আমাদের দুই চোখ একটি বস্তুর ত্রিমাত্রিক ছবি মস্তিষ্কে উপস্থাপন করে। সেভাবেই আমরা দেখি এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ কেউ একটি বস্তুকে দুটি দেখেন। একে বলে ডিপ্লোপিয়া বা ডাবল ভিশন।
বিভিন্ন কারণে ডাবল ভিশন হতে পারে। এ সমস্যার জন্য চোখের ভেতরের পেশির ভারসাম্যহীনতা দায়ী। চোখের পেশিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্নায়ু আছে। যেমন অকুলোমটর নার্ভ, ট্রকলিয়ার নার্ভ, এবডুসেন্ট নার্ভ। এই স্নায়ুগুলো মস্তিষ্কের ভেতর থেকে এসে চোখের পেছন দিকে চক্ষুকোটরে (অরবিট) প্রবেশ করে এবং সবশেষে চোখের পেশিগুলোয় পৌঁছায়। মস্তিষ্ক বা চক্ষুকোটরে (অরবিট) টিউমার, আঘাত, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে এসব স্নায়ুতে বৈকল্য দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, স্নায়ুরোগ মাল্টিপল স্লেরোসিসের জন্যও স্নায়ুবৈকল্য দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা বা মায়াসথেনিয়া রোগেও পেশিগুলো আক্রান্ত হতে পারে। ডিপ্লোপিয়ার সঙ্গে চোখ ট্যারা, চোখ বা মাথাব্যথা, চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া, চোখের নড়াচড়া সীমিত হয়ে আসা ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে।
বয়স্কদের বেলায় হঠাৎ করেই ডিপ্লোপিয়া দেখা দেয়। একে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। প্রথমত একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞের মাধ্যমে চোখ পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। রোগীর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। মস্তিষ্কের কারণগুলোর মধ্যে ব্রেইন টিউমার, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, মস্তিষ্কের প্রদাহ অন্যতম। এই কারণগুলো চিহ্নিত করতে সিটি স্ক্যান বা এমআরআই ইত্যাদি পরীক্ষার সাহায্য নিতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত একজন নিউরোসার্জনের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে। হরমোনের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার।
দ্রুত ডিপ্লোপিয়ার চিকিৎসা না নিলে এ সমস্যা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। টিউমার, হরমোন, স্ট্রোক ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা হলে সামান্য অবহেলাও জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে।
চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
No comments:
Post a Comment