব্ল্যাকহেডসের স্থানে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে এলে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত গতিতে তুলে ফেলুন। সাত থেকে আট দিন একটানা ব্যবহার করুন।

অ্যারোমা টোনার যখন কমলার খোসা

স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে আধা লিটার মিনারেল ওয়াটার (ট্যাপের পানি নয়) ও ছয়টি কমলার কুচি করা খোসা (তাজা, সাদা অংশ বাদে, আগের নিয়মে) দিয়ে মৃদু আঁচে ঢেকে রাখুন। কমলা রঙের ছোঁয়া দেখা দিতে থাকবে, পানি কমতে থাকবে। মিশ্রণ ঘন হয়ে মোটামুটি ১৫০ মিলি পরিমাণে নেমে এলে নামাতে হবে। স্বচ্ছ ঢাকনা দিতে পারেন, অস্বচ্ছ ঢাকনা হলে এক থেকে দুইবার উঠিয়ে পানির পরিমাণ বুঝে নিন। ঠান্ডা হওয়ার পর যেকোনো বোতলে রেখে ব্যাগেও বহন করতে পারেন। সারা দিনে ক্লান্ত হয়ে পড়লে মুখ ধুয়ে এটি স্প্রে করে নিয়ে (স্প্রে করার বদলে এটি তুলার বলে ভিজিয়ে মুখ মুছে নিতে পারেন) ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। বরফের কিউব হিসেবে সারা বছর রেখে দিতে পারেন, যদি আনুপাতিক হারে পরিমাণ বাড়িয়ে থাকেন।

কনের চুল থাক ঠিকঠাক


বিয়ের সময় থাকে একটানা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান উপলক্ষে সাজাও হয় বেশ। চুলের সাজও থাকে বাহারি। তবে এই বাহারি সাজের সময়ই চুলের বাজে বারোটা। নানা ধরনের রাসায়নিকের ব্যবহার করা হয় চুল সাজানোর জন্য। মনের আনন্দে সাজতেই পারেন নতুন বউ। তবে মেকআপ তোলার যেমন কিছু নিয়ম থাকে, তেমনি চুলের সাজ খোলার সময়ও মানুন কিছু নিয়মকানুন। চুল নষ্ট হওয়ার ভয় কমে যাবে অনেকখানি। 

রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বললেন, ‘এই সময়টায় চুলের সুস্থতায় কুসুম গরম তেল মালিশের কোনো বিকল্প নেই। চুল থেকে রাসায়নিক পদার্থ তুলে ফেলতে কুসুম গরম তেল মালিশ করতে হবে। এ ছাড়া চটজলদি ব্যবহার করা যায়, এমন কিছু প্যাকও ব্যবহার করতে পারেন।’

অনুষ্ঠানের পর যা করবেন

● অনুষ্ঠানের পর বাসায় ফিরে স্বাভাবিকভাবে ধীরেসুস্থে চুল থেকে সাজের সরঞ্জাম খুলুন। একলা পেরে না উঠলে বাড়ির কারও সাহায্য নিন।

● সাজসরঞ্জাম সরিয়ে ফেলার পর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আস্তে আস্তে চুল আঁচড়াতে পারেন, যাতে চুল ছিঁড়ে না আসে। 

● এরপর কুসুম গরম তেল মালিশ করুন। পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন। 

অনুষ্ঠানের পর যা করবেন না

● চুলের সাজসরঞ্জাম খুলতে তাড়াহুড়া করবেন না। অযথা টানাটানি করবেন না। তাড়াহুড়ায় উল্টো জট বাঁধিয়ে ফেলতে পারেন। 

● চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার না করাই ভালো। 

পরের দিন সকালে 

অনুষ্ঠানের পরের দিন সকালে চুলে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এই সময় তেমন বাড়তি কিছু করার সুযোগ না-ও থাকতে পারে। তাই সহজ কোনো প্যাক বেছে নিতে পারেন—

● টক দই আর অ্যালোভেরার মিশ্রণ তৈরি করতে পারেন। 

● টক দই, পাকা কলা আর পাকা পেঁপে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। 

● যেকোনো একটি প্যাক লাগিয়ে নিতে পারেন শ্যাম্পু করার ১০-১৫ মিনিট আগে। চুল থাকবে সজীব। 

বিশেষ সচেতনতা

চুল ফুলিয়ে পেছন দিকে আঁচড়ে সেট করা হয়ে থাকলে তেল বা চিরুনি কোনোটাই ব্যবহার করবেন না। এ ক্ষেত্রে শুধু শ্যাম্পু আর কন্ডিশনারের সাহায্যে চুল ঠিক করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় রাতেই শ্যাম্পু করে ফেলতে পারলে। নিতান্ত না পারলে পরদিন সকালে করুন। প্যাক ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমে চুল পানি দিয়ে ধুয়ে এরপর প্যাক লাগান। সবশেষে শ্যাম্পু করুন আর কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। 

সুস্থতায় রোজ

বিয়েবাড়ির ব্যস্ততা কম নয়। সব ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা নিয়ে কনেও থাকেন চিন্তায়। মাঝে হয়তো নিজের কথাই ভুলে যান। তবে সবকিছুর মাঝেও সময় রাখুন নিজের জন্য। আপনাকে ঘিরেই তো উৎসব, এত আয়োজন। উৎসবের মধ্যমণিই যে আপনি। নানা দোলাচলের মাঝেও যত্ন নিন নিজের। ইচ্ছে করলে খুব কম সময়েই তা সম্ভব। সপ্তাহজুড়ে যদি অনুষ্ঠান থাকে, তাহলে প্রতিটি রাতেই চুলে কুসুম গরম তেল মালিশ করুন। পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন। সুস্থ চুলের জন্য এই অভ্যাসটা রাখুন, খুব বেশি সময় যাবে না।