জীবনাচরণ পদ্ধতির নানা ভুলে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন অনেক সমস্যা। তেমনই একটি সমস্যার নাম হচ্ছে টেক্সট নেক।
মেরুদণ্ড বা পিঠ কুঁজো করে মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘ সময়ের জন্য মোবাইল ফোন, ট্যাব, আইপ্যাড, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করার ফলে ঘাড় ও কাঁধের মাংসপেশিতে অতিরিক্ত টান লেগে ইনজুরি হওয়াকে টেক্সট নেক সিনড্রোম বলে। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে পাঁচ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ চালানোর ফলে প্রতি ১০ জনের ৭ জনই টেক্সট নেকে ভুগছেন।
আমরা যখন স্বাভাবিক অবস্থানে থাকি অর্থাৎ ঘাড় সোজা থাকে, তখন ঘাড়ের মাংসপেশিকে শুধু মাথার ওজনই বহন করতে হয় (১০-১২ পাউন্ড)। কিন্তু মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে থাকলে ঘাড়ের পেশিকে বাড়তি ওজন বহন করতে হয়। যেমন ১৫ ডিগ্রি সামনে ঝোঁকার জন্য ২৭ পাউন্ড, ৩০ ডিগ্রির জন্য ৪০ পাউন্ড, খুব বেশি ঝুঁকলে, ৬০ ডিগ্রির জন্য ৬০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন বহন করতে হবে। এই অতিরিক্ত ওজন বহনের জন্য ঘাড় ও কাঁধের পেশি ও স্নায়ু ছিঁড়ে যাওয়া এমনকি ডিস্ক পর্যন্ত সরে যেতে পারে।
যেসব সমস্যা হতে পারে
■ তীব্র ঘাড় ও কাঁধের ব্যথা।
■ ঘাড় ও কাঁধের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া
■ মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা।
■ ঘাড় থেকে ব্যথা হাতের দিকে যাওয়া।
■ হাত ও আঙুল অবশ ও ভারী অনুভূত হওয়া।
■ মেরুদণ্ডের ক্ষয়জনিত রোগ।
■ অল্প বয়সে পিঠব্যথা, কোমরব্যথা।
■ মেরুদণ্ডের ডিস্ক সরে যাওয়া।
■ মাংসপেশি ও নার্ভ ছিঁড়ে যাওয়া।
■ মেরুদণ্ডের আকৃতির পরিবর্তন।
করণীয়
■ মোবাইল ফোন ও অন্যান্য গ্যাজেট যতটুকু সম্ভব চোখের দৃষ্টিশক্তি বরাবর রাখা উচিত।
■ মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত, প্রয়োজনে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর বিরতি নেওয়া ও চোখের কিছু ব্যায়াম করা।
■ সোজা হয়ে সঠিক অবস্থানে বসে ঘাড় ও মাথা সামনের দিকে না ঝুঁকে কাজ করা।
■ দীর্ঘক্ষণ একই ধরনের অবস্থানে না থাকা। প্রয়োজনে প্রতি ২০-৩০ মিনিট পরপর একটু হাঁটুন ও ঘাড়ের ব্যায়াম করুন।
কিছু ব্যায়াম
ক) ঘাড় ডানে, বাঁয়ে, সামনে, পেছনে টান টান করে ধরে রাখুন ও ছাড়ুন। প্রতি ঘণ্টায় ১০-১৫ বার।
খ) ঘাড় সোজা করে থুতনি টান টান করে সামনে আনুন, ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। আবার পেছনে আনুন। এটিও ঘণ্টায় ১০-১৫ বার।
গ) সোজা হয়ে বসে কাঁধ দুটো সামনে–পেছনে টান টান করে ধরে রাখুন। প্রতি ঘণ্টায় ১০-১৫ বার।
ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি হলে বিভিন্ন ধরনের ডিপ ট্রান্সভার্স ফ্রিকশন ম্যাসাজ, স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ জয়েন্ট মবিলাইজেশন, হিট থেরাপি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, ড্রাই নিডলিং ইত্যাদির মাধ্যমে দু-চার সপ্তাহের মধ্যে টেক্সট নেক থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।
লেখক: ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
No comments:
Post a Comment