মুনাফা:
দৈনন্দিন জীবনে সবাই বেচাকেনা ও লেনদেনের সাথে জড়িত। কেউ
শিল্প প্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগ করে পণ্য উৎপাদন করেন ও উৎপাদিত পণ্য বাজারে পাইকারদের
নিকট বিক্রয় করেন। আবার পাইকারগণ তাদের ক্রয়কৃত পণ্য বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট
বিক্রয় করেন। পরিশেষে খুচরা ব্যবসায়ীগণ তাদের ক্রয়কৃত পণ্য সাধারণ ক্রেতাদের নিকট বিক্রয়
করেন। প্রত্যেক স্তরে সবাই মুনাফা বা লাভ করতে চান। তবে বিভিন্ন কারণে লোকসান বা ক্ষতিও
হতে পারে। যেমন, শেয়ারবাজারে লাভ যেমন আছে, তেমন দরপতনের কারণে ক্ষতিও আছে। আবার আমরা
নিরাপত্তার স্বার্থে টাকা ব্যাংকে আমানত রাখি। ব্যাংক সেই টাকা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ
করে লাভ বা মুনাফা পায় এবং ব্যাংকও আমানতকারীদের মুনাফা দেয়। তাই সকলেরই বিনিয়োগ ও
মুনাফা সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। এ অধ্যায়ে লাভ-ক্ষতি এবং বিষেষভাবে মুনাফা সম্পর্কে
আলোচনা করা হয়েছে।
এ অধ্যায়ে আমরা শিখতে পারব-
- মুনাফা কী তা বলতে পারব।
- সরল মুনাফা হার ব্যাখ্যা করতে পারব এবং এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে পারব।
- চক্রবৃদ্ধি মুনাফার হার ব্যাখ্যা করতে পারব এবং এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে পারব।
- ব্যাংকের হিসাব বিবরণী বুঝতে ও ব্যাখ্যা করতে পারব।
লাভ-ক্ষতি
একজন ব্যবসায়ী দোকান ভাড়া, পরিবহন খরচ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক
খরচ পণ্যের ক্রয়মূল্যের সাথে যোগ করে প্রকৃত খরচ নির্ধারণ করেন। এই প্রকৃত খরচকে বিনেয়োগ
বলে। এই বিনিয়োগকেই লাভ বা ক্ষতি নির্ণয়ের জন্য ক্রয়মূল্য হিসেবে ধরা হয়। আর যে মূল্যে
ঐ পণ্য বিক্রয় করা হয় তা বিক্রয়মূল্য। ক্রয়মূল্যের চেয়ে বিক্রয়মূল্য বেশি হলে লাভ বা
মুনাফা হয়। আর ক্রয়মূল্যের চেয়ে বিক্রয়মূল্য কম হলে লোকসান বা ক্ষতি হয়। আবার ক্রয়মূল্য
ও বিক্রয়মূল্য সমান হলে লাভ বা ক্ষতি কোনোটিই হয় না। লাভ বা ক্ষতি ক্রয়মূল্যের ওপর
হিসাব করা হয়।
আমরা লিখতে পারি,
লাভ = বিক্রয়মূল্য – ক্রয়মূল্য
ক্ষতি = ক্রয়মূল্য – বিক্রয়মূল্য
উপরের সম্পর্ক থেকে ক্রয়মূল্য বা বিক্রয়মূল্য নির্ণয় করা
যায়।
তুলনার জন্য লাভ বা ক্ষতিকে শতকরা হিসেবেও প্রকাশ করা হয়।
উদাহরণ: ১)
একজন দোকানদার প্রতি হালি ডিম ২৫ টাকা দরে ক্রয়
করে প্রতি ২ হালি ৫৬ টাকা দরে বিক্রয় করলে তাঁর শতকরা কত লাভ হবে?
সমাধান:
১ হালি ডিমের ক্রয়মূল্য ২৫ টাকা
২ হালি ডিমের ক্রয়মূল্য ২৫×২=৫০ টাকা
যেহেতু ডিমের ক্রয়মূল্য থেকে বিক্রয়মূল্য বেশি, সুতরাং লাভ
হবে।
এখানে, লাভ = ৫৬-৫০=৬ টাকা।
৫০ টাকায় লাভ হয় ৬ টাকা
১ টাকায় লাভ হয় ৬/৫০ টাকা
১০০ টাকায় লাভ হয় (৬×১০০) /৫০ = ১২ টাকা
সুতরাং, লাভ ১২%
উদাহরণ: ২)
একটি ছাগল ৮% ক্ষতিতে বিক্রয় করা হলো। ছাগলটি
আরও ৮০০ টাকা বেশি মূল্যে বিক্রয় করলে ৮% লাভ হতো। ছাগলটির ক্রয়মূল্য নির্ণয় কর।
সমাধান:
ছাগলটির ক্রয়মূল্য ১০০ টাকা হলে ৮% ক্ষতিতে বিক্রয়মূল্য
১০০-৮ = ৯২ টাকা।
আবার, ৮% লাভে বিক্রয়মূল্য ১০০+৮=১০৮ টাকা।
সুতরাং বিক্রয়মূল্য বেশি হয় ১০৮-৯২ = ১৬ টাকা।
বিক্রয়মূল্য ১৬ টাকা বেশি হলে ক্রয়মূল্য ১০০ টাকা।
বিক্রয়মূল্য ১ টাকা বেশি হলে ক্রয়মূল্য ১০০/১৬ টাকা।
বিক্রয়মূল্য ৮০০ টাকা বেশি হলে ক্রয়মূল্য (১০০×৮০০)/১৬
= ৫০০০ টাকা।
সুতরাং, ছাগলটির ক্রয়মূল্য ক্রয়মূল্য ৫০০০ টাকা।