Showing posts with label স্বাস্থ্যকথা. Show all posts
Showing posts with label স্বাস্থ্যকথা. Show all posts

Saturday, January 25, 2020

হাঁচি দিন সাবধানে


হাঁচি দেওয়ার সময় ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে ফুসফুস থেকে বাতাস বের হয়ে আসে। সেই সঙ্গে শ্বাসনালি ও নাকে জমে থাকা শ্লেষ্মা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার আকারে বা স্প্রের মতো বের হয়। হাঁচি দিলে গতির কারণেই এসব কণা সামনের প্রায় ২ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। হাঁচি দেওয়া ব্যক্তির যদি কোনো রোগ থাকে যেমন সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, মাম্পস, যক্ষ্মা, জলবসন্ত, সার্স, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, ডিফথেরিয়া ইত্যাদি, তাহলে হাঁচির সঙ্গে এসব রোগের অসংখ্য জীবাণু বাতাসে বেরিয়ে আসে। মুহূর্তেই এসব জীবাণু কাছের মানুষগুলোর শরীরে ঢুকে পড়তে পারে। এ ছাড়া এসব জীবাণু বাতাসে ভেসে দূরের মানুষেও ছড়াতে পারে। তাই হাঁচি দিতে হবে সাবধানে।

হাঁচি আটকানোর কোনো উপায় নেই। তবে হাঁচির মাধ্যমে জীবাণুর ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো সম্ভব। হাঁচি এলে যথাসম্ভব নাক-মুখ ঢেকে নিতে হবে। অনেকে হাত দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি দেন। এতে হাতে জীবাণু লেগে যায়। পরে হাত থেকে এসব জীবাণু দরজা, জানালা, টেলিভিশনের রিমোট, জগ, গ্লাসসহ নিত্যব্যবহার্য সব জিনিসে জীবাণু ছড়ায়। সেখান থেকে তা অন্যদের শরীরে সংক্রমিত হয়। কারও সঙ্গে হাত মেলালে হাত থেকে হাতে ছড়ায় জীবাণু।

তাই সবচেয়ে ভালো হলো হাঁচির সময় রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢাকা। সব সময় হাতের কাছে টিস্যু বা রুমাল থাকে না। সে ক্ষেত্রে হাতের কনুই বাঁকা করে তা দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে। ফুলহাতা শার্ট বা জামা পরা থাকলে ভালো। জামার আস্তিনে বা কলার টেনেও হাঁচি দেওয়া যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বাড়ি ফিরেই গোসল করে নিতে হবে, হাঁচি দেওয়া জামা পরিষ্কার করতে হবে। রুমালে হাঁচি দিলেও একইভাবে তা ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। টিস্যু ব্যবহার করে থাকলে তা এখানে-সেখানে না ফেলে নিরাপদ জায়গায় ফেলতে হবে।

হাত দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি দিয়ে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। হাত ধোয়ার আগে কোনো কিছু ধরা চলবে না। মনে রাখতে হবে, আমাদের সম্মিলিত সচেতনতাই পারে নানা ধরনের রোগ সংক্রমণ ঠেকাতে। তাই হাঁচির আদবকেতা নিজে মানুন, পরিবারের শিশুসহ অন্য সদস্যদেরও মানতে উৎসাহিত করুন।

বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ

Thursday, January 23, 2020

অ্যানাল ফিসারের চিকিৎসা


অ্যানাল ফিসার মলদ্বারের একটি রোগ, যাতে মলদ্বারের নিচের অংশ ফেটে গিয়ে তীব্র ব্যথা হয়। ব্যথার কারণে রোগী মলত্যাগে ভয় পায়। কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ায় পরে মলদ্বার আরও বেশি ছিঁড়ে যায়। আমাদের দেশে এ রোগের চিকিৎসার জন্য অনেকেই হাতুড়ে চিকিৎসক কিংবা কবিরাজের কাছে ছোটেন। অ্যানাল ফিসারকে পাইলস ভেবে মলদ্বারে ইনজেকশন বা গাছের পাতা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে রোগটি আরও জটিল হয়ে ওঠে। অ্যানাল ফিসারের আধুনিক কাটাছেঁড়াবিহীন চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব।

অ্যানাল ফিসার আর পাইলস এক জিনিস নয়। অ্যানাল ফিসারকে অনেকে বাংলায় গেজ বলে। এ রোগে মলত্যাগের সময় কিংবা মলত্যাগের পর কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত কিংবা সারা দিন ব্যথা থাকে। ব্যথার কারণে রোগী ঠিকভাবে বসতেও পারে না। ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত বের হতে পারে। অনেকের অ্যানাল ফিসার থেকে পরে অ্যানাল ফিস্টুলা হতে পারে। তখন ব্যথার সঙ্গে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে।

অ্যানাল ফিসারের অনেক রকম চিকিৎসা আছে। প্রথম চিকিৎসা হলো জীবনাচরণে পরিবর্তন। চর্বিযুক্ত মাংস কম খাওয়া, শাকসবজি, ফলমূল ও পানি বেশি করে পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এতে মলদ্বারে চাপ কমে। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে অ্যানাল ফিসার সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।

অ্যানাল ফিসার দীর্ঘমেয়াদি হলে মলদ্বারের ঘায়ে আঘাত লাগতে লাগতে চামড়া বেড়ে যায়। একে ক্রনিক অ্যানাল ফিসার বলে। এ ধরনের সমস্যায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের সঙ্গে ব্যথার ওষুধ ও নাইট্রোগ্লিসারিন মলম ব্যবহার করা যায়। এতেও নিরাময় না হলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অ্যানাল ফিসারে মলদ্বার চেপে সরু হয়ে যায়, ঘা অনেক গভীর হয় বা চামড়া অনেক বেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ছাড়া রোগ নিরাময় সম্ভব হয় না।

অস্ত্রোপচারের অনেকগুলো পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে ল্যাটারাল ইন্টারনাল স্ফিংকটারোটমিতে মলদ্বারের অন্তর্দরজা কেটে দেওয়া হয়। আরেক ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি হলো লেজার চিকিৎসা। এ চিকিৎসায় চিকন ফাইবারের সাহায্যে সামান্য ছিদ্র করে রে বা আলোর মাধ্যমে অন্তর্দরজা কাটা হয়। ঘায়ের ওপর লেজার প্রয়োগ করলে ওপরের আবরণটি নতুন করে গজিয়ে ঘা সারাতে সহায়তা করে। লেজারে কাটাছেঁড়া না থাকায় সাধারণত রক্তক্ষরণ হয় না, ব্যথাও কম হয়। এ ছাড়া মলদ্বারের ধারণক্ষমতার কোনো ক্ষতিও হয় না।

ডা. মো. আহসান হাবিব, কলোরেক্টাল সার্জন ও সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী

দূষণের নগরীতে বিষণ্নতা


২০১৯ সালে প্রকাশিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, দেশে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। শহরে বিষণ্নতার হার ৮ দশমিক ২ আর গ্রামে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) আরেকটি গবেষণায় রাজধানীর ৭১ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে বলে জানানো হয়। 

নগরায়ণ, কর্মব্যস্ততাসহ নানা কারণে শহরে বিষণ্নতার হার বেশি বলে গবেষকেরা একমত, কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় জানা গেছে, নগরীর বিষাক্ত বাতাসও হতে পারে বিষণ্নতার কারণ। বাংলাদেশে দূষিত বাতাসের সঙ্গে বিষণ্নতার সম্পর্ক নিয়ে তেমন কোনো বড় মাপের গবেষণা না হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। সাধারণ ধারণা আছে যে দূষিত বাতাসের কারণে শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেশি হয়, কিন্তু দূষণের সঙ্গে মানসিক সমস্যারও সম্পর্ক রয়েছে। 

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ–এর ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বায়ুদূষণের সঙ্গে বিষণ্নতা, রাগ, উদ্বেগ, খিটখিটে মেজাজ ও আত্মহত্যার সম্পর্ক’ শীর্ষক এক নিবন্ধে বিশ্বের ১৬টি দেশের ১৯৭৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বায়ুদূষণ–সংক্রান্ত তথ্য–উপাত্তের সঙ্গে ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী মানুষের বিষণ্নতার সম্পর্ক তুলনা করে গবেষকেরা জানান, দূষিত বায়ুতে শ্বাস–প্রশ্বাস নেওয়া মানুষেরা অন্যদের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বিষণ্নতায় ভোগে। আর তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।

ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা কখনো প্রথম, আবার কখনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানের নিচে মোটেই নামছে না। আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকা ছিল ১ নম্বরে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল নয়াদিল্লি। আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার বাতাস পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত। বাতাসের মানসূচকে (একিউআই) নভেম্বর ২০১৯–এ ঢাকার স্কোর ছিল ২৪২। এর অর্থ হলো, ঢাকায় বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর। 

এই তালিকায় ঢাকার পরেই রয়েছে যথাক্রমে ভারতের দিল্লি, পাকিস্তানের লাহোর ও মঙ্গোলিয়ার উলানবাটর শহর। নভেম্বর ২০১৯–এ একিউআই সূচকে দিল্লির স্কোর ২১১ এবং লাহোর ও উলানবাটরের স্কোর ছিল ১৯৮। কেবল ঘরের বাইরে নয়, ঘরের ভেতরের বাতাসও দূষিত হয়ে যাচ্ছে। বাইরের দূষিত বাতাসের ৪২ শতাংশ দরজা, জানালা দিয়ে ঘরে চলে আসে। এর সঙ্গে ঘরের ধুলাবালু, ময়লা-আবর্জনা, ডিটারজেন্ট, রান্না ও টয়লেট থেকেও দূষিত পদার্থ ঘরের বাতাসে যুক্ত হয়। 

এই ঘরে বাইরের দূষিত বাতাসের কারণে বাড়ছে বিষণ্নতা, মেজাজ হয়ে যাচ্ছে খিটখিটে আর বাড়ছে আত্মহত্যার ঝুঁকি। 

কীভাবে দূষিত বাতাস বিষণ্ন করে তোলে
যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ ও ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের গবেষণায় বলা হয়, দূষিত বাতাসে ভারী বস্তুকণা পিএম ২ দশমিক ৫ ও পিএম ১০–এর পরিমাণ বেড়ে গেলে তা সেগুলো অন্যান্য ভারী ধাতুর সঙ্গে মিশে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এগুলো বাতাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। ফলে মানুষের মস্তিষ্কের আবেগ আর চিন্তার অংশগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। মানুষ বিষণ্ন হয়ে ওঠে। আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই বায়ুদূষণজনিত মানসিক স্বাস্থ্যহানিকে ‘নীরব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সভায় জানানো হয়, বায়ূদূষণ রোধ করে বিষণ্নতার হার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা যায়। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত, দূষিত বাতাসে শ্বাস–প্রশ্বাস গ্রহণকারীদের মধ্যে বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ডেনমার্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করা পৃথক দুটি গবেষণায় দেখা যায়, বায়ুদূষণের কারণে আবেগজনিত মানসিক সমস্যা- বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডারের আধিক্য বেড়ে যায়। এতে করে উত্তেজিত হয়ে ওঠা, অতি চঞ্চলতা বেড়ে যায়। কেবল প্রাপ্তবয়স্করাই নন, শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে এই বায়ুদূষণ। শিশুদের জ্ঞানীয় বিকাশের (কগনিটিভ, বুদ্ধি, অনুভব) ঘাটতি হয়। এ ছাড়া যাদের মধ্যে আগে থেকেই মানসিক সমস্যা আর খিঁচুনি রোগ ছিল, তাদের সেই রোগের লক্ষণগুলো দূষিত বাতাসের কারণে বেড়ে যায়, খিঁচুনির মাত্রা বাড়তে থাকে। 

সায়েন্স অব টোটাল এনভায়রনমেন্টের জানুয়ারি ২০২০ সংখ্যায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে ১০টি দেশের ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাতাসে নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে বিষণ্নতার হার বেড়ে যায়।

করণীয় কী
মূলত একটি নগরীর বায়ূদূষণের জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতার বিকল্প নেই। যেসব বিষয় বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, সেগুলোর প্রতি সচেতনতা বাড়ানো আর তা থেকে নিজে দূরে থাকা এবং অপরকে দূরে রাখার চেষ্টা করা। নগরীর কাছাকাছি ধোঁয়া সৃষ্টি হয় এমন অবকাঠামো না থাকা, যেসব যানবাহন বাতাসকে দূষিত করে, সেগুলোর চলাচল বন্ধ রাখা, নগরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রিন জোন রাখা, উদ্যান আর গাছপালার ব্যবস্থা থাকা। আর ব্যক্তিপর্যায়ে যে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, তা হলো ঘরের ভেতরটা যাতে বাতাস চলাচলের উপযোগী থাকে, সেই ব্যবস্থা করা, বেশি করে গাছ লাগানো, বাতাসকে দূষিত করে এমন যেকোনো কাজ থেকে দূরে থাকা (কয়লা পোড়ানো, যানবাহনের নিয়মিত যত্ন নেওয়া, যাতে কালো ধোঁয়া তৈরি না হয়), সাধারণ মাস্কের বদলে বিশেষ ধরনের মাস্ক ব্যবহার করা, প্রয়োজন না থাকলে দূষিত বাতাসে বেশি না বেড়ানো।

আর দূষিত বাতাস বা যেকোনো কারণে যদি কারও মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ (কমপক্ষে ২ সপ্তাহ ধরে মন খারাপ, কোনো কাজে উৎসাহ না পাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, ভুলে যাওয়া, কান্না পাওয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা, শরীরে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ) দেখা দেয়, তবে সেটিকে হেলা না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি।

কী ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে

দূষিত বাতাসের কারণে কেবল বিষণ্নতা নয়, আরও নানা ধরনের মানসিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন:

● মাথাব্যথা

● ভুলে যাওয়া

● মনোযোগ কমে যাওয়া

● অস্থিরতা 

● তুচ্ছ কারণে রেগে যাওয়া

● মন খারাপ করা, কাজকর্মে উৎসাহ না পাওয়া

● ঘন ঘন মুড চেঞ্জ হওয়া

● বিষণ্নতা

● উদ্বিগ্নতা

● মৃত্যুর ইচ্ছা বা আত্মহত্যার প্রবণতা

আহমেদ হেলাল
সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

শীতে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি


নিউমোনিয়া কী
নিউমোনিয়া হলো ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ। সংক্রমণ–পরবর্তী প্রদাহ থেকে এ রোগ হয়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি দিয়ে সংক্রমণ হতে পারে। সব সর্দি-কাশিই নিউমোনিয়া নয়। যখন জ্বরের সঙ্গে কফ এবং শ্বাসকষ্ট থাকবে, তখনই কেবল শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হয়েছে বলে ধরা হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হালকা থেকে জীবন হানিকরও হতে পারে। এই সময়ে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কিওলাইটিস, এমনকি নিউমোনিয়াও হতে পারে। শীতে শিশু এবং বয়স্কদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই নিউমোনিয়া। তবে এ অসুখ বছরব্যাপী হতে পারে।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু ও বৃদ্ধ নিউমোনিয়ার কারণে মারা যায়। আর শীতের সময় তা বৃদ্ধি পায়। তবে সাবধানতা অবলম্বন করলে এই নিউমোনিয়া প্রতিরোধ সম্ভব। এখন সরকারিভাবে শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধ টিকা দেওয়া হয়।

শিশুর শ্বাসকষ্ট বুঝবেন কীভাবে
দুই মাসের নিচের শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসের হার মিনিটে ৬০ বারের বেশি, এক বছরের নিচে ৫০ বার বা তার বেশি এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছরের শিশুর মিনিটে ৪০ বার তা তার বেশি শ্বাসপ্রশ্বাস হলে তাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। 

তাই জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত শিশু এ রকম ঘন ঘন শ্বাস নিলে বা শ্বাসের সঙ্গে বুক বা পাঁজর নিচে দেবে যেতে থাকলে সতর্ক হোন, হয়তো সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।

নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি যাদের 
● ছোট্ট শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা।

● বহুদিন ধরে ভুগছে এমন কোনো রোগ থাকলে, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদ্​রোগ, ফুসফুসের অন্য কোনো রোগ, এইডস ইত্যাদি থাকলে।

● যাদের অন্য কোনো কারণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, যেমন ক্যানসারের চিকিৎসা নিলে, স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ সেবন করলে।

● যাঁরা ধূমপান করেন।

চিকিৎসা
সাধারণত নিউমোনিয়ার চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। এ জন্য সঠিক ওষুধের পাশাপাশি এ সময় প্রচুর তরল খাবার, পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে হবে। নিউমোনিয়া ভালো হতে দু–তিন সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। কুসুম গরম পানি, লবণপানি বা লাল চা দেওয়া যেতে পারে। নাকে নরমাল স্যালাইন, নরসল ড্রপ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অন্য কোনো ওষুধজাতীয় ড্রপ দেওয়া যাবে না। দুই বছরের নিচের শিশুদের বুকের দুধ বন্ধ করা যাবে না। বুকে তেল, ভিক্স বাম ব্যবহার করাও উচিত নয়। শিশুদের সামান্য কাশিতে অহেতুক সাকশন যন্ত্র দিয়ে কফ পরিষ্কার বা নেবুলাইজার যন্ত্র ব্যবহারও ঠিক নয়। 

তবে অবস্থা সংকটাপন্ন হলে, অর্থাৎ খুব বেশি শ্বাসকষ্ট, সবকিছুই বমি করে দিলে, শিশু অজ্ঞান হয়ে গেলে বা খিঁচুনি হলে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

কী জটিলতা দেখা দেয়

● রক্তপ্রবাহে জীবাণুর সংক্রমণ

● ফুসফুসের চারপাশে তরল জমা এবং সংক্রমণ 

● ফুসফুসে ঘা হয়ে ক্ষত হতে পারে

● তীব্র শ্বাসকষ্ট

শীতে খেলাধুলা করলে 

যাঁরা বিভিন্ন খেলাধুলা, বিশেষ করে রাতে, যেমন ব্যাডমিন্টন খেলেন, তাঁদের একটু সচেতন হওয়া উচিত। কারণ, গা ঘেমে তা যদি আবার শরীরে শুকিয়ে যায়, তাহলে তা থেকে ঠান্ডা, সর্দি-কাশি হতে পারে। সেখান থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে। তবে সুখবর হলো, যাঁরা নিয়মিত খেলাধুলা বা ব্যায়াম করেন, তাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকার কারণে সাধারণত এসব অসুখে কম ভোগেন। আর এই তীব্র শীতে বাড়ি থেকে বের হলে মুখে মাস্ক পরা যেতে পারে। তাহলে শ্বাসনালিতে ঠান্ডাজনিত সমস্যাগুলো কম হবে। 

প্রতিরোধ করা যায়
হ্যাঁ, নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সচেতন হলে সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

১. নিতে হবে নিউমনিয়ার ভ্যাকসিনসহ অন্য রোগেরও, যারা নিউমোনিয়া করতে পারে। বিশেষ করে ৫ বছরের নিচে বা ৬৫ বছরের ওপরে বয়সীদের অথবা যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম। 

২. নিয়মিত হাত ধুতে হবে। যেমন নাক পরিষ্কারের পর, বাথরুমে যাওয়ার পর, খাবার আগে ও পরে। 

৩. ধূমপান বন্ধ করতে হবে। কারণ, ধূমপান ফুসফুসের রোগপ্রতিরোধ করার ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। ফলে সহজেই সংক্রমণ ঘটতে পারে এবং নিউমোনিয়া হতে পারে। ধূমপায়ীদের নিউমোনিয়া সহজেই জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

৪. এ ছাড়া সাধারণ ঠান্ডা লাগলেও খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি খারাপ দিকে না যায়। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, পরিমিত বিশ্রাম নিতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শিশু জন্মের পর ইপিআই শিডিউলের ভ্যাকসিনগুলো নিশ্চিত করতে হবে।

৫. শিশুকে চুলার ধোঁয়া, মশার কয়েল ও সিগারেটের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখাও জরুরি।

বুড়িয়ে যাওয়াকে ভয়


বুড়িয়ে যাওয়াকে ভয় পান না এমন কি কেউ আছেন? মনে হয় নেই। আসলে আমরা ভয় পাই বৃদ্ধ বয়সের কর্মতৎপরতায় শিথিলতাকে। দৈনন্দিন কাজে পরনির্ভরশীলতা, শরীরের কলকবজা দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে চিকিৎসক, হাসপাতালের শরণাপন্ন হওয়া, মৃত্যুভয়, কপালে, গলায় চামড়ার ভাঁজ, সাদা চুল, আশপাশের লোকজনের অবজ্ঞা আর অবহেলা; এসব নিয়ে নানা আশঙ্কা। আর এটা যখন মনে গেঁথে বসে তখনই ভয়, উদ্বেগ, আড়ষ্টভাব দেখা দেয়। সেই সঙ্গে মানসিক রোগের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

কেন মানুষ বুড়ো হয়?
প্রকৃতির নিয়ম এটাই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়স বাড়বে। নারী-পুরুষের বয়সজনিত পরিবর্তনের তফাত রয়েছে। আর এর কারণও ভিন্ন। 

আয়ু: বিশ্বব্যাপী নারীদের আয়ুষ্কাল পুরুষদের তুলনায় বেশি। পুরুষদের কাজের ধরন, সামাজিক আর মানসিক চাপ নারীর তুলনায় বেশ কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। মদ্যপান, ধূমপান ইত্যাদিও প্রভাব ফেলে। 

হরমোন: নারীদের হরমোন ইস্ট্রোজেন ৪৫ বছরের পর থেকে কমতে থাকে বা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। একে মেনোপজ বলে। আর পুরুষের হরমোন টেস্টোস্টেরন খুবই ধীরে কমে। একে এন্ড্রোপজ বলে। পুরুষদের বেলায় ত্রিশের পর প্রতিবছর ১ শতাংশ করে কমে। কিন্তু পুরুষেরা সন্তান উৎপাদনক্ষমতা মোটামুটি আমৃত্যু ধরে রাখতে পারে। 

ত্বকের পুরুত্ব: পুরুষদের ত্বক নারীদের চেয়ে ২৫ শতাংশ পুরু। পুরুষের হরমোন টেস্টোস্টেরন এর কারণ। কোলাজেন ঘনত্ব, প্রাকৃতিক ময়েশ্চার পুরুষদের অনেক বেশি। তাদের ঘাম বেশি হয় এবং তাতে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকায় ময়েশ্চারসমৃদ্ধ ত্বক প্রকৃতিপ্রদত্ত। নারীর মেনোপজের প্রথম পাঁচ বছর কোলাজেন একটু বেশি হারে কমতে থাকে এরপর ধীরে কমে। আর পুরুষদের কোলাজেন কমে ধীরে ধীরে। ত্বক কুঁচকে যাওয়া রোধে মহিলাদের রূপচর্চা, ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রাকৃতিকভাবেই লক্ষণীয়।

চুল পড়ে যাওয়া: পুরুষদের টাক পড়ে ৫০ বছরের কাছাকাছি গিয়ে। আর নারীদের চুলের ঘনত্ব কমতে থাকে। 

ওজন: নারীদের ওজন বাড়ে ৬৫ আর পুরুষদের ৫৫ বছর পর্যন্ত। এরপর উভয়েরই কমতে থাকে। শরীর দুর্বল হতে থাকে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা: যেসব পুরুষের স্থূলতা বা ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক হয়েছে, তাদের স্মৃতিভ্রমের আশঙ্কা বেশি। আর যেসব নারী অন্যের ওপর নির্ভর করে, কাজকর্ম কম করে, লোকজনের সঙ্গে কম মেলামেশা করে তাদের স্মৃতিভ্রমের আশঙ্কা বেশি।

পুরুষেরা নারীদের তুলনায় বৃদ্ধ বয়সটাকে মেনে নেয় সহজেই। তবে কিছু ব্যাপার মানতে তাদের কষ্ট হয়। যেমন শারীরিক দুর্বলতা, উদ্দেশ্যবিহীন বেঁচে থাকা, যৌনক্ষমতা কমে যাওয়া, অন্যের ওপর নির্ভরতা, স্মৃতিবিভ্রাট ইত্যাদি। পুরুষ-নারী উভয়ই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক সৌন্দর্য হারায়। তবে এই হারানোটা নারীদের বেলায় সাধারণত বেশি চোখে পড়ে। 

জেরোন্টোফোবিয়ার লক্ষণ কী?
জেরোন্টোফোবিয়া একধরনের উদ্বেগজনিত রোগ। বুড়িয়ে যাওয়ার ভয় বা বৃদ্ধলোকদের এড়িয়ে চলার প্রবণতা এ রোগের লক্ষণ। এই মানসিক রোগ যেকোনো বয়সে পুরুষ ও নারীর হতে পারে। মানসিক চাপ, বয়স্ক আত্মীয়স্বজন এমনকি রাস্তাঘাটে বৃদ্ধদের সহায়ত্ব তাদের মনে পীড়া ও নাড়া দেয়। বৃদ্ধ লোকদের সামনে দেখলে বা ছবি দেখলেও তাদের মধ্যে উদ্বেগের লক্ষণ যেমন অস্থিরতা, ঘেমে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করার উপসর্গ দেখা দেয়। বৃদ্ধ বয়সের সীমাবদ্ধতা, অসুস্থতা, অবধারিত মৃত্যু ইত্যাদি চিন্তা এই রোগীদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করে। এই অহেতুক চিন্তা থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারে না। পরে এটা মানসিক রোগের পর্যায়ে পড়ে। তখন রীতিমতো চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

কী করণীয়?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জরুরি। চিন্তাগুলো স্বাভাবিক কিন্তু মেনে নিতে না পারা অস্বাভাবিক। জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ এই বৃদ্ধকাল। আর এই অপরিহার্য বিষয়ের চিন্তা নিজের অজা​ন্তে ওসিডি রোগের মতোই মানুষকে কষ্ট দেয়। এই চিন্তাকে উপেক্ষা করতেই হবে। সুস্থ থাকতেই হবে। এর জন্য রয়েছে ওষুধ আর সাইকোথেরাপি। সঙ্গে নিজের সদিচ্ছা। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় যৌথ পরিবারের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা উচিত। তাতে এ রকম মানসিক সমস্যা থেকে আমরা আমাদের সমাজকে রক্ষা করতে পারব। 

সুলতানা আলগিন 
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

Tuesday, January 21, 2020

প্রোস্টেট ক্যানসার: যা জানা প্রয়োজন


প্রোস্টেট ক্যানসার একটি প্রাণঘাতী রোগ। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ নতুন করে প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে ৩০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু ঘটে। তবে রোগের শুরুতে ধরা পড়লে রোগীর প্রাণে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেকেই বুঝতে পারে না যে এই মারণরোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে।

প্রোস্টেট ক্যানসার কাদের এবং কেন হয়
এখন পর্যন্ত প্রোস্টেট ক্যানসারের কারণ জানা যায়নি। তবে কয়েকটি বিষয় আছে, যা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যেমন, বয়স বৃদ্ধি অর্থাৎ ৫০ বছরের ওপর পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। গবেষকদের মতে, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা প্রোস্টেট ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধূমপায়ীদের প্রোস্টেট ক্যানসার অধূমপায়ীদের তুলনায় বেশি। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণসমূহ
প্রোস্টেট ক্যানসার অনেক ধীরে বৃদ্ধি পায়, তাই কয়েক বছর পর্যন্ত সব লক্ষণ অনুভব না–ও হতে পারে। তবে প্রোস্টেট বড় হয়ে যখন মূত্রনালিকে আক্রান্ত করে তখন বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। রোগী তখন প্রস্রাব করতে অনেক ধরনের অসুবিধাবোধ করে। যেমন, হঠাৎ বেশি বেগে প্রস্রাব পাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বিশেষ করে রাতের বেলা বেশি প্রস্রাব হওয়া। মূত্রত্যাগের শুরুতে প্রস্রাব আসতে দেরি হওয়া এবং প্রস্রাব শেষ করতে অনেক বেশি সময় লাগা। মূত্রত্যাগের পরেও প্রস্রাবের বেগ আছে মনে হওয়া। প্রস্রাবের বেগ আটকে রাখা কষ্টকর হওয়া। প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব হওয়া, সঙ্গে রক্ত যাওয়া। অগ্রবর্তী পর্যায়ে কোমর ও তলপেটে ব্যথা অনুভব হওয়া।

প্রোস্টেট ক্যানসার নির্ণয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা
রক্তে PSA পরীক্ষা প্রোস্টেট ক্যানসার নির্ণয়ে সাহায্য করে। এর মাত্রা ৪–এর নিচে থাকলে চিন্তার কিছু নেই। সাধারণত ক্যানসার হলে এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। TRUS নামক একটি পরীক্ষা দ্বারা একধরনের ultra sonography-এর মাধ্যমে প্রোস্টেটের ভালো ছবি দেখা যায়। ওই ছবিতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে BIOPSY করা হয়। BIOPSY-এর মাধ্যমে ক্যানসার আছে কি না এবং থাকলে ক্যানসারটি কী ধরনের, তা–ও জানা যায়।

চিকিৎসা
প্রোস্টেট ক্যানসার শুরুতে ধরা পড়লে নির্মূল করা যায়। দেরি হলে রোগ সম্পূর্ণ সারানো না গেলেও রোগ বেড়ে যাওয়া আটকানো যায়। র‍্যাডিক্যাল প্রোস্টেকটমি অপারেশন হলো এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা। এ ছাড়া রোগের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি, কেমোথেরাপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
প্রশ্ন হলো প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কি বাঁচে? নিশ্চয় বাঁচে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। একেবারে শেষ পর্যায়ে এলেও রোগ বাড়তে না দিয়ে দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকা যায়।
পুরুষদের যত ক্যানসার হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় কোলোরেক্টাল ও ফুসফুসের ক্যানসার। এরপরই হয় প্রোস্টেট ক্যানসার। কিন্তু একটু সতর্কতাই পারে এই ক্যানসারের কারণে পুরুষদের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে।

লেখক: আবাসিক চিকিৎসক, প্যাথলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

Monday, January 20, 2020

অটোস্কলেরোসিস: কানের ভেতর হাড়ের পরিবর্তন



রেহানা খালার জন্য সবার একটা টান। এত নরম একটা মানুষ। কথা বলেন গলা নামিয়ে। খুব বেশি আওয়াজ পছন্দ করেন না, নিরিবিলি থাকেন। সারাক্ষণ কী জানি ভাবেন, কেউ ডাকলে প্রথমে অনেক সময় খেয়াল করেন না। পরে ঠিকই খেয়াল করেন। ওনার সঙ্গে কথা বলতে হয় গলা উঁচিয়ে। কিন্তু উনি ঠিকই গলা নামিয়েই জবাব দেন।

সাইমনের অফিসে ভালো লাগে, পার্টিতে ভালো লাগে, দাওয়াতে ভালো লাগে। কিন্তু নিজের বাসায় কারও কথা শুনতে খিটখিট লাগে। বাইরে সবাই এত ভালো করে কথা বলে, বাসায় সব ম্যাঁও ম্যাঁও। কী যে বলে বোঝাই যায় না। হেডফোনে গান শুনতে ভালোবাসে সে। আজকাল আবার স্মার্টফোনগুলোর হয়েছে এক জ্বালা। ভলিউম বাড়িয়ে শুনতে নিলেই ওয়ার্নিং মেসেজ দেখায়। অথচ কম ভলিউমে শুনে কি কোনো মজা আছে?

তারিনের প্রেগন্যান্সিতে কানে একটু অস্বস্তি ছিল। পরে সেটা চলে যায়। আজকাল আবার কানের ভেতর কেমন জানি মেশিন চলার বা কেটলিতে পানি ফোটার শাঁই শাঁই আওয়াজ হয়। হঠাৎ হঠাৎ আজকাল মাথাটাও কেমন জানি চক্কর দিয়ে ওঠে।

রেহানা খালা, সাইমন বা তারিনের ক্ষেত্রে ভালো করে খেয়াল করুন। নিচু গলায় কথা বলা রেহানা খালা গলা নামিয়ে কথা বলেন, কারণ উনি ওনার নিজের গলার স্বর বড় করে শুনতে পান। সাইমন কোলাহলে ভালো শোনে, কারণ ওখানে সবাই উঁচু গলায় কথা বলে। আর বাসায় স্বাভাবিক স্বরে কথা বলে বিধায় সে ঠিকমতো শুনতে পায় না, আর তার মেজাজ খিঁচড়ে যায়। এদিকে আবার হেডফোনে চড়া সুরে গান শুনতে ভালো লাগে। অর্থাৎ তার অগোচরেই আস্তে আস্তে কানে কম ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ শোনার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। আবার তারিনের ক্ষেত্রে বাড়তি একটা শব্দ শোনার সমস্যা তৈরি হয়েছে, যাকে টিনিটাস বলা হয়। এ ছাড়া মাথা ঘোরানোটাও আছে। এই যে সমস্যাগুলো, কারও কারও ক্ষেত্রে সব কটি বা কারও কারও ক্ষেত্রে কয়েকটি থাকলেই যে রোগের আশঙ্কা আছে বলে মনে করা হয়, তাকে বলা হয় অটোস্কলেরোসিস (Otosclerosis)।

অটোস্কলেরোসিস কী? আমাদের কানের ভেতর রয়েছে দেহের সবচেয়ে ছোট তিনটি হাড়—ম্যালিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস। এই স্টেপিসের রয়েছে একটি ফুট প্লেট। অর্থাৎ পায়ের কাছটায় বাটির মতো একটা অংশ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ফুট প্লেটটি শুধু অথবা এই তিনটি হাড়ের সব কটিরই গঠনগত পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়। এই পরিবর্তনের ফলে হাড়গুলো স্বাভাবিক অবস্থার মতো শব্দ পরিবহন করতে পারে না। এরপর আস্তে আস্তে বধিরতা বাড়তে থাকা, টিনিটাস, মাথা ঘোরানো ইত্যাদি শুরু হয়।

অটোস্কলেরোসিসের চিকিৎসা কী? এখন পর্যন্ত এমন কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি, যা দিয়ে এই রোগ থেকে পুরোপুরিভাবে আরোগ্য লাভ করা যায়। অল্প যে কয়েকটি ওষুধ আছে, যেগুলো ব্যবহার করে এই রোগ যাতে আর না বাড়ে বা দুই কানেই যাতে না হয়, সেই চেষ্টা করা যায়। এতে সমস্যা হলো, ঘন ঘন চিকিৎসকের কাছে আসতে হয়, পরীক্ষা–নিরীক্ষা করাতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ, ব্যয়সাপেক্ষ তো বটেই।

অপরদিকে বর্তমানে এ দেশেই এর সার্জারি হচ্ছে। ঢাকাতেই বেশ কয়েকটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সফলতার সঙ্গে সার্জারি করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। এই সার্জারিতে আক্রান্ত হাড় ফেলে দিয়ে তার জায়গা গ্রাফট বা প্রোস্থেটিক বসিয়ে দেওয়া হয়। এতে দুটি উপকার হয়। প্রথমত, আক্রান্ত হাড় ফেলে দেওয়ার ফলে রোগটিকে দেহ থেকে দূর করা যায় এবং দ্বিতীয়ত, শ্রবণশক্তি কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনা যায়।

নিজের প্রতি যত্নবান হোন। কানের যেকোনো সমস্যা হালকাভাবে নিতে নেই। শ্রবণশক্তি কমে আসার ক্ষেত্রে একটা বাজে দিক হলো, নিজে নিজে এটা বোঝার উপায় কম। আস্তে আস্তে এই পরিবর্তনটা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে গুরুতর আকার ধারণ করে। তাই যখনই স্বাভাবিক কথাবার্তার শব্দে আপনার মেজাজ খিটখিটে লাগবে, নিচু গলার কথাবার্তা বিরক্ত লাগবে, আপনার সঙ্গে কথা বলতে এলে কাউকে বারবার একই জিনিস বলতে হবে, ইলেকট্রনিক ডিভাইস আপনাকে কোনো ওয়ার্নিং মেসেজ দেখাবে, টিনিটাস বা মাথা ঘোরানো বাড়বে—তখন বিন্দুমাত্র দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কোথায়, কার কাছে দেখাবেন, তা বুঝতে না পারলে অন্তত একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান দেখান।

ভালো থাকুন।

লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি-১৮), বিসিএস (স্বাস্থ্য), ডিএলও ট্রেইনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।

Saturday, January 18, 2020

শীতে ঘরেই ব্যায়াম করুন


বাইরে প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস, কুয়াশা। যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট আছে, তারা এ সময় প্রয়োজন ছাড়া সহজে ঘরের বাইরে যেতে চান না। যাঁরা নিয়মিত হাঁটেন, তাঁদের অনেকেই শীতকালে হাঁটা বন্ধ করে দেন। এতে শীতে আবার ওজন বাড়ে, ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি কমে যায়। তাই কনকনে ঠান্ডায় বাইরে না গিয়ে ঘরের ভেতরেই করতে পারেন কিছু ব্যায়াম, যা হাঁটার মতোই উপকারী। 

হাঁটা হচ্ছে একধরনের অ্যারোবিক ব্যায়াম। যেসব ব্যায়ামের ফলে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় এবং শরীর ঘামতে শুরু করে, তা অ্যারোবিক ব্যায়াম হিসেবে পরিচিত। যেমন হাঁটা, জগিং, নাচ, দড়ি লাফ, সাঁতার কাটা, সিঁড়ি ওঠানামা ইত্যাদি। গবেষকদের মতে, একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য সপ্তাহে ৩০০ মিনিট অ্যারোবিক ব্যায়াম যথেষ্ট। অ্যারোবিক ব্যায়ামের ফলে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগসহ অন্যান্য রোগ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই প্রতিকূল পরিবেশে বাইরে গিয়ে হাঁটার পরিবর্তে অন্য যেসব অ্যারোবিক ব্যায়াম করতে পারেন:

দড়ি লাফ: দড়ি লাফ হচ্ছে একটি উৎকৃষ্ট মানের অ্যারোবিক ব্যায়াম। এটা যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময় ও যেকোনো পরিবেশে করা যায়। এটি প্রতি মিনিটে ১৫-২০ ক্যালরি বার্ন করে। যদি কোনো স্বাভাবিক মানুষ ১৫ মিনিট দড়ি লাফায় (প্রতি মিনিট ১২০টি লাফ) তবে তার প্রায় ২২০-৩০০ ক্যালরি বার্ন হয়। এটি দৌড়ানোর চেয়েও ২৫ গুণ বেশি ক্যালরি বার্ন করে। প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিট পর্যন্ত করতে পারেন। 

স্টেশনারি বাইক: কারও যদি স্টেশনারি বাইক (একই জায়গায় বসে পা দিয়ে চাকা ঘোরানোর ব্যবস্থা) থাকে তবে এটি চালাতে পারেন। এটি ৩০ মিনিট চালালে প্রায় ২৫০-৩৭০ ক্যালরি বার্ন করে। 
সিঁড়ি ওঠানামা: সিঁড়ি ওঠানামা করাও একটি ভালো অ্যারোবিক ব্যায়াম। কেউ যদি প্রতি মিনিটে ৭৭ ধাপ করে সিঁড়ি ওঠানামা করে, তবে তার ৩০ মিনিটে প্রায় ২২৫-৩৩৫ ক্যালরি বার্ন হবে। 

জগিং জাম্প: জগিং জাম্প যেকোনো জায়গায় করা যায়। দুই পা ফাঁক করে দাঁড়ান। এবার দুই হাত ওপরে তুলে লাফ দিন। আবার লাফ দিয়ে দুই হাত নামান। জগিং জাম্পের মাধ্যমে একজন সুস্থ মানুষ প্রতি ঘণ্টায় ৫৩০ ক্যালরি পর্যন্ত বার্ন করতে পারে। এটি ১৫-৩০ মিনিট পর্যন্ত করতে পারেন। এতে প্রায় ১৫০-২৭০ ক্যালরি পর্যন্ত বার্ন হয়। 

ঘরের ভেতরে হাঁটা: ঘরের ভেতরে হাঁটা, বাইরে হাঁটার মতোই উপকারী। যদি কেউ প্রতি মিনিটে ৯০-১০০ ধাপ হাঁটতে পারে, তবে ঘণ্টায় প্রায় ২৪৫ ক্যালরি বার্ন হয় (ঘরে ও বাইরে একই) 

মেহেরুন নেসা, ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Wednesday, January 15, 2020

শীতে শিশুর ডায়রিয়া রোধে রোটা ভ্যাকসিন


শীতকালে শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী সংক্রামক ভাইরাস ‘রোটা’। তবে শিশুকে এই ভাইরাস থেকে প্রতিরোধ করতে রয়েছে ভ্যাকসিন। দুই বা তিন ডোজের রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিন নিয়ে শিশুকে রাখা যায় নিরাপদ।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয় বেশি। আর দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

ঢাকার উত্তরায় শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাজী মাহমুদ তালুকদার বলেন, রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে ডায়রিয়া হলে শিশুরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তবে বর্তমানে রোটা ভাইরাস প্রতিরোধের ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানান, রোটা প্রতিরোধে হাসপাতালগুলোতে রোটা রিক্স ও রোটা টেক নামে দুই ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে। যেকোনো একটি ভ্যাকসিন নিয়েই শিশুকে ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখা যায়। রোটা টেক তিন ডোজ নিতে হয়। রোটা রিক্স দুই ডোজ নিতে হয়।

শীতকালে শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী সংক্রামক ভাইরাস ‘রোটা’। তবে শিশুকে এই ভাইরাস থেকে প্রতিরোধ করতে রয়েছে ভ্যাকসিন। দুই বা তিন ডোজের রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিন নিয়ে শিশুকে রাখা যায় নিরাপদ।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয় বেশি। আর দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

ঢাকার উত্তরায় শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাজী মাহমুদ তালুকদার বলেন, রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে ডায়রিয়া হলে শিশুরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তবে বর্তমানে রোটা ভাইরাস প্রতিরোধের ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানান, রোটা প্রতিরোধে হাসপাতালগুলোতে রোটা রিক্স ও রোটা টেক নামে দুই ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে। যেকোনো একটি ভ্যাকসিন নিয়েই শিশুকে ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখা যায়। রোটা টেক তিন ডোজ নিতে হয়। রোটা রিক্স দুই ডোজ নিতে হয়।

চিকিৎসক রাজী মাহমুদ তালুকদার বলেন, শীতকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই রোটা ভাইরাসের সংক্রমণে অসুস্থ হয়। তিনি বলেন, গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়ার কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া। আর আমাদের দেশে শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এটা মুখের মধ্য দিয়েই শিশুদের পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। বড়দের ক্ষেত্রে রোটা খুব একটা দুর্বল করতে পারে না। প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরের রোটা ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট থাকে।

রোটা ভাইরাস রোধ করতে শিশু কী খাচ্ছে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে বলেও জানান চিকিৎসক। তিন বলেন, কিছু ধরার পরে শিশু মুখে আঙুল দিচ্ছে কি না সেটি খেয়াল রাখতে হবে। আর বাইরে থেকে কেনা খাবার যেন অবশ্যই বিশুদ্ধ করে খাওয়ানো হয়।

রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে মায়ের দুধ কার্যকর বলে জানান চিকিৎসক রাজী। তিনি বলেন, যেসব শিশু ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খায়, তাদের ঝুঁকি অনেক কম থাকে। আর ডায়রিয়া হলে শিশুর স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করা যাবে না। এর ফলে শিশু আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঝুঁকিতে থাকে।

চিকিৎসা কী?
ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ায় রোটা ভাইরাস রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। রোটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই ওরাল স্যালাইনই আসল হাতিয়ার। বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। ৬ মাসের বড় বাচ্চাদের অন্যান্য খাবার দিতে হবে। নরম জাউ, কাঁচা কলা ভর্তা, ডালের পানি ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন খাওয়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই রোগের আসল ঝুঁকি হলো পানিশূন্যতা।

প্রতিরোধ
প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া প্রধান প্রতিরোধ। প্রতিরোধ নিরাময়ের চেয়ে শ্রেয়। ফুটানো পানি পান করা, পায়খানার পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, রাস্তাঘাটের খোলা খাবার পরিহার করা, বাচ্চাদের এটা-সেটা মুখে দেওয়া থেকে বিরত রাখা ইত্যাদি রোটা ভাইরাস রোগের সংক্রমণে বাধা দেবে।

যেভাবে এই ভাইরাস ছড়ায়
যদি কোনো শিশু রোটা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে আক্রান্ত হওয়ার দিন থেকেই অর্থাৎ লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার আগে থেকেই শিশুটির মলে এই ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যায়। কোনো কারণে তা সঠিকভাবে পরিষ্কার করা না হলে বা শিশুটির হাতে পায়ে মল লেগে থাকলে এর মাধ্যমেই রোটা ভাইরাস ছড়াতে পারে।

শিশুটির হাত থেকে রোটা ভাইরাস জীবাণু তার খেলনা, খাবার প্লেট যেকোনো স্থানে ছড়াতে পারে। এ থেকে অন্য যেকোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। তাই শৌচকাজ সারার পর ছোট থেকে বড় সবারই ভালোভাবে জীবাণুমুক্তকরণ সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। গ্রামাঞ্চলে যেখানে এখনো টয়লেট নেই, সেখানে এ রোগ ছড়ানোর হার অত্যন্ত বেশি। রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর মল কারও কাপড়, জুতো বা পায়ে লেগেও ছড়াতে পারে।

যাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে
এই রোগ সাধারণত শিশুদের মধ্যেই বেশি দেখা দেয়। তবে আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে যারা থাকে বিশেষ করে শিশুর মা বাবা, ভাই বোন বা অন্যান্য আত্মীয় কিংবা ডে কেয়ারের কর্মচারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ার লক্ষণ
সাধারণত কোনো শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার দুই দিনের মধ্যেও কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এই রোগে প্রথমে জ্বর আসে, বমি শুরু হয় এবং তারপর পেট ব্যথা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এটি প্রায় ৫ থেকে ৭ দিন থাকতে পারে। তবে বড়দের ক্ষেত্রে এটি ততটা মারাত্মক হয় না।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত
রোটা ভাইরাস অত্যন্ত মারাত্মক রোগ। এটি শিশুর মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। তাই কিছু লক্ষণ দেখা মাত্রই দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

যেসব লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে যে রোগীর পানিশূন্যতা হয়েছে তা হলো:
উদ্বিগ্নতা, কান্না করলেও চোখে পানি না আসা, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা ডায়াপার পরালে তা শুকনো থাকা, ক্লান্তি, ঠোঁট শুকনো থাকা, প্রচণ্ড ঘুম পাওয়া, ত্বক শুষ্ক ও বিবর্ণ হওয়া

চিকিৎসকেরা যেভাবে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া পরীক্ষা করে থাকেন
রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া সাধারণ ডায়রিয়ার চেয়ে মারাত্মক এবং এর লক্ষণগুলোও অত্যন্ত ভয়াবহ। তাই সাধারণত লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানলেই ডাক্তাররা রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া আন্দাজ করতে পারেন। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনেক সময় আক্রান্তের মল পরীক্ষা করতে পারেন।

ডা. রাজী মাহমুদ তালুকদার জানান, দেশে শিশুদের ডায়রিয়ার জন্য দায়ী প্রধান চারটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে রোটা ভাইরাস। রোটা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মানুষের শরীরে এর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। আক্রান্তদের উপসর্গ হিসেবে প্রথমে শুরু হয় বমি। এরপর আস্তে আস্তে পানির মতো পাতলা পায়খানা। খুব কম সময়ের মধ্যে ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং পানিশূন্যতা এত বেশি হয় যে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া না গেলে প্রাণহানির আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া সঙ্গে জ্বর ও পেটব্যথাও থাকতে পারে। ৯ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে বমি ও জ্বর। ডায়রিয়া থাকতে পারে ২১ দিন।

নাজিয়া হোসেন: প্রথম আলোর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাংবাদিক

Sunday, January 12, 2020

লাখ নয়, মাত্র ১২০০ টাকায় মিলবে বিদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শ


কেমন হতো যদি শারীরিক সমস্যা নিয়ে বিশ্বমানের ভারতীয় চিকিৎসকদের থেকে পরামর্শ নিতে পারতেন ঘরে বসেই? আপাতদৃষ্টে অসম্ভব মনে হলেও এই সেবা গ্রহণ করা এখন খুবই সম্ভব। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে seekmed। গুগল প্লে স্টোর থেকে এ অ্যাপটি ডাউনলোড করে ঘরে বসেই নেওয়া যায় বিশ্বমানের ভারতীয় চিকিৎসকদের পরামর্শ।

প্রতিবছর লাখো মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায় চিকিৎসা নিতে। রেগুলার চেকআপ থেকে কঠিনতম সার্জারি, যেকোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতই বাংলাদেশিদের প্রথম পছন্দ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ভারতে গেছে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে।

তবে বিদেশে গিয়ে চি­­­­কিৎসাসেবা নেওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা ধরনের বাধা। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুটি বিষয়—খরচ ও রোগীর শারীরিক অবস্থা। বিশ্বমানের একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা এবং প্রচুর পরিমাণ অর্থ। ভিসা ম্যানেজ করা থেকে শুরু করে প্লেন ভাড়া এবং বিদেশে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করার পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং সময় ব্যয় করতে হয়। প্রায়ই দেখা যায়, রোগীরাও বিদেশযাত্রার ধকল নিতে পারেন না। তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তা হলো অনিশ্চয়তা। কীভাবে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে, বিদেশে গিয়ে কোথায় থাকলে সুবিধা হবে, প্রথমবার চিকিৎসককে দেখানোর পর ভবিষ্যতে কীভাবে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে, বিদেশ থেকে নিয়ে আসা ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে সেটি দেশ থেকে কীভাবে সংগ্রহ করতে হবে, এমন নানা বিষয় নিয়ে রোগীরা থাকে সন্দিহান। এ ছাড়া বিদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে খরচ হয় প্রচুর অর্থ। এই সমস্যাগুলো দূর করে, টেলিমেডিসিন চিকিৎসাক্ষেত্রে নিয়ে আসতে পারে নতুন বিপ্লব এবং seekmed ইতিমধ্যেই এই বিপ্লব নিয়ে আসার ক্ষেত্রে পালন করছে অগ্রণী ভূমিকা। এ অ্যাপটি কাজ করছে, এমন একটি মাধ্যম হিসেবে যার ফলে খুব স্বল্প খরচে, বিদেশ ভ্রমণের ঝামেলা ছাড়াই ঘরে বসেই ভিডিও কলের সাহায্যে পাওয়া যাবে বিশ্বমানের ডাক্তারি পরামর্শ।

অ্যাপটির ব্যবহারপদ্ধতি খুবই সহজ। প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করে, রেজিস্টার করলেই মিলবে পছন্দের চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় নির্ধারণের সুযোগ। নির্ধারিত সময়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে চিকিৎসকই পেশেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। এ ছাড়া পেশেন্ট চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজনে নিজের রিপোর্টও অ্যাপটিতে আপলোড করতে পারবেন।

২০১৮ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত seekmed-এর গ্রহণযোগ্যতা চোখে পড়ার মতো। যাত্রা শুরুর মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় অ্যাপটি পৌঁছে যায় প্রায় ২৮টি দেশে। যার মধ্যে রয়েছে ঘানা, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশ। বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত অ্যাপটি ডাউনলোড হয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি।

seekmed অ্যাপটি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন মি. অলোক আভাস্তি, তিনি একজন আইটি স্পেশালিস্ট। সঙ্গে রয়েছেন মি. শারদ দুবে, একজন প্রসিদ্ধ ফিন্যান্সিয়াল এক্সপার্ট। তাঁরা দুজনেই মনে করেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে অ্যাপটিতে বিশ্বমানের ভারতীয় চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে পারা। অ্যাপটিতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া অধিকাংশ চিকিৎসকই অর্জন করেছেন পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী এবং ডাক্তার বি সি রায় অ্যাওয়ার্ডের মতো সম্মাননা। তারা অনেকেই ফরটিস, মেদান্ত, পিএসআরআই, ম্যাক্স এবং বিএলকের মতো হসপিটালের চেয়ারম্যান অথবা হেড অব ডিপার্টমেন্টের পদে আসীন।

চিকিৎসাসেবা নিতে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের জন্য তাই seekmed হয়ে উঠতে পারে সেবা নেওয়ার বড় একটি মাধ্যম। অ্যাপটির মাধ্যমে বাংলাদেশিরা বিদেশে যাওয়ার ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই স্বল্প খরচে গ্রহণ করতে পারেন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা।

Friday, January 3, 2020

শীতেও চোখের যত্ন দরকার


শীতে ত্বক ও চুলের পাশাপাশি চোখের যত্নও নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, এ সময় পরিবেশে ধুলাবালি বেশি থাকে এবং আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ায় চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়। ফলে চোখের অ্যালার্জি, চুলকানি, শুষ্ক চোখ, খচখচ করার মতো সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। শীতকালে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

চশমা ব্যবহার করুন: বাইরে বের হলে চশমা বা রোদচশমা ব্যবহার করুন। সরাসরি সূর্যের আলো যাতে না পড়ে, সে জন্য পুরো চোখ ঢেকে থাকে—এমন ফ্রেমের চশমা ব্যবহার করুন।

শরীর আর্দ্র রাখুন: শরীর আর্দ্র রাখতে প্রচুর তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। এমনিতেই শীতে পানি পান কমে যায়। তাই পানি ছাড়াও ফলের রস, গরম স্যুপ ইত্যাদি খেতে পারেন, যা শরীর উষ্ণ ও আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে। এতে চোখের শুষ্কভাবও কমে যাবে।

ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার খান: ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ বেশি খেতে হবে। এতে চোখে অশ্রু বেশি তৈরি হবে।

শাকসবজি খান: শাকসবজিতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, ক্যারোটিন ইত্যাদি আছে, যা চোখ ভালো রাখে। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন–এ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। চোখের পুষ্টি উপাদানের ‘পাওয়ার হাউস’ বলা যেতে পারে মিষ্টিকুমড়াকে।

চোখের ব্যায়াম

চোখের উপযোগী ব্যায়াম নিয়মিত করা উচিত। এতে চোখের অতিরিক্ত ক্লান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি আর্দ্রতা ধরে রাখা সহজ হবে।

ব্যায়াম ১: মাথা সোজা রেখে চোখ হাতের ডান থেকে বাঁয়ে ও বাঁ থেকে ডানে ১০ বার ঘোরাতে হবে। প্রতিদিন সম্ভব না হলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন করা যেতে পারে।

ব্যায়াম ২: কাজের ফাঁকে কিছু সময় চোখ বন্ধ রাখুন। হাতে হাত ঘষে হাতের তালু কিছুটা গরম করে বন্ধ চোখের ওপর রাখুন। হাতের তালু এমনভাবে রাখুন, যাতে ভেতরে কোনো আলো না যেতে পারে। দুই মিনিট এভাবে থাকুন। দিনে বেশ কয়েকবার এমন করলে চোখের বিশ্রাম হবে।

ব্যায়াম ৩: যাঁরা কম্পিউটার ও মুঠোফোন বেশি ব্যবহার করেন, তাঁদের চোখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। কাজেই একটানা তাকিয়ে না থেকে কম্পিউটার ও মুঠোফোন ব্যবহারের সময় ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলুন। নিয়মিত পানির ঝাপটা দিয়ে চোখ পরিষ্কার করুন।

ব্যায়াম ৪: রাতে ঘুমানোর সময় বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে চোখের পাতা আঙুলের ডগা দিয়ে হালকা করে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। ভ্রুর নিচের দিকে ও চোখের নিচের দিক এভাবে দুই মিনিট ম্যাসাজ করুন। এতে ঘুমও ভালো হবে, চোখের অতিরিক্ত ক্লান্তিও দূর হবে।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, গ্লকোমা বিভাগ, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

Tuesday, December 31, 2019

জন্ডিস হলে কী খাবেন


জন্ডিস মানে যকৃতের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস। এটি আসলে কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণ। জন্ডিস হলে রোগীর পথ্য কী হবে, তা নিয়ে অনেকের ভেতর অনেক ভ্রান্তি রয়েছে, যার কোনো ভিত্তি নেই। জন্ডিস হলে এমন খাবার খাওয়া উচিত, যাতে যকৃৎ কিংবা পিত্তথলির ওপর কোনো চাপ না পড়ে। অল্প করে একটু পরপর সঠিক খাবার খেলে এবং পূর্ণ বিশ্রামে থাকলে এমনিতেই জন্ডিস সেরে যায়।

জন্ডিস হলে যা খাবেন

গোটা শস্য: কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণে বাদামি চাল, রুটি, ওট্স খেতে পারেন। গোটা শস্যে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন থাকে, যা ক্ষতিকর টক্সিন বের
করে দেয়।

প্রোটিন: খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন মাছ, মুরগির মাংস, ডাল পরিমাণমতো থাকতে হবে। না হলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়বে। অনেকে মনে করেন, জন্ডিসে আক্রান্ত রোগী মাছ-মাংসজাতীয় খাবার খেতে পারবেন না। এটা আসলে ভুল ধারণা।

সবজি: মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, মুলা, বিট, গাজর, টমেটো, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও পালংশাক জন্ডিস রোগীর জন্য খুব ভালো।

ফল: বেরিস, পেঁপে, তরমুজ, আনারস, পাকা আম, কলা, কমলা, জলপাই, অ্যাভোকাডো, আঙুরের মতো সহজপাচ্য ফল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে।

দুগ্ধজাতীয় খাবার: জন্ডিস হলে ফুল ক্রিম দুধ বা দই, পনির খাওয়া ঠিক নয়। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যা যকৃতের জন্য ক্ষতিকর।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার: লেবু, বাতাবি লেবুর শরবত জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই ভালো। এগুলো শরীরে পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া প্রতিদিন বাদামও পরিমাণমতো খেতে পারেন। সামান্য আদা কুচি বা রসুন কুচি, আদার রস বা আদা-চা খাওয়া যেতে পারে দিনে দু-একবার। এগুলো যকৃতের জন্য ভালো।

পানি: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি (দৈনিক অন্তত আট গ্লাস) পান করতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি পানের প্রয়োজন নেই। পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। আখের রস, ডাবের পানিও শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে। তবে রাস্তার পাশের আখের শরবত না পান করে ঘরে তৈরি শরবত খেতে হবে।

যা খাওয়া যাবে না

চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার, কাঁচা লবণ, অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার, রেড মিট (গরু, মহিষ, ছাগলের মাংস), অ্যালকোহল, ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।


লেখক: পুষ্টি বিশেষজ্ঞ মেডিনোভা মেডিকেল, মালিবাগ

Monday, December 30, 2019

রোগের নাম টিনিটাস: স্টিমারের পাল্লা অথবা ঝিঁঝির বাসা কানে


রেহনুমা বেগমকে নিয়ে বিপাকে তাঁর ছেলে সাইফুল। এর মধ্যে দেশে–বিদেশে তিনি অনেক চিকিৎসক দেখিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু কেউই রেহনুমা বেগমের কানের ভেতর স্টিমার চলার আওয়াজ বন্ধ করতে পারছেন না। রেহনুমা বেগম অনেক চেষ্টা করেন আওয়াজটাকে পাত্তা না দেওয়ার। দিনের বেলা হয়তো কোনোভাবে কাটান। কিন্তু রাতের নির্জনে ঘুমাতে গেলেই তিনি দুই কানের এই আওয়াজের কারণে প্রায়ই নির্ঘুম রাত পার করেন। মনে হয়, যেন কোনো সাগর পাড়ি দেওয়ার পাল্লা দিচ্ছে দুই কানের দুই স্টিমার। আস্তে আস্তে রেহনুমা বেগমের ঘুম কমে যাচ্ছে, বাড়ছে রক্তচাপ। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ডায়াবেটিস।

আদিবার সামনে পরীক্ষা। রাতের ঘুম কমিয়ে পড়তে হচ্ছে। খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম তো আছেই। সঙ্গে হালকা সর্দি লেগে নাকের একপাশ বন্ধ। আস্তে আস্তে সে খেয়াল করল, বন্ধ নাকের দিকের কানটায় কেমন যেন ঝিঁঝি পোকার ডাকের মতো আওয়াজ হয়। এমনিতে পড়ার সময় বা সারা দিন তেমন কিছু মনে হয় না। কিন্তু চারপাশ চুপচাপ করে যখন পড়তে বসে কিংবা ঘুমোতে যায়, তখন এই আওয়াজ আস্তে আস্তে তাকে অতিষ্ঠ করতে থাকে।

নাক-কান-গলার বিভিন্ন রোগের সঙ্গে বা আলাদাভাবে কানে ঝিঁঝি পোকার বা স্টিমারের মতো আওয়াজের এই সমস্যা অনেকেরই হতে পারে। এই বাড়তি যে আওয়াজ, একে বলা হয় টিনিটাস (Tinnitus)। ল্যাটিন যে শব্দ থেকে ইংরেজি শব্দটির উৎপত্তি ‘টিনিয়ার’, তার অর্থ হলো ঘণ্টার শব্দ। অনেকের কানে অনেক রকম শব্দ হতে পারে।

কানের কোনো রোগের কারণে যদি টিনিটাস হয়, তবে সেটা অল্প দিনের মধ্যে রোগী অনুভব করে। তবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থাৎ অনেক বছর ধরে যাদের কানে টিনিটাস আছে, তাদের শুধু কানের সংক্রমণ নয় বরং অন্য নানা রোগ থাকতে পারে।

অনেক সময় কেবল রোগী শুনতে পায় শিস দেওয়ার মতো আওয়াজ, কেটলিতে পানি বাষ্প হওয়ার আওয়াজ, ঘণ্টার মতো আওয়াজ, হিসহিস শব্দ বা রেল ইঞ্জিন চলার আওয়াজ। অনেকে বলেন, টেলিভিশনে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেলে যেমন আওয়াজ হয়, কানে সে রকম আওয়াজ হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষা করার সময় কোনো আওয়াজ শুনতে পান না। একে সাবজেকটিভ টিনিটাস বলে।

আবার কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসক নিজেও রোগীর কানে এ ধরনের আওয়াজ শুনতে পান। কানের ভেতর কিছু টিউমার বা রক্তনালির অতি বৃদ্ধির কারণে এ রকম হতে পারে। অনেক সময় কেবল কানে সামান্য ময়লা বা খৈল জমেও টিনিটাস হতে পারে। সে ক্ষেত্রে খৈল বের করে নিলেই টিনিটাস সেরে যায়।

কানের কিছু রোগ, উচ্চমাত্রার শব্দ, বাজি-পটকার আওয়াজ, হেডফোন ব্যবহারের কারণে যে টিনিটাস হয়, সেটা সাধারণত একটানা হয়ে থাকে। রক্তনালি বা অন্যান্য টিউমারের কারণে হওয়া টিনিটাসে একধরনের স্পন্দন থাকে। ধূমপান বা মদ্যপান, বড় করে হাই তোলা, জোরে শব্দ করে হাঁচি দেওয়া, জোরে নাক ঝাড়া ইত্যাদিতে টিনিটাস বাড়ে। এ ছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ, স্ট্রোকের চিকিৎসার কিছু কিছু ওষুধ, নানা রকম অ্যান্টিবায়োটিক, যক্ষ্মার ওষুধ ইত্যাদির কারণেও টিনিটাস হতে পারে।

মূলত আমাদের যা মনে রাখতে হবে, তা হলো টিনিটাস কোনো রোগ নয়। এটা উপসর্গ মাত্র। একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সময় নিয়ে কবে, কখন, কীভাবে শুরু হয়েছে থেকে শুরু করে, কী কী চিকিৎসা চলছে, দৈনন্দিন জীবনে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, সবকিছু খুলে বলতে হবে। এরপর চিকিৎসক রোগীর শরীরে আর কোনো উপসর্গ আছে কি না দেখবেন। টিনিটাসের কারণ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষাও দিতে পারেন।

টিনিটাস কী কারণে হচ্ছে, তা নিরূপণের পর চিকিৎসা শুরু হবে। অনেক সময় এটা কেবল বিশ্রামেই সেরে যায়। অনেক সময় কিছু আগে থেকে খেয়ে আসা ওষুধ বন্ধ করে দিলেও সেরে যায়। খাওয়াদাওয়া ও স্বভাবগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, যেমন চা-কফি, কোমল পানীয়, অ্যালকোহল, চকলেট ইত্যাদি এবং ধূমপান বন্ধ রাখা ভালো। প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি, জিংক, ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এর প্রতিরোধে। এ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়ার কারণে টিনিটাস হয়ে থাকলে সেটা বন্ধ রাখা, তার পরিবর্তে অন্য ওষুধ বাজারে থেকে থাকলে সেটা খাওয়া, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শমতো টিনিটাস দূর করার ওষুধও খাওয়া প্রয়োজন হতে পারে।

অনেকের কানে হিয়ারিং এইডের মতো টিনিটাস মাস্কার ব্যবহার করতে পারেন। সেটা ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলে ঘুমানোর কক্ষে টিকটিক শব্দ করে চলা দেয়ালঘড়ি অথবা মোবাইলে টিনিটাস মাস্কিং অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনেকের ক্ষেত্রে অন্ত কর্ণে বৈদ্যুতিক প্রবাহ, প্রশান্তিকারী ব্যায়াম, মেডিটেশন, কাউন্সেলিং, আকুপাংচার, সম্মোহন থেরাপি ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। খুব অল্প ক্ষেত্রেই অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে।

বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ, পরীক্ষা–নিরীক্ষা ও উপযুক্ত চিকিৎসা পরিপূর্ণ আরোগ্য ও প্রশান্তিময় জীবন নিশ্চিত করে। তবে যে ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতিতেই আস্থা রাখুন না কেন, মনে রাখবেন, মনের জোরটাই হলো আসল।

লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি-১৮), বিসিএস (স্বাস্থ্য), ডিএলও ট্রেইনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।

ব্রণ হলে কী করবেন, কী করবেন না


ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবাম নামের একধরনের তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসৃত হয়। এই গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয় এবং তা জমে ফুলে ওঠে, যা ব্রণ নামে পরিচিত। প্রায়ই ব্রণের চারপাশে প্রদাহ হয় এবং লাল হয়ে যায়। জীবাণুর সংক্রমণ হলে এতে পুঁজ হয়। সংক্রমণ সেরে গেলেও মুখে দাগ থেকে যেতে পারে।

ব্রণ কেন হয়

সুনির্দিষ্ট কারণ নিশ্চিত না হলেও হজমের সমস্যা, অ্যালকোহল, বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের প্রভাবে ব্রণ হয়। বংশগত কারণও অন্যতম। প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিস নামের একধরনের জীবাণু এর জন্য দায়ী হতে পারে।

ব্রণের প্রকারভেদ

১. ট্রপিক্যাল একনি অতিরিক্ত গরম এবং আর্দ্রতায় পিঠে, ঊরুতে বেশি হয়ে থাকে।

২. প্রিমেন্সট্রুয়াল একনি নারীদের মাসিকের সপ্তাহখানেক আগে ওঠে।

৩. একনি কসমেটিকার কোনো কোনো প্রসাধনী লাগাতার ব্যবহারের কারণে হতে পারে।

৪. মুখ বারবার সাবান দিয়ে ধুলেও (দৈনিক ১ থেকে ২ বারের বেশি) ব্রণের পরিমাণ বেড়ে যায়। একে একনি ডিটারজিনেকস বলে।

৫. স্টেরয়েড একনি স্টেরয়েড ওষুধ সেবন বা ব্যবহারে দেখা দেয়।

ব্রণ হলে কী করবেন

• দিনে দু-তিনবার হালকা সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। বাইরে থেকে এসেই মুখ ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়া হালকা গরম পানির স্টিম নিতে পারেন।

• তেল ছাড়া ওয়াটার বেসড মেকআপ ব্যবহার করুন।

• মাথা খুশকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।

• পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং আলাদা তোয়ালে ব্যবহার করুন।

• রাতে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি খান ও পানি পান করুন।

• কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে। প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

ব্রণ হলে যা করবেন না

• রোদ এড়িয়ে চলুন।

• তেলযুক্ত ক্রিম বা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন না।

• ব্রণে হাত লাগাবেন না, খুঁটবেন না।

• চুলে এমনভাবে তেল দেবেন না, যাতে মুখটাও তেলতেলে হয়ে যায়।

• তেলযুক্ত বা ফাস্টফুড খাবার ও উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।

সহকারী অধ্যাপক (চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Wednesday, November 27, 2019

শীতে পা ফাটার সমস্যা


শীত এলেই অনেকেরই পা ফাটা শুরু হয়। শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে, বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। এ কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। কখনো পা এত বেশি ফেটে যায় যে ব্যথা বা জ্বালা করে, ক্ষত হয়, ফাটা ত্বক দিয়ে রক্তপাত হয়। ফাটা ত্বকে জীবাণুর সংক্রমণও হতে পারে।

কারও কারও ক্ষেত্রে শীতে পা ফাটার সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে। যেমন সোরিয়াসিসের রোগীদের পা ফাটা শীতকালে বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস, বিশেষ করে ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ু–জটিলতায় পায়ে রক্ত চলাচল কমে যায়। নিউরোপ্যাথি বা স্নায়ুরোগেও ত্বক বেশি শুষ্ক হয়। থাইরয়েডের রোগীদেরও এমনটা বেশি হয়।

এসব কোনো কারণ না থাকলে সাধারণ কিছু যত্নেই পা ফাটা রোধ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রধান কাজ হলো পায়ের ত্বক শুষ্ক হতে না দেওয়া। তাই ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। কুসুম গরম পানি ও হালকা সাবান দিয়ে পা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। তারপর তোয়ালের সাহায্যে চাপ দিয়ে শুকিয়ে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগান। প্রয়োজনে দিনে দু–তিনবার এটা করা লাগতে পারে। গোসল করার পর একবার পায়ে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার লাগান। সাদা পেট্রোলিয়াম জেলি, ল্যাকটিক অ্যাসিড, লিকুইড প্যারাফিনযুক্ত ময়েশ্চারাইজার এ ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। পা পরিষ্কার করতে হালকা স্ক্রাবার ব্যবহার করা যায়। এতে মরা ত্বক ও টিস্যু উঠে আসবে। তবে খুব জোরে বা শক্ত কিছু, যেমন পাথর দিয়ে ঘষা যাবে না। এতে ত্বক ক্ষত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

শীতে এ ছাড়া পায়ের আরেকটি সমস্যা বাড়ে। তা হলো কেরাটোডারমা বা পায়ের ত্বক পুরু হয়ে যাওয়া। কেরাটোডারমা হলে চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। এ ছাড়া পায়ে ক্ষত হলে বা রক্তপাত হলে কিংবা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অধ্যাপক মো. আসিফুজ্জামান, বিভাগীয় প্রধান, চর্ম বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ

Wednesday, November 20, 2019

থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার নিয়ম


গ্রন্থির কার্যক্ষমতা কমে গেলে বা হাইপোথাইরয়েডিজম রোগে মুখে খাওয়ার বড়ি লেভোথাইরক্সিনের মাধ্যমে হরমোনের ঘাটতি পূরণ করা হয়। তবে থাইরয়েড হরমোন বা লেভোথাইরক্সিন খাওয়ার কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। অনেক সময় ভুল পদ্ধতির কারণে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায় না।

আপনার করণীয়
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওষুধটি সারা জীবন ধরে খেয়ে যেতে হয়। তাই পরীক্ষায় হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হলেও ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। মাত্রা বেশি কমে বা বেড়ে গেলে ওষুধের ডোজ ঠিক করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

* আমাদের দেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লেভোথাইরক্সিন পাওয়া যায়। যেহেতু সারা জীবন খেতে হবে, তাই একটি ভালো ব্র্যান্ডের ওষুধ বেছে নেওয়া উচিত। হুট করে ওষুধের ব্র্যান্ড পরিবর্তন করা উচিত নয়।

* এ বড়ি ছোট কৌটায় বা পাতায় পাওয়া যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ বা রং নষ্ট হয়ে যাওয়া ওষুধ খাবেন না। ওষুধটি খুবই সংবেদনশীল। তাই সংরক্ষণের জন্য ঘরের ঠান্ডা, অন্ধকার জায়গা বেছে নিন। স্যাঁতসেঁতে জায়গায় ওষুধ রাখবেন না।

* লেভোথাইরক্সিন খালি পেটে সেবন করতে হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ওষুধটি খেয়ে নেওয়া ভালো। ওষুধ খাওয়ার সময় থেকে সকালের নাশতার ব্যবধান অন্তত এক ঘণ্টা হওয়া উচিত। রাতে ওষুধটি খেতে চাইলে খাবারের অন্তত তিন ঘণ্টা পর তা খেতে হবে।

* ওষুধ খাওয়ার আগে হাত শুকিয়ে নিন। সম্ভব হলে হাত দিয়ে স্পর্শ না করেই ওষুধের কৌটা বা পাতা থেকে সরাসরি মুখে দিন।

* এ ওষুধ সেবনরত অবস্থায় আলাদা কোনো খাদ্যতালিকা নেই। ফুলকপি, বাঁধাকপি বা সয়াপ্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারবেন।

* ওষুধ খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে উচ্চ মানের আমিষযুক্ত খাবার, সয়াপ্রোটিন, ফাইবারযুক্ত খাবার, অ্যান্টাসিড খাওয়া উচিত নয়। এতে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়। ওষুধ সেবনের পরবর্তী চার ঘণ্টার মধ্যে ক্যালসিয়াম বা আয়রন সেবন করাও ঠিক নয়।

* গর্ভকালেও ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়। এতে গর্ভবতী মা ও অনাগত সন্তান উভয়েরই ক্ষতি হতে পারে। বরং গর্ভাবস্থায় ওষুধের মাত্রা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। তাই গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ামাত্র চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কোনো কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি হলে প্রতিদিন যে মাত্রায় ওষুধটি খাচ্ছেন, সপ্তাহে দুই দিন তার দ্বিগুণ মাত্রায় ওষুধটি খান।

* কোনো কারণে ওষুধ খেতে ভুলে গেলে মনে পড়ামাত্র খেয়ে নিন। তবে অবশ্যই খালি পেটে (খাওয়ার অন্তত এক-দুই ঘণ্টা আগে বা পরে হতে হবে) খেতে হবে। কোনো দিন ওষুধ খাওয়া না হলে পরদিন একবারে দুই দিনের ডোজ খেয়ে নিতে পারেন।

* ওষুধের মাত্রা ঠিক আছে কি না, জানতে চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্তে হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করুন।

ডা. এ বি এম কামরুল হাসান, ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ

Friday, November 15, 2019

আপনার শিশুটি কানে শুনছে তো?



মাসুম সাহেব আর তিতলীর কোলে যখন অনেক প্রতীক্ষার পর আহাদ এল, তখন সবাই যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। নানাবাড়ি-দাদাবাড়িতে রাজপুত্রের মতো আদর-স্নেহ-ভালোবাসায় বড় হতে লাগল আহাদ। কিন্তু আহাদের স্বভাব কেমন যেন, বড় বেশি চুপচাপ। খাওয়া আর ঘুমানো ছাড়া খুব বেশি কিছুই করে না। অল্প অল্প অস্ফুট কিছু শব্দ করে। আস্তে আস্তে বড় হতে লাগল আহাদ। কথা বলার বয়স পেরিয়ে যেতে লাগল। অনেকে বলল, ও রকম কিছু কিছু বাচ্চা একটু দেরিতে কথা বলতে শেখে, চিন্তার কিছু নেই। অনেকে কানাঘুষা করতে লাগল, বাচ্চা বোবা হয়েছে কি না। কাজের চাপে নাভিশ্বাস উঠে যাওয়া মাসুম সাহেব আর ম্যাটারনিটি লিভ শেষে কাজে ঢুকে জাঁতাকলে পড়া তিতলীর কপালে ভাঁজ পড়তে লাগল। একদিন তাঁরা শিশুটিকে নিয়ে সাহস করে চলে গেলেন ডাক্তারের চেম্বারে। পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা গেল, আহাদের দুই কানেই শ্রবণশক্তি বেশ কম। ডাক্তার জানালেন, আরও আগেই তাঁদের আসা উচিত ছিল। যা-ই হোক, চিকিৎসা শুরু হলো ধাপে ধাপে।

ডাক্তারের কাছে নেওয়ার আগে কীভাবে বুঝতে পারবেন আপনার শিশুর কানে শোনার কোনো সমস্যা আছে কি না? মনোযোগ দিয়ে নিচের তথ্যগুলো শিশুর বয়সের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন।

যা করবেন:
১. জন্মের পরপর খেয়াল করুন, শিশু হঠাৎ কোনো বড় শব্দ শুনে চমকে যায় কি না। শব্দটি হতে পারে হাততালির বা দরজা বন্ধ করার। যদি এ ধরনের শব্দ শুনে বাচ্চা কেঁপে ওঠে বা অন্তত চোখের পলক ফেলে, তাহলে ধরে নিন জন্মের পরপর তার শ্রবণশক্তি ভালো আছে।

২. এক মাস বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে লক্ষ করুন, শিশু লম্বা সময় ধরে হওয়া যেকোনো শব্দের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠছে কি না। শব্দগুলো হতে পারে ফ্যানের আওয়াজ, ভ্যাকুয়াম মেশিনের শব্দ, মোবাইলের একটানা রিংটোন ইত্যাদি। যদি শিশু এ ধরনের শব্দের প্রতি মনোযোগী হয় এবং স্থির হয়ে খেয়াল করতে থাকে, তাহলে বুঝবেন, শিশুর শ্রবণশক্তি স্বাভাবিক আছে।

৩. চার মাস বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে খেয়াল করুন, শিশু আপনার গলার স্বর শুনে কান্না থামায় কি না অথবা শান্ত হচ্ছে কি না। এ বয়সী শিশুরা আপনাকে না দেখে কান্না শুরু করলেও আপনার গলার স্বর শোনার পর শান্ত হবে। আপনার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শব্দ কোন দিক থেকে আসছে, সেদিকে ঘাড় ঘোরানোর চেষ্টা করবে।

৪. সাত মাস বয়সী শিশু আপনার আওয়াজ শোনার সঙ্গে সঙ্গে আপনার দিকে ঘুরে তাকাবে। পাশাপাশি অন্য কিছুতে তার মনোযোগ আকৃষ্ট না হলে শান্ত ঘরে সে যেকোনো সামান্যতম শব্দ শুনলে সেদিকেই মনোযোগী হবে।

৫. নয় মাস বয়সী শিশু পরিচিত দৈনন্দিন শব্দের প্রতি মনোযোগী তো হবেই, নিরিবিলি পরিবেশে যেকোনো সামান্যতম শব্দের উৎস কোথায়, তা খুঁজবে। এ ছাড়া এই বয়সী বাচ্চারা ঠোঁট ফুলিয়ে ‘ভ্রুম ভ্রুম’ করা বা অন্য যেকোনো খেলনার তালে তালে করা শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দিত হবে।

৬. এক বছর বয়সী শিশু নিজের নাম বা অন্যান্য পরিচিত শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে জানান দেবে। এ ছাড়া এ বয়সী বাচ্চা না দেখেও ‘হাই’, ‘হ্যালো’, ‘হ্যাঁ’, ‘না’, ‘টা টা’ ইত্যাদি শব্দ শুনেই উত্তর দেবে।

প্রতিটি শিশুই অপার সম্ভাবনাময়। প্রতিটি শিশুই আমাদের একই রকম আদর-যত্ন-ভালোবাসার দাবিদার। জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠার প্রতিটা ক্ষণেই আমাদের নজরদারি তাদের জীবনকে নিরাপদ করে তুলবে। শিশুর দেখা, শোনা, খাওয়া বা অন্যান্য যেকোনো বিষয় নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ হলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ভালো থাকুন আপনারা সবাই। ভালো থাকুক আপনাদের কোলের মানিক, আপনাদের মাথার মুকুটের রত্নভান্ডার।

লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি-১৮), বিসিএস (স্বাস্থ্য), ডিএলও ট্রেইনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।